হজরত থানভি (রহ.) তাঁর লিখিত ‘শরিয়ত ও তরিকত’ কিতাবে লিখেছেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্তরে মহব্বত সৃষ্টি করার পাঁচটি আমল রয়েছে (১) জিকরে দায়েম, অর্থাৎ সর্বদা আল্লাহর জিকির করা-সামান্য হলেও। (২) শুকরে নেয়ামত। অর্থাৎ আল্লাহপাক যে আমাদের হাত, পা, শরীর, আলো, বাতাস, মাটি, পানিসহ অসংখ্য নেয়ামত দান করেছেন এর শুকরিয়া করা। (৩) নেক কাজ করার সময় সহিহ নিয়ত তথা এখলাসের সঙ্গে করা। হাদিস শরিফে এসেছে, বান্দা যখন নেক কাজে সহিহ নিয়ত করবে তখন আল্লাহপাক তার প্রতিটি নিয়তের বদলায় নেকি দান করবেন। (৪) নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী গুনাহ বর্জন করা। তবে শক্তির বাইরের বিষয়ে ভিন্ন কথা। যেমন- কোনো ব্যক্তি যদি কারও বুকের মাঝে পিস্তল লাগিয়ে বলে যে, তুই বল- ‘আল্লাহ নেই, আল্লাহকে মানি না’ তাহলে এমতাবস্থায় সে নিরুপায়। এ জন্য সে আল্লাহর শাস্তির উপযুক্ত হবে না। যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও গুনাহ বর্জন করবে না, সে অবশ্যই আল্লাহর হাতে গ্রেপ্তার হবে। (৫) সুহবতে আউলিয়া, অর্থাৎ যারা আল্লাহকে মহব্বত করে তাদের সান্নিধ্যে থাকা। তাদের মহব্বত করা। যে আল্লাহর ওলিকে মহব্বত করবেন আল্লাহও তাকে মহব্বত করবেন। হজরত থানভি (রহ.)-এর পাঁচটির সঙ্গে আমিও একটি অতিরিক্ত করে দিলাম। তা হলো- আল্লাহর কাছে চাওয়া, ক্রন্দন করা। তাঁর কাছে হাত তুলে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের মহব্বতের প্রার্থনা করা। যে ব্যক্তি এই নেয়ামতের অধিকারী হতে পারবে, তার জন্য সব কাজ আসান তথা সহজ হয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে পাকের এক আয়াতে আল্লাহপাক বলেছেন, ‘আমার কাছে প্রার্থনা কর, আমি কবুল করব। অর্থাৎ আমার কাছে চাও, আমি দেব। এখানে আল্লাহ এ কথা বলছেন যে, দেখ, তোমাদের তো অনেক ঘটনা শোনালাম, অনেক আমলের কথা বললাম, যে আমলের দ্বারা দুনিয়া ও আখেরাতের কামিয়াবি হবে। জাহেরি আমলগুলোর মাধ্যমে কামিয়াবি পাওয়া যাবে কিন্তু যদি সঙ্গে সঙ্গে আমার কাছে প্রার্থনা জারি রাখ, তাহলে কামিয়াবি পূর্ণাঙ্গ ও দ্রুত হবে। এখানে একটি মদ আছে, মদ মানে লম্বা করে বলা, যাতে মানুষ শুনতে পারে। এ জন্য আল্লাহপাক লম্বা ডাকে আহ্বান করেছেন। এক হাদিসে এসেছে, বান্দা যদি আল্লাহর কাছে না চায় তাহলে আল্লাহ তাকে বঞ্চিত করে দেন। পিতার কাছে সন্তান কোনো কিছু চাইলে পিতার যেমন শান্তি লাগে, ঠিক তেমনি বান্দা যখন আল্লাহর কাছে চায় তখন আল্লাহরও শান্তি লাগে। তবে চাওয়ার পদ্ধতি ও নিয়ম আছে। সব সময় চাইলে হবে না। দোয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেক কিতাব আছে। আল্লাহ বলেছেন, বান্দা যদি পরিপূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে আমার কাছে দোয়া করে, তাহলে আমি অবশ্যই তার দোয়া কবুল করব। এখন যদি কেউ বলে, কই, আমি যে এ বছর এমপি হওয়ার দোয়া করলাম, হতে তো পারলাম না। অথচ আল্লাহ তো বললেন যে, আমার কাছে প্রার্থনা কর, কবুল করব। এর উত্তর হলো, পূর্বোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিররা লিখেছেন, আল্লাহপাকের দোয়া কবুল করার পদ্ধতি তিনটি। অর্থাৎ তিনি তিনভাবে মানুষের দোয়া কবুল করেন। (১) প্রার্থনাকারী যা চায় তা হুবহু দেওয়া হয়। যদি তাতে ওই ব্যক্তির কোনো ক্ষতি না থাকে, তবে আল্লাহপাক কখনো দোয়ার সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে থাকেন, আবার প্রার্থনাকারীর কোনো মঙ্গল বিবেচনায় পরবর্তীতেও দিয়ে থাকেন। (২) যা প্রার্থনা করা হয় তা হুবহু দেওয়া হয় না। কারণ কখনো কখনো এমন হয়, বান্দা যে জিনিস চায় তা সে নিজের জন্য মঙ্গলজনক মনে করলেও আল্লাহ তা মঙ্গলজনক মনে করেন না বিধায় ওই জিনিস দেন না। তবে তার দোয়ার কারণে তাকে অন্য এক উপকারী জিনিস দান করেন। যেমন- কোনো ব্যক্তি প্রার্থনা করল যে, আল্লাহ আমাকে হাফেজ বানিয়ে দিন, কিন্তু আল্লাহ তার দোয়া কবুল করলেন না। কারণ আল্লাহ জানেন, তাকে হাফেজ বানালে রমজান মাসে তারাবি পড়িয়ে টাকা নেবে। মানুষের বাসাবাড়িতে ঘুরে ঘুরে খতম পড়ে বিনিময় নেবে। যা তার জন্য ক্ষতির কারণ হবে বিধায় দোয়া করা সত্ত্বেও আল্লাহ তাকে হাফেজ বানাননি। তবে তার পরিবর্তে আল্লাহ তাকে আলেম বানিয়ে দিলেন। (৩) দুনিয়ার জীবনে সমীচীন নয় এমন জিনিস প্রার্থনা করলে তা দেওয়া হয় না, তবে কোনো প্রার্থনাকারীই যেহেতু বঞ্চিত হয় না, তাই আল্লাহ তার প্রার্থনা বা দোয়ার কারণে আখেরাতে তার জন্য একটি বিনিময় নির্ধারিত করেন। এক হাদিসে এসেছে, আখেরাতের জীবনে বান্দা যখন দেখবে, তার জন্য হাজারো নেয়ামত প্রস্তুত, তখন সে ভাববে, যদি দুনিয়ার জীবনে একটি দোয়াও কবুল না হতো তাহলে কতই না ভালো হতো। দোয়ার জন্য হাত ওঠানো শর্ত নয়। হাত ওঠানো ছাড়াও দোয়া করা যায়। একা একাও দোয়া করা যায়। সম্মিলিতভাবেও দোয়া করা যায়।
♦ লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ