পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় খুলনার ডুমুরিয়ার বিল ডাকাতিয়ায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। চলতি বছরের বৃষ্টিতে ডুমুরিয়ার ধামালিয়া, রঘুনাথপুর, রুদাঘরা, রংপুর ও গুটুদিয়া পাঁচটি ইউনিয়নে বিলের কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও মাছের ঘের ভেসে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে সীমাহীন দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন বিল ডাকাতিয়ার মানুষ। শুকনা খাবার, চিড়া-মুড়ি খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের। ডুমুরিয়ার উত্তরাঞ্চল বিল রক্ষা সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক জি এম আমানুল্লাহ জানান, তিন যুগ ধরে কৃষিজীবী মানুষ জলাবদ্ধতায় মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। পানি নিষ্কাশনের সংযুক্ত হরি নদী, হামকুড়া ও ভদ্রা নদী পুরোপুরি ভরাট হয়ে গেছে। শোলমারী নদী দিয়ে কিছু পানি নিষ্কাশন হলেও পলি পড়ে নিষ্কাশন কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
ডুমুরিয়ার রংপুর গ্রামের দীপক সরকার জানান, গ্রামের অনেকের বাড়িতেই কোমর সমান পানি। রান্নাবান্না, খাওয়া দাওয়া অনিশ্চিত। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে গ্রামে যাতায়াত, মালামাল পরিবহন করতে হয়। ফসলি জমি, মাছের ঘের তলিয়ে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ।
অপরদিকে কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে ডুমুরিয়ার বাকি ৯টি ইউনিয়নেও একই বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার মো. আবু বকর সিদ্দিক জানান, টানা বৃষ্টিতে ছোট-বড় মিলিয়ে সাড়ে ১২ হাজার চিংড়ি ঘের ও পুকুর তলিয়ে গেছে। আনুমানিক ক্ষতি ৪৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা। শোলমারী রেগুলেটরের আওতায় ডুমুরিয়ার বিল ডাকাতিয়াসহ ছোট-বড় ২৪টি বিল আছে। যার প্রায় শতভাগ চলতি বছরের ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী মো. হাফিজ ফারুক জানান, বিল ডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পের আওতায় ৯টি বিলেন বিভিন্ন স্থানে ছোট পরিসরে পাম্প বসিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পওর-১)’র নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহমান তাযকিয়া জানান, পানি নিষ্কাশনে ২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে শোলমারী রেগুলেটরের কাছে দুটি সাবমারসিবল এক্সিয়াল ফ্লো পাম্প স্থাপন ও স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এরই মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। জার্মানি থেকে পাম্প আনার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। পরবর্তীতে হামকুড়া নদী ও হরি নদী খনন করতে হবে।