নূর ফুটপাত ধরে হাঁটছে। হঠাৎ কিছু জিনিসের প্রয়োজন পড়েছে। তাই কিনতে বের হয়েছে। রাত দশটা বাজে। এখনো মানুষের আনাগোনা চলছে। নূর রাস্তা পার হতে যাবে। ওমনি একটা বড় গাড়ি পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আরেকটু হলেই নূর অ্যাক্সিডেন্টের কবলে পড়ত। হঠাৎ একদল কালো পোশাক পরা কারা যেন সামনে এসে দাঁড়াল! তাদের মুখ দেখা যাচ্ছে না। শুধু বড় বড় চোখ দুটো বের হয়ে আছে। নূর ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেল। কালো পোশাক পরা দলটি হাসতে শুরু করল। হিহিহি, হাহাহা। তাদের হাসিতে যেন চারপাশ কেঁপে উঠল।
এমন ভয়ানক হাসি নূর কখনোই শোনেনি। দৌড়ে পালাবে সেই উপায়ও নেই।
কালো পোশাক পরা দলটি বলল-
আমাদের দেখে ভয় পেয়ো না
আমাদের রেখে কোথাও যেও না।
নূর চমকে উঠল! এ কেমন অদ্ভুত কথার ধরন! দলটি নাকি সুরে কথা বলছে। কী বিস্ময়কর! কালো পোশাক পরা দলটি নূরের অবস্থা দেখে আবারও হাসতে শুরু করল। নূরের সমস্ত শরীর শীতল হয়ে গেল। শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেল। কালো পোশাক পরা দলটি বলল-
আমরা কিছু বলতে এসেছি,
তোমার কথা শুনতে এসেছি।
নূর ভয় পাওয়া গলায় বলল, কী কথা? কালো পোশাক পরা দলটি বলল-
গাছ কাটা যাবে না,
ভূতকে ভয় পাওয়া যাবে না।
নূর কী বলবে? কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। চারদিকে তাকাল। ঘুটঘুটে অন্ধকার। কালো পোশাক পরা এ দলটি ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ওরা আসার আগেও চারদিকে আলো জ্বলছিল। মানুষ আসা-যাওয়া করছিল। গাড়ি আসা-যাওয়া করছিল। নূর বুঝতে পারল আজ রক্ষা নেই। ওদের কথা শোনা ছাড়া উপায় নেই।
কালো পোশাক পরা দলটি নূরের অবস্থা দেখে হাসতে শুরু করল। কিছুক্ষণ পর দলটি হাসি থামিয়ে করুণ সুরে বলল, তোমরা গাছ কেটে বাড়ি বানাও। আরও অনেক কিছুই বানাও; কিন্তু গাছ লাগাও না। আমাদের কথা ভাব না। গাছ না থাকলে আমরা কোথায় বসবাস করব? আমাদেরও বসবাস করার জন্য গাছের প্রয়োজন।
ভূতের দাবি মানতে হবে,
ভূতের কথা ভাবতে হবে।
নূর ভয়ে ভয়ে বলল, যদি তোমাদের দাবি না মেনে নেই? কালো পোশাক পরা দলটি আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে হাসতে হাসতে বলল-
তোমাদের বাড়িতে করব বাস,
ভয় করবে হাঁসফাঁস।
নূর মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেল।
নূর যখন চোখ মেলে তাকাল- দেখল বাবা-মা তার মাথার কাছে বসে আছেন। নূর ধীরে ধীরে শোয়া থেকে উঠে বসল। ধীরে ধীরে সব কথা মনে পড়ল। বাবা রাগী স্বরে বললেন, তুমি এত রাতে বাইরে গিয়েছিলে কেন? কী এমন প্রয়োজন ছিল? আমাকে বললেই হতো। মা বললেন, যদি তোমার বাবা তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে ওখানে না যেত-তাহলে কী হতো বলতে পার? নূর চুপ করে থাকল। অনেকক্ষণ পর বলল, বাবা, আমার চকলেট খেতে ইচ্ছা করছিল। তাই চকলেট কিনতে বাইরে গিয়েছিলাম। তোমরা তো আমাকে চকলেট খেতে দাও না। বাবা-মা নূরের দিকে অবাক চোখে তাকালেন! নূরের সমস্ত শরীর ঘামছে।
বাবা শান্ত হয়ে বললেন, তারপর তোমার সঙ্গে কী ঘটেছিল? সেটা বল। নূর ভয়ে ভয়ে বলল, যা ঘটেছিল তা শুনলে হয়তো তোমাদের বিশ্বাস হবে না। মা বললেন, তবুও শুনতে চাই। নূর চারদিকে তাকাল। কোনো ভূত আছে কিনা দেখার চেষ্টা করল। না কেউ নেই। বাবা বললেন, এখনো চুপ করে আছ কেন? নূর সব কথা বলতে শুরু করল। একদল ভূত এসেছিল। ওদের কিছু দাবি আছে। ওরা গাছ লাগাতে বলেছে। ওরা বলেছে, গাছ না থাকলে ওরা কোথায় বসবাস করবে? যদি গাছ না লাগাই-ওরা আমাদের বাড়িতেই বসবাস করবে। বাবা-মা নূরের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। নূরের কথাগুলো বিশ্বাস হচ্ছিল না। কিন্তু নূরের অবস্থা দেখে বাবা-মা বিশ্বাস করতে বাধ্য হলেন। সত্যি যদি গাছ না থাকে মানুষ বিশুদ্ধ অক্সিজেন কোথায় পাবে? পরিবেশের ভারসাম্য কী করে রক্ষা হবে? গাছ ভূতের যেমন প্রয়োজন, মানুষেরও তো প্রয়োজন।
বিকালবেলা নূর বাসা থেকে বের হলো। অমনি অবাক হয়ে গেল! বাসার খালি জায়গাটায় গাছ লাগানো হয়েছে। নূর অনেক খুশি হলো। নূর গাছগুলোর দিকে এগিয়ে গেল। গাছের পাতাগুলোয় হাত ছুঁয়ে দিল। কয়েকটি ফুল গাছ লাগানো হয়েছে। ফুল থেকে মিষ্টি ঘ্রাণ আসছে। হঠাৎ একটি বড় গাছের দিকে নূরের চোখ আটকে গেল। গাছের ডালে একটি চকলেটের প্যাকেট দোল খাচ্ছে। নূর ভয়ে ভয়ে চকলেটের প্যাকেট গাছের ডাল থেকে নামিয়ে নিল। খুব সুন্দর একটা প্যাকেট! নূর চকলেটের প্যাকেট উল্টেপাল্টে দেখল। হঠাৎ একটি লেখা দেখে নূর ভীষণভাবে চমকে উঠল!
প্যাকেটের এক কোণে লেখা:- ‘ভূতের উপহার’।