১৬ অক্টোবর, ২০১৭ ১৮:৪৭

৩৫ বছর ধরে শুক নদীর তীরে মাছ ধরার উৎসব

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:

৩৫ বছর ধরে শুক নদীর তীরে মাছ ধরার উৎসব

ঠাকুরগাঁও জেলার শুক নদীর তীরে বুড়ির বাঁধ এলাকায় হাজার হাজার মানুষ খইয়া জাল, পলো ও মাছ রাখার পাত্র (খলই) নিয়ে মাছ ধরার ধুমে পড়েছে।

সোমবার ভোরে বুড়ির বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বাঁধের গেট খুল দেয়ায় মাছ ধরতে নামে বেশ কয়েকটি গ্রামের শত শত মানুষ। বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে তাঁদের উৎসাহ দিচ্ছেন তাঁদের বন্ধুবান্ধব ও স্বজনেরা।

বুড়ির বাধ এলাকা ঘুরে দেখা যায় মাছ ধরার জন্য গ্রাম ও শহরের শত শত মানুষ ব্যস্ত। নারী ও শিশুসহ বৃদ্ধরাও রয়েছে এ দলে। সবার হাতে জাল, কারেন্ট জাল, লাফিজাল দিয়ে সাধ্যমত মাছ শিকার করছে। এছাড়াও যাদের মাছ ধরার সরঞ্জাম নাই তারাও দু’হাত দিয়ে মাছ ধরতে নেমে পড়েছে কাঁদার মধ্যে। সব মিলিয়ে এখানে মানুষের এক ধরনের মাছ ধরার উৎসব দেখা গেছে।

মাছ ধরার উৎসব উপলক্ষে বাঁধের ওপরে বসেছে খাবারের হোটেল, ফলের দোকান, খেলনা ও প্রসাধনীর দোকান। এলাকার যুবকেরা বাইরের মানুষের মোটরসাইকেল, সাইকেল রাখার জন্য তৈরি করেছেন অস্থায়ী গ্যারেজ।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৮২ সালের দিকে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমির সেচসুবিধার জন্য সদর উপজেলার আকচা ও চিলারং ইউনিয়নের সীমানায় শুক নদীতে বুড়ির বাঁধ নামের একটি জলকপাট নির্মাণ করা হয়। জলকপাটে আটকে থাকা পানিতে প্রতিবছর মৎস্য অধিদপ্তর বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়ে। আর এ পোনাগুলো যাতে কেউ ধরতে না পারে তা দেখভাল করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ। এরপর শীতের শুরুতে এ মাছ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে বুড়ির বাঁধ এলাকায় মাছ ধরার উৎসব চলে আসছে।

মাছ ধরতে আসা জেলেরা জানান, এ জলকপাট এখন খোলা থাকবে। আরও বেশ কিছুদিন এখানে মাছ পাওয়া যাবে। কিন্তু প্রথম দিনেই বেশি ভিড় হয়।

আকচা গ্রাম থেকে মাছ ধরতে আসা আব্দুর রশীদ বলেন, প্রতিবছর এ দিনটির জন্য অপেক্ষা করি। আমি ভোর থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত ৪/৫ কেজি ছোট-বড় মাছ ধরেছি। আত্মীয় স্বজনকে দেওয়ার পর যা থাকবে তা বাড়ির জন্য রাখা হবে।

মাছ ক্রয় করার জন্য পাইকারি ব্যবসায়ীরাও ভিড় করেছেন এখানে। তাঁরা এলাকার মানুষের কাছ থেকে মাছ কিনে তা বাঁধের ওপর বিক্রি করছেন। যাঁরা মাছ ধরছেন না তাঁরা সেগুলো কিনে নিচ্ছেন। আবার অনেকে শহরের বাজারে মাছ পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

পাইকারী ব্যবসায়ী বিশু রায় বলেন, ভোর থেকে মাছ কিনতে শুরু করেছি। এ পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার মাছ কিনেছেন। আর সেগুলো সরবরাহ করছেন শহরের বাজারে। এ থেকে তাঁর বেশ লাভ হবে বলে তিনি আশা করেছেন।

সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মণ বলেন, প্রতিবছর এখানে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে মেলা বসে। শুধু গ্রাম নয়, শহরের অনেক মানুষ এখানে মাছ ধরার জন্য ভিড় করেন।

বিডিপ্রতিদিন/ ১৬ অক্টোবর, ২০১৭/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর