শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সুস্থ থাকার আমল শিখিয়েছেন নবীজি

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

সুস্থ থাকার আমল শিখিয়েছেন নবীজি

সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন আমাদের এই দুনিয়ার জীবনে এনে দেয় জান্নাতি সুখ। তাই আমাদের উচিত দেহমনে সুস্থ থাকার চেষ্টা করা। সুস্থ থাকার জন্য অনেক চেষ্টা-তদবিরই আমরা করি। অনেক ছোটাছুটির পরও সুস্থতা নামক সেই সোনার হরিণটি অধরাই থেকে যায় আমাদের কাছে। তবে যারা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চলেন, সুস্থতা তাদের কাছে ধরা দেয়। সুখ তাদের জীবনের সঙ্গী হয়। সব বিশেষজ্ঞের সেরা বিশেষজ্ঞ হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়েছেন কীভাবে সুস্থ থাকতে হয়। তাঁর শেখানো সূত্র গবেষণা করে বিশ্বের ডাক্তার-বিজ্ঞানীরা মানুষকে সুস্থ জীবনচর্চার পরামর্শ দিচ্ছেন। পৃথিবীর সব বিশেষজ্ঞ একমত হয়েছেন, পরিমিত খাবার গ্রহণই সুস্থ থাকার চাবিকাঠি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন পর্যালোচনা করলেও দেখা যায়, তিনি নিজে পরিমিত খাবার খেতেন। উম্মতকেও প্রয়োজনের বেশি খাবার গ্রহণে নিষেধ করতেন। মাওলানা আশরাফ আলী থানভি (রহ.) বলেন, ‘একবার একজন চিকিৎসক রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবিদের খেদমতে হাজির হন। দীর্ঘদিন তিনি মদিনায় অবস্থান করেন, কিন্তু তার কাছে কোনো রোগী আসেনি। চিকিৎসক বড় অবাক হয়ে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর নবী! আমি বিদেশ থেকে এসেছি আপনাদের চিকিৎসা করতে। কিন্তু দীর্ঘদিন হয়ে গেল, একজন রোগীও আমি পাইনি। এর কারণ কী? তিনি বললেন, হে চিকিৎসক! আমি এবং আমার সাহাবিরা অল্প খাবার খাই। প্রয়োজন না হলে খাই না। তাই আমাদের তেমন একটা রোগব্যাধি হয় না।’ গবেষণায় দেখা গেছে, আজ থেকে প্রায় ১ হাজার ৪০০ বছর আগে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলে গেছেন, যে খাবারনীতি তিনি আমাদের শিখিয়েছেন সেটাই হলো সর্বোৎকৃষ্ট ডায়েট। তিনি ছিলেন সবচেয়ে বড় ডায়াটেশিয়ান। ডাক্তার যে খাদ্য তালিকা দিচ্ছে আমাদের, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা বলে গেছেন অনেক আগেই। তাঁর গোটা লাইফস্টাইল শিক্ষণীয়। মুসলমানের পক্ষে তাঁকে অনুসরণ ছাড়া সফলতা পাওয়া অসম্ভব। সুস্থতার জন্য তাঁর খাদ্য তালিকা অনুসরণ করতে হবে। কেবল ইমান, আমল নয়; রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব ক্ষেত্রে আমাদের আদর্শ হওয়া উচিত। তাঁর খাবার খাওয়ার নিয়মনীতি আমাদের অনুসরণ করা উচিত। খাবার গ্রহণে তাঁর নিয়ম হলো- পেটের এক ভাগ খাবার খাবে, এক ভাগ পানি পান করবে, এক ভাগ খালি থাকবে। আমরা সত্যিই কি এ সুন্নত পালন করি? ডাক্তাররা কম খেতে বলেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা অনেক আগেই বলে গেছেন। নিজে কম খেতেন। খাবার নেই। পেটে পাথর বেঁধে থেকেছেন। মেহমানদারি করেছেন। আর আমাদের পেট না ভরলে টেবিল থেকেই উঠি না। পেঠ ভরে খাওয়া রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পছন্দনীয় ছিল না। বার্লি, খেজুর, ডুমুর, আঙ্গুর, মধু, তরমুজ, দুধ, মাশরুম, অলিভ অয়েল, ডালিম বা বেদানা, লাউ, কিশমিশ, জলপাই, সামুদ্রিক মাছ, ভিনেগার ও পানি। এ খাবারগুলো তাঁর প্রিয় ছিল। তিনি এসব খাবার আগ্রহভরে খেতেন। পছন্দনীয় বলে পেট ভরে খেতেন না। আমরা উল্টোটা করি। পছন্দের খাবার গলা অবধি খাই! রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবারে দোষ ধরতেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কোনো খাবারে দোষ ধরেননি, আর কখনো কোনো খাবারকে খারাপও বলেননি। তাঁর ইচ্ছা হলে তিনি খেতেন, ইচ্ছা না হলে রেখে দিতেন।’ বুখারি। আজকের বিজ্ঞান বলে, কোনো খাবার যদি আপনার পছন্দ না হয়, আর তা যদি আপনি খান, তাহলে ওই খাবার যত পুষ্টিকরই হোক, তা আপনার দেহে বিষ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তাই কোনো খাবার পছন্দ না হলে খাবেন না। কিন্তু ওই খাবারকে খারাপ বলা থেকে বিরত থাকুন। রাতের খাবার আগেভাগে সেরে নিতে বলেন ডাক্তাররা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার নামাজের পরপরই খাবার খেয়ে শুয়ে পড়তেন। শোয়ার আগে কিছুক্ষণ হাঁটতেন। গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে দ্রুত শুয়ে পড়লে সব ধরনের ক্যান্সার থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়। আর রাতে খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ হাঁটলে মেদ-স্থূলতা, বাতসহ অনেক জটিল রোগ থেকে সহজে আরোগ্য পাওয়া যায়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ-অনুকরণ করে সুন্দর-সুখী মানুষ হওয়ার তাওফিক দিন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি।

www.selimazadi.com 

সর্বশেষ খবর