বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে প্রতিবেশী ভারত, নেপাল ও ভুটানের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। বিদেশি পর্যটকদের কেউ কেউ ভারতে ঘুরতে এসে সময় বের করে বাংলাদেশে দুই-এক দিনের জন্য বেড়িয়ে গেলেও শুধু বাংলাদেশ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আসছেন না। এ খাতের বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রথমত বাংলাদেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো আন্তর্জাতিক মানের নয়। আবার বিদেশি পর্যটকদের যে চাহিদা বাংলাদেশের খাত সংশ্লিষ্টরা সেটিকে গুরুত্ব দেন না। আর ২০১৬ সালে হলি আর্টিজান ঘটনার পর বেশ কিছু দেশ বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছিল। অনেক দেশ সেই নির্দেশনা প্রত্যাহার না করায় বিদেশি পর্যটকরা বাংলাদেশে ভ্রমণে আকৃষ্ট হচ্ছেন না। সব মিলিয়ে বলা যায়, বাংলাদেশে এক প্রকার বিদেশি পর্যটকদের খরা চলছে। এই বাস্তবতার মধ্যে প্রতিবছরের মতো আজ বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব পর্যটন দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘পর্যটন শান্তির সোপান’।
এদিকে খাত সংশ্লিষ্টরা বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট করতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের আদলে দেশে বিশেষ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে কোস্টাল ট্যুরিজম, নাইট-লাইফ ট্যুরিজম, ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়নসহ পর্যটন বহুমুখীকরণ, পর্যটনবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, সেবার মান ও নিরাপত্তা জোরদারে তারা গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা আরও জানান, বিদেশি পর্যটক পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে ভিসা জটিলতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ভিসা জটিলতা দূর করার পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। সেই সঙ্গে পর্যটন গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং জোরদার করতে হবে। মূলত বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকা, ভ্রমণ ব্যয় বেশি, পর্যটকবান্ধব পরিবেশ গড়ে না ওঠা এবং পর্যটন ব্র্যান্ডিং না থাকা, ভিসা জটিলতাসহ বেশ কিছু কারণে বাংলাদেশে না এসে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে চলে যাচ্ছেন বিদেশি পর্যটক। বিদেশি পর্যটকদের অভিযোগ সন্ধ্যার পর দেশের পর্যটন স্থানগুলোতে বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। আবার বিদেশি পর্যটকদের জন্য বার, ক্যাসিনো, স্পার মতো সেবা দেওয়ার কথা এই খাতের উদ্যোক্তারা বারবার বলে আসলেও দেশে এগুলোর অনুমোদন পাওয়া বেশ কঠিন। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের (বিটিবি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলো আন্তর্জাতিক মানের না। বিদেশিদের বাংলাদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। অর্থাৎ যেসব দেশের নাগরিকরা বাংলাদেশে অন এরাইভাল ভিসা পান তাদের জন্য যাতে ই-ভিসা পদ্ধতি চালু করা হয়। এ ছাড়াও আমরা আরও দুটি ভিসার কথা বলেছি। অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ইউকে, ইউএসএ, কানাডা এবং সেনজেন ভিসা যাদের আছে তারা যাতে বিনা ভিসায় বাংলাদেশে ঢুকতে পারেন এ প্রস্তাবও আমরা দিয়েছি। বিটিবি-এর তথ্যে, বাংলাদেশে ঘুরতে আসা বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের মধ্যে আছেন ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, যুক্তরাজ্য, জাপান, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নেপাল ও সৌদি আরবের পর্যটক। এই পর্যটকরা বেশি ঘুরতে যান সুন্দরবন, কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিনে। মার্কিন উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির ‘কম্প্রিহেনসিভ প্রাইভেট সেক্টর অ্যাসেসমেন্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিদেশিদের মাত্র ৫ শতাংশ বাংলাদেশে ভ্রমণের উদ্দেশ্য নিয়ে আসেন। ভ্রমণে আসা নাগরিকদের সবচেয়ে বড় অংশ আসে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়িক প্রতিনিধি হিসেবে। যা মোট বিদেশির ৪০ শতাংশ। এরপরই উন্নয়ন খাতের বিভিন্ন কাজে আসে। এদের হার ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া দূতাবাস সংশ্লিষ্ট কাজে আসেন ১৫ শতাংশ বিদেশি। বিদেশিদের মধ্যে বাকি ৫ শতাংশ প্রকৃত পর্যটক। ট্যুর অপারেটন অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মো. রাফিউজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং ভ্রমণ ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বিদেশি পর্যটকরা বাংলাদেশে ভ্রমণের ব্যাপারে আগ্রহী নন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শরিফুল আলম খন্দকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিদেশি পর্যটকদের যে চাহিদা তা বাংলাদেশের খাত সংশ্লিষ্টরা বুঝতে পারছেন না। পর্যটক হিসেবে যে বিদেশিরা বাংলাদেশে আসবেন তারা যেন হয়রানির শিকার না হয় সেটি দেখতে হবে।