অহংকার হচ্ছে সব পাপের উৎস। জগতের প্রথম পাপই হচ্ছে অহংকার। সৃষ্টিজগতের প্রথম মানব আদম (আ.)-কে সৃষ্টির পর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সব ফেরেশতাকে আদেশ করেছিলেন, “তোমরা আদমকে সেজদা কর। অতঃপর তারা (আল্লাহর আদেশে) সেজদা করল, শুধু ইবলিস ছাড়া। সে সেজদা করতে অস্বীকার করল, সে অহংকার করল এবং সে না-ফরমানদের দলে শামিল হয়ে গেল।” (সুরা বাকারা, আয়াত ৩৪)। এই হলো অহংকারের প্রথম ইতিহাস। যা আল্লাহ কোরআনে তাঁর বান্দাদের জানিয়ে দিয়েছেন। এ অহংকারের দরুন শয়তান অভিশপ্ত হলো এবং তাকে জান্নাত থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। রসুল (সা.) বলেছেন, “তিনটি বস্তু মানুষের ধ্বংসের কারণ। প্রবৃত্তি বা নফসের পূজা, লোভ, আত্ম অহংকার। তিনি আরও বলেন, অহংকারই হলো সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতিকারক।” পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, “পৃথিবীতে তুমি দম্ভভরে পদচারণ কর না, নিশ্চয়ই তুমি ভূপৃষ্ঠকে কখনোই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি পর্বত সমান হতে পারবে না।” (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৩৭)। সুতরাং আত্মগৌরব বা অহংকার একমাত্র আল্লাহকেই মানায়, কারণ তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা। এ আকাশ জমিন আলো বাতাস সবকিছুই তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন। যে ব্যক্তি তাঁর এই গুণকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করে আল্লাহ তাঁকে ধ্বংস করে দেন। তার প্রভাব প্রতিপত্তি নস্যাৎ করে দেন। তাকে লাঞ্চনা দেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ বলেন, “অহংকার আমার সম্মানের উত্তরীয় আর সম্মান হচ্ছে আমার গৌরবের পোশাক। যে ব্যক্তি এ দুটির কোনো একটি নিয়ে টানাটানি করবে, আমি তাকে কঠিন শাস্তি দান করব।” (আবু দাউদ, ৪০৯০)। অহংকারীদের শাস্তি জাহান্নাম। আল্লাহ বলেন, “ওদের তখন বলা হবে, যাও প্রবেশ কর জাহান্নামের দরজাগুলো দিয়ে, তোমরা সেখানে চিরদিনই থাকবে। অহংকারীদের জন্য কত নিকৃষ্ট হবে এ ঠিকানা।” (সুরা ঝুমার, আয়াত ৭২)। সুতরাং আজ জাহান্নামের দরজাগুলো দিয়ে তোমরা আগুনে প্রবেশ কর, সেখানে তোমরা চিরদিন থাকবে, অহংকারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট।” (সুরা আন নাহল, আয়াত ২৯)। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যার অন্তরে সামান্য পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (মুসলিম শরিফ, ১৬৭)। কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা অহংকারী ও দাম্ভিকের সঙ্গে কথা বলবেন না, তার দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না, তাকে গুনাহ থেকেও পবিত্র করবেন না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, “তিন ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহতায়ালা কথা বলবেন না, তাদের গুনাহ থেকেও পবিত্র করবেন না, তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতেও তাকাবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। তারা হচ্ছে বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক ও দাম্ভিক ফকির।” (মুসলিম শরিফ, ১০৭)। সুরা লোকমানে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, “হে বৎস, কখনো অহংকারবশে তুমি মানুষদের জন্য তোমার গাল ফুলিয়ে রেখে তাদের অবজ্ঞা কর না এবং আল্লাহর জমিনে কখনো ঔদ্ধত্যপূর্ণ বিচরণ কর না, অবশ্যই আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক ঔদ্ধত্যকারী অহংকারীকে অপছন্দ করেন।” (আয়াত ১৮)। অহংকারের কারণ হলো জ্ঞানের অভাব, পারিবারিক শিক্ষার অভাব, পদ ও ক্ষমতার অপব্যবহার, হিংসার মানসিকতা, সম্পদের আধিক্য, আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা। মন থেকে অহংকার দূর করার জন্য আমাদের নিয়মিত নিজের সৃষ্টির কথা চিন্তা করতে হবে। মৃত্যুকে স্মরণ করতে হবে। এক দিন আমরা পৃথিবীর সবকিছু ছেড়ে পরপারে চলে যাব। সম্পদ, সন্তান, বন্ধু, আত্মীয় কেউ সঙ্গে যাবে না।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার