বরিশাল সদর উপজেলার কর্নকাঠি গ্রামের বাসিন্দা আট বছর বয়সী শিশু কন্যা আমেনা। একটি ব্যাগে করে তার কিছু জামা-প্যান্ট নিয়ে এসেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে। আমেনা জানান, বন্যায় তার বয়সী শিশুদের জামা প্যান্ট নেই। তাদের জন্য কিছু জামা-প্যান্ট দিতে এসেছে সে। তার মতো শিশু-নারী ও পুরুষরা নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী বিভিন্ন মালামাল ত্রান সংগ্রহে নিয়োজিত শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের কাছে তুলে দেয়া হচ্ছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক চত্বরে ত্রান দিতে ঢল নেমেছিল। মানুষ লাইন দিয়ে ত্রান দিচ্ছে। যে যা পারছে তাই দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঘুরে ঘুরে অর্থসহ বিভিন্ন পন্য সংগ্রহ করেছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী রুটের কীর্তনখোলা নদীর উপর নির্মিত আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর ১২ ঘন্টার টোল আদায় করে বন্যার্তদের সহায়তায় ব্যয় করবে।
রবিউল জানান, সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সেতুর টোল শিক্ষার্থীরা আদায় করবে। দুপুর দুইটা পর্যন্ত এক লাখ ৭৬ হাজার টাকা উঠেছে। আমাদের টিম বন্যার্ত এলাকায় রয়েছে। মঙ্গলবার ত্রান নিয়ে রওনা দেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে অবস্থান নিয়ে নগরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ত্রান সংগ্রহের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। শনিবার বিকেলে প্রায় ৬ লক্ষাধিক টাকার খাদ্য উপকরণ নিয়ে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বন্যা কবলিত এলাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, তারা বন্যার্তদের জন্য মুড়ি, চিড়া, গুর, খেজুর, ওরস্যালাইন, মিনারেল ওয়াটার ২ লিটার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ২টা, ফিটকারী, বিস্কুট, ঔষধ, পাউডার দুধ সহ শিশুখাদ্য প্যাকেটজাত করে সরবরাহ করা হবে।
নগরের সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে ট্রাকে ট্রাকে করে এসেছে ত্রাণ সহায়তা। কলেজের কলা ভবন ও অশ্বিনী কুমার ছাত্রাবাসে পোষাকের পাহাড় তৈরী হয়েছে। সেগুলো সাইজ অনুযায়ী বেছে বেছে রাখছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি কলেজের জিরো পয়েন্টে নানা ধরণের খাদ্য সামগ্রী দিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাহাবুদ্দিন মিঞা বলেন, আমরা রোববার বিকালে রওনা দেবো কুমিল্লা ও ফেনীর উদ্দেশ্যে। দুইটি টিম করা হয়েছে। এক গ্রুপ ত্রান সংগ্রহ করছে, অপর গ্রুপ ত্রান বিতরণ করছে। খাদ্য সামগ্রীর পাশাপাশি নারী ও শিশুদের জন্য স্যানিটারি প্যাড, ব্রাশ ও টুথপেস্ট, ওষুধ, স্যাভলন, নানা পদের ঔষধ, স্যালাইন, সাবান সহ নানা কিছু সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাছাড়া বন্যার্তদের জন্য কাপড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শংকর মঠ পুজা উদযাপন কমিটি আরো টাকা তুলছেন। সেই টাকা খাগড়াছড়িতে পাঠানোরর পরিকল্পনা করেছেন বলে জানিয়েছে মঠের কমিটির সভাপতি লিমন কৃষ্ণ সাহা কানু।
বরিশাল মহানগর পূজা উদযাপন কমিটিও নগরের বিভিন্ন মন্ডপ থেকে সহায়তা সংগ্রহ করে বন্যার্তদের জন্য পাঠানোর সিদ্বান্ত নিয়েছেন সভাপতি ভানু লাল দে ও সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র সাহা নিশ্চিত করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/এএম