দেশের আট বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের মধ্যে দুটিতে (ঢাকা, রংপুর) নেই কমিশনার। গত ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম ও রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার মো. জাকির হোসেনকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করার পর থেকেই খালি আছে বিভাগীয় কার্যালয়ের সর্বোচ্চ এ পদ। এ দুটি বিভাগের কাজ চলছে ভারপ্রাপ্ত কমিশনার দিয়ে। কোনো বিভাগে কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার, স্থানীয় সরকার পরিচালকসহ ছয়জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থাকেন। কোনোটিতে কাজ ও বিভাগের পরিধি অনুযায়ী পাঁচ এবং চার জনও আছেন। অনেক বিভাগেই কর্মকর্তা কম আছেন। ফলে তাদের ওপর কাজের চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ। নিয়মিত কাজের বাইরে এখন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। একই সঙ্গে জনপ্রতিনিধির দায়িত্বও সামলাতে হচ্ছে। সব মিলে জনগণের সেবা নেওয়ার চাপ বিভাগীয় কার্যালয়ে বেড়েছে বহুগুণ।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার রুমে মানুষের বেশ ভিড় দেখা যায়। সেবাপ্রার্থীরা অনেকেই এসেছেন তথ্য জানতে, কেউ নিজ প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য জানাতে। ঢাকার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষসহ ৩০ জনের মতো শিক্ষক নিজেদের সমস্যা তুলে ধরলেন ভারপ্রাপ্ত কমিশনারের কাছে। এ ছাড়া ভূমিহীন মানুষ, ইমামসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দেখা গেল। প্রত্যেকেই তাদের সমস্যা তুলে ধরেন। সেবাপ্রার্থীদের কথা শুনে নানা পরামর্শ দিলেন দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। প্রতিদিনই শত শত মানুষ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে আসছেন নানা সেবার উদ্দেশ্যে। নানা কাজের ভারে ন্যুব্জ বিভাগীয় প্রশাসন। অনেক বিভাগীয় কার্যালয়ে পর্যাপ্ত কর্মকর্তা না থাকায় রয়েছে বিড়ম্বনাও।
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে দেখা যায়, কমিশনার, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক), অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন), অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (এপিএমবি), অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ও পরিচালক (স্থানীয় সরকার)- এ ছয়জনের কাজ সামলাচ্ছেন মাত্র দুজন। বাকি পদগুলো খালি। নাম প্রকশ না করে কার্যালয়ের এক সিনিয়র সহকারী কমিশনার বলেন, ‘আমাদের ওপরের দিকে স্যার কম। ছয়জনের কাজ দুজন স্যার করছেন। এতে কাজের চাপও বেশি। নানা তদবির আছে বিভিন্নজনের।’
প্রতি কর্মদিবসে ৪০০-৫০০ লোকের ভিড় থাকে কমিশনার কার্যালয়ে। কমিশনারকে গাজীপুর সিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে সেখানকার বিষয়ও দেখতে হচ্ছে। ঢাকা মহানগরে ১ হাজার ৩০০, গাজীপুর মহানগরে ২৫০ ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরে ২০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্বে এখন বিভাগীয় কমিশনার। ফলে নিয়মিত কাজের বাইরে বাড়তি চাপ এসব দায়িত্ব, বলেন একাধিক সূত্র। এ ছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো যায়নি সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা প্রায়ই কমিশনার কার্যালয়ে আসছেন বলেও জানা গেছে। এতে স্বাভাবিক কাজে আরও বিঘ্ন হচ্ছে জানান একাধিক কর্মকর্তা। যদিও কাজের চাপ থাকলেও কোনো কাজ পেন্ডিং নেই দাবি করে ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা অতিরিক্ত শ্রম দিচ্ছি, কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। আমাদের অফিসের সবাই মিলে বেশি সময় দিয়ে জনগণের সেবা অব্যাহত রেখেছি।’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সভাপতির পদ কীভাবে সামলাচ্ছেন-জানতে চাইলে বলেন, সিটি করপোরেশন, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, ঢাকা ডিসি অফিসের এডিসিসহ সিনিয়র কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার মতো রংপুরেও নেই কমিশনার। বিভাগ নতুন হওয়ায় অতিরিক্ত কমিশনার ও স্থানীয় সরকার পরিচালকের পদ তিনটি; যা খালি নেই। ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মো. আজমল হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাজের চাপ আছে তবে আমরা কাজ অব্যাহত রেখেছি।’ তিনটি বিভাগ থেকে জানা গেছে, বর্তমানে অনেকেই নিজেদের পছন্দের ইউএনও, এসিল্যন্ড পদায়ন করা নিয়ে প্রতিনিয়ত বিভাগীয় কার্যালয়ে ভিড় করে থাকেন। এতে বিভাগীয় কমিশনাররাও বিব্রত বোধ করছেন অনেক সময়। সিলেট বিভাগে স্থানীয় পরিচালকের পদ ফাঁকা রয়েছে। যদিও সিলেট কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকী দাবি করেছেন, ‘স্থানীয় সরকার পরিচালকের পদ ফাঁকা থাকলেও কাজে অসুবিধা হচ্ছে না, আমরা অফিসার দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছি।’ ময়মনসিংহ বিভাগে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) এবং স্থানীয় সরকার পরিচালকের পদ ফাঁকা রয়েছে। তিনজনের কাজ সামলাচ্ছেন একজন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার। বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে শূন্যপদ নেই। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘বিভাগের কাজের পরিধি বাড়ছে, চাপ বাড়ছে। আমরা জনবল তৈরি নিয়ে কাজ করছি। নিচের দিকে যেন পদোন্নতি হয় সেটি নিয়েও ভাবছি। আমার বিভাগের জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব যেখানে আছে আমরা অধীন কর্মকর্তাদের একটা সময় ঠিক করে দিয়েছি যেন ওই সময়ে জনপ্রতিনিধির সেবাটা পায়।’