তিন যুগ আগে খ্যাতনামা ঐতিহাসিক অধ্যাপক কে. আলীর সঙ্গে ইতিহাসের একটি বিতর্কিত বিষয় নিয়ে আলাপ করার সুযোগ হয়। শ্রদ্ধেয় স্যারকে বলেছিলাম কোনো কোনো ঐতিহাসিকের লেখা ইতিহাসে হিন্দুদের ভীরু ও কাপুরুষ হিসেবে দেখানোর যে প্রবণতা রয়েছে তা সত্যের অপলাপ। এটি সংশ্লিষ্ট ঐতিহাসিকদের সংকীর্ণতা ও অনুদারতার প্রতিফলন। অধ্যাপক কে. আলী আমার বক্তব্য শুনে থমকে গিয়েছিলেন। এমন তীর্যক মন্তব্য হয়তো তিনি আশা করেননি। তবে মুহূর্তের জন্যই। কিছুক্ষণ পরেই আমাকে বললেন, হিন্দুদের ভীরুতা ও কাপুরুষতা নিয়ে যে সমালোচনা রয়েছে সে সম্পর্কে তোমার ভিন্নমতের কারণ কী? কেন তুমি ঐতিহাসিকদের এ বক্তব্যকে অনুদার বলে অভিহিত করছ?
অধ্যাপক কে. আলী স্যারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য উল্লেখ করলাম, আরবদের সিন্ধু বিজয়ের কথা। সবাই জানে মুহাম্মদ বিন কাশিমের নেতৃত্বে আরবরা সিন্ধু জয় করেন। ভারতবর্ষে মুসলিম আধিপত্যের সূচনা করেন এই তরুণ বীর। সিন্ধু ছিল আর্থিক দিক থেকে সে সময়কার ভারতবর্ষের অন্যতম দুর্বল রাজ্য। এ রাজ্যের রাজা ছিলেন দাহির। স্বেচ্ছাচারী হিসেবে যার দুর্নাম ছিল। তবে তিনি ছিলেন সাহসী ও স্বাধীনচেতা। দামেস্কর উমাইয়া খলিফা বারবার সিন্ধু অভিযানে সৈন্য পাঠিয়ে ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত সফল হন মুহাম্মদ বিন কাশিম।
উমাইয়া শাসন ইসলামের ইতিহাসে বিতর্কিত অধ্যায়। তবে তাদের সিন্ধু বিজয় নানা কারণে স্মরণীয়। এ বিজয়ের মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশে শত শত বছরের মুসলিম শাসনের সূচনা হয়। রাজা দাহির মুহাম্মদ বিন কাশিমের হাতে পরাজিত হওয়ার পর সপরিবারে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, ভীরু বা দুর্বলচিত্তের কোনো মানুষ দাসত্বের চেয়ে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুবরণের কথা ভাবতে পারে কি না? এ প্রশ্নের জবাব- অসীম সাহসীরাই কেবল আত্মসমর্পণের বদলে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারে। শত্রুর হাতে আত্মসমর্পণের চেয়ে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুবরণের ঘটনা রাজা দাহিরের ক্ষেত্রেই শুধু ঘটেনি। অনেক রাজপুত রাজা বিদেশিদের হাতে আত্মসমর্পণের বদলে এভাবেই মৃত্যুকে বেছে নিয়েছেন। স্যারকে বলেছিলাম, হিন্দুদের জাতিগতভাবে ভীরু ও কাপুরুষ ভাবার মধ্যে রয়েছে আরও বড় ভ্রান্তি। কারণ বিশ্বে সবচেয়ে সাহসী হিসেবে গুর্খা সৈন্যদেরই ভাবা হয়। তারা কিন্তু ধর্মগতভাবে হিন্দু। রাজপুত, মারাঠা বীরদের শ্রেষ্ঠত্ব মুসলিম শাসনামলেও স্বীকৃত হয়েছে।
অধ্যাপক কে. আলী বললেন, মুসলমান বা বহিরাগতদের কাছে হিন্দু শাসকদের পরাজয়ের জন্য কোন কারণকে তুমি দায়ী কর? তাকে বললাম, এ বিষয়ে সবচেয়ে নিখুঁত কারণ দেখিয়েছেন সমাজবিজ্ঞানী কার্ল মার্কস। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা এই মনীষী কখনো ভারতে আসেননি। কিন্তু তার লেখা ভারতীয় ইতিহাসের কালপঞ্জি নামের বইটি ভারতীয় সমাজ, ধর্ম ও রাজনীতি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনার দাবি রাখে। কার্ল মার্কস তার ওই বইতে বলেছেন, ভারতবর্ষ কখনো ভারতীয়দের দ্বারা ঐক্যবদ্ধ হয়নি। বলেছেন, যখনই কোনো বিদেশি শক্তি ভারতবর্ষ আক্রমণ করেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভারতীয়রা পরাজিত হয়েছে। তিনি এ জন্য ভারতীয়দের দেশপ্রেম ও শক্তি-সামর্থ্যকে দায়ী না করে দায়ী করেছেন হিন্দুত্বকে। বলেছেন, জাতিভেদ প্রথার কারণেই ভারতীয়রা কখনো বিদেশি আক্রমণের বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে পারেনি। তিনি হিন্দুত্বকে একই সঙ্গে ‘ভোগবাদ ও আত্মনিগ্রহের ধর্ম’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
তথাকথিত হিন্দুত্ববাদী চেতনা নিন্দিত হলেও তার সঙ্গে সনাতন কিংবা প্রচলিত অর্থে হিন্দু ধর্মকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। হিন্দু ধর্ম হলো বিশ্বের উদারতম ধর্মগুলোর একটি। হিন্দুত্ববাদ বা ব্রাহ্মণ্যবাদ সে ধর্মের অন্তরের কথা নয়। বেদ-বেদান্ত পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সেই অতীত যুগে হিন্দুধর্ম বহুমতকে প্রশ্রয় দিয়েছে। হিন্দুধর্মে থেকেও যেমন নিরশ্বরবাদী চেতনাকে লালন করা যায়, তেমন একেশ্বরবাদকে কেউ পরম সত্য হিসেবে বিবেচনা করলেও তাকে অগ্রাহ্য করা হয়নি। বহু ঈশ্বর বা দেব-দেবীর মূর্তি পূজাকেও আত্মস্থ করেছে হিন্দুধর্ম। হিন্দু ধর্মের বহুপথ ও বহুমতের সহাবস্থান এবং মানবতাবাদী চরিত্রের ব্যত্যয় ঘটিয়ে পরবর্তীতে হিন্দুত্ববাদ বা ব্রাহ্মণ্যবাদের উত্থান ঘটে। এই ব্রাহ্মণ্যবাদ ভারতীয়দের ঐক্য ও অগ্রগতির পথে বরাবরই বাধা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ব্রাহ্মণ্যবাদ হিন্দু সমাজকে এমনভাবে জিম্মি করেছে যে ভারতের গত ৫ হাজার বছরের ইতিহাস হলো মার্কসের ভাষায়, ‘বিদেশিদের কাছে ভারতীয়দের পদানত হওয়ার ইতিহাস।’
অধ্যাপক কে. আলী আজ আমাদের মাঝে নেই। ‘ইসলামের ইতিহাস’-খ্যাত এই পরম শ্রদ্ধেয় ঐতিহাসিকের সঙ্গে কিছু ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে আলাপনের কথাটি হঠাৎ মনে পড়ল ভারত ও ভারত তত্ত্ব : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নামের একটি বই সম্পর্কিত প্রতিবেদন পড়তে গিয়ে। স্বনামখ্যাত ভারত তত্ত্ববিদ ড. সুকুমারী ভট্টাচার্যের সম্পাদিত বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৬ সালে। প্রকাশনা উৎসবে নোবেলজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেনের বক্তব্য ছাপা হয়েছিল বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায়। হিন্দুত্বের রাজনীতির কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, হিন্দুত্ববাদের রাজনীতি ভারতের ইতিহাস চর্চায় বিরাট ক্ষতির কারণ ঘটাচ্ছে।
ড. অমর্ত্য সেনের অভিমত, হিন্দুত্ববাদীরা প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্যকে তাদের সম্পত্তি বলে মনে করেন। দুঃখের বিষয় হিন্দুত্ববাদীদের বেশির ভাগ ‘সংস্কৃতি’ পড়েন না। প্রাচীন ভারত বর্ষকে জানতে হলে বেদ-উপনিষদ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। হিন্দুত্ববাদীরা বেদকে তাদের রাজনৈতিক আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। বেদ সম্পর্কে চরম কল্পনার আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। অথচ বেদকে আশ্রয় করে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠা সহজ নয়। ড. সেনের মতে, হিন্দুত্বের কুফল ভারতীয় রাজনীতিকে নগ্নভাবে গ্রাস করছে। যার পরিণতিতে সংখ্যালঘু নির্যাতন ঘটছে। গুজরাটের গোধরা কাণ্ড, সিন্ধু সভ্যতাসহ ঐতিহাসিক তথ্য বিকৃতি, পাঠ্য বইয়ে ইতিহাস সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টির মতো অপরাধমূলক কাজকর্ম মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। বইটির লেখিকা ব্যাখ্যা দিয়েছেন কেন বেদকে কেন্দ্র করে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করা যায় না। বেদ ও বেদ-পরবর্তী গ্রন্থগুলোতে নাস্তিকতাবাদের কথাও যেমন প্রচুর রয়েছে, তেমন ব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তি নিয়েও সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে।
ড. সুকুমারী ভট্টাচার্যের অভিমত, ভারতের আদি ধর্ম হলো সহিষ্ণুতা। হিন্দুধর্মের মূল বাণী স্বামী বিবেকানন্দ সহজ-সরলভাবে প্রচার করেছেন। এক শ্রেণির রাজনীতিবিদ ভারতের মূলবাণীকে অস্বীকার করে সারা দেশে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, আমদানি করছে। যা ভারতের ভিত্তিমূলকে দিনকে দিন দুর্বল করছে। ড. অমর্ত্য সেন এবং ড. সুকুমারী দেবীর বক্তব্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। হিন্দুত্ববাদের দ্বারা বহুজাতিক দেশ ভারতের ঐক্য যে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়, এ বিষয়ে এ দেশের প্রতিষ্ঠাতারা সচেতন ছিলেন। মহাত্মা গান্ধী, জহরলাল নেহরু, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ বড় মাপের নেতারা ভারতের মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ভারত এমন একটি দেশ যার তিনটি রাজ্য খ্রিস্টান প্রধান, দুটি রাজ্য বৌদ্ধ একটি রাজ্য মুসলিম ও একটি শিখ প্রধান। জনসংখ্যার শতকরা ৮০ শতাংশ হিন্দু হলেও জাতিভেদ প্রথার শিকার তাদের সিংহ ভাগ মানুষ। ভারতে রয়েছে অর্ধ শতেরও বেশি ভাষা। এ দেশের প্রধান সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মুসলমানদের সংখ্যা ২১ কোটিরও বেশি। যা মধ্যপ্রাচ্যের লোকসংখ্যার প্রায় সমান। ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তানের পরে ভারতেই সর্বাধিক সংখ্যক মুসলমানের বাস। স্বভাবতই এমন একটি দেশে হিন্দুত্ববাদ জাতীয় ঐক্যের জন্য বিপজ্জনক হতে বাধ্য। স্বাধীনতার পর থেকে ভারতে বারবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হলেও এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে সাম্প্রদায়িকতাবাদীরা কখনো ঠাঁই পায়নি। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের রেখে যাওয়া ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী আদর্শে পরিচালিত হয়েছে এই বিশাল দেশ। ১৯৯২ সালে বিজেপিসহ ধর্মান্ধ দলগুলোর চক্রান্তে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ভারতের জাতীয় চেতনার মর্মমূলে আঘাত হানে। এ ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে হিন্দুবাদী চেতনার উত্থান ঘটায়। এ চেতনাই বিজেপির মতো সাম্প্রদায়িকতাবাদী দলকে ক্ষমতায় আনতে সাহায্য করে।
অসম্প্রদায়িক চেতনার দলগুলোর অনৈক্যের সুযোগে ১৯৯৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি জোট জয়ী হয়। বিজেপির প্রথম মেয়াদে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল বিস্ময়কর। পরিসংখ্যানবিদরা বলেছিলেন এ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এক সময় ভারত অর্থনৈতিক সামর্থ্যরে দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করবে। এই সমৃদ্ধি সত্ত্বেও বিজেপির হিন্দুত্ববাদী নীতি ভারতের ঐক্য চেতনার বুকে যেভাবে ছুরিকাঘাত করেছে দেশের সচেতন মানুষের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয়নি।
ভারতের বিগত লোকসভা নির্বাচনে কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে বিচ্ছিন্নতাবাদ সমর্থিত প্রার্থীও জয়ী হয়েছে। যা সত্যিকার অর্থে এক অশনিসংকেত। কাশ্মীরে শেরে কাশ্মীর আবদুল্লাহর পৌত্র ওমর আবদুল্লাহর মতো হেভিওয়েট প্রার্থী হার মানতে বাধ্য হয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার শেখ আবদুল রশিদ নামের এক অতি সাধারণ প্রার্থীর কাছে। জঙ্গিবাদের অভিযোগে তিনি জেলে ছিলেন। তার দুই পুত্র ভোটারদের কাছে গিয়ে বলেছেন, ‘জেল কা বদলা ভোট সে।’ অর্থাৎ ভোট দেবে জেলের জবাব। বাস্তবে তাই ঘটেছে। কাশ্মীরে সাড়ে সাত দশক ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা চললেও কখনো তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল কোনো প্রার্থী নির্বাচনে জেতেনি। জম্মু কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা হরণ এবং এটিকে কেন্দ্রীয় শাসিত রাজ্য বানাবার ফলে মুসলিম প্রধান ওই রাজ্যের মানুষের মনোজগতে যে নেতিবাচক প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে, এটি তারই প্রমাণ। পাঞ্জাবে ইন্দিরা গান্ধী হত্যার সঙ্গে জড়িত তাঁর দেহরক্ষী বিয়ন্ত সিংয়ের সন্তান সরবজিত সিং জিতে এসেছেন লোকসভায়। জিতেছেন আমৃত পাল সিং যাকে বলা হয় বিদ্রোহী শিখ নেতা ভিন্দ্রনওয়ালের নতুন সংস্করণ। পাঞ্জাবে দুই বিচ্ছিন্নতাবাদীর জয় ভারতের জাতীয় ঐক্যের জন্য কোনো সুখবর নয়। শিখদের মধ্যে স্বাধীনতার মনোভাব যে মাথাচাড়া দিচ্ছে এই জয় তার প্রমাণ। ভারতের মণিপুর রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদ থাবা বিস্তার করেছে ভয়াবহভাবে। হিন্দুত্বকে প্রশ্রয়দানের ফলে ফুঁসে উঠেছে এই রাজ্যের খ্রিস্টান অধিবাসীরা। তারা ইতোমধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা শুরু করেছে। ড্রোন হামলার সক্ষমতাও দেখিয়েছে বিদ্রোহীরা। মণিপুর রাজ্য ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় স্বাধীন রাজ্য হিসেবে অস্তিত্ব বজায় রাখতে চেয়েছিল। ১৯৪৯ সালে তারা ভারতে যোগ দিতে বাধ্য হয়। ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর মণিপুরের রাজা লেই শেম্বা সানা জাওবার পক্ষ থেকে দুই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তারা যুক্তরাজ্যে প্রবাসী সরকার গঠনের কথাও বলেন। মণিপুরে মণিপুরী ও উপজাতীয়দের দ্বন্দ্ব এখন চরমে। উপজাতীয়রা একটি স্বাধীন খ্রিস্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে। যা শুধু ভারত নয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জন্যও অস্বস্তি সৃষ্টি করছে।
ভারতের বিগত লোকসভা নির্বাচনে হিন্দুত্ববাদীদের জনসমর্থন হ্রাস পেলেও জাতীয় ঐক্য বিপন্ন হওয়ার বিপদ কেটে গেছে তা ভাবার অবকাশ নেই। বাবরি মসজিদ ভাঙার মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবৃক্ষ রোপণ করা হয়েছিল, তার শেকড় এখন ভারতীয় রাজনীতির মর্মমূলেও আঘাত হানছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার রাজনীতিতে বিশ্বাসী বলে যারা এতকাল দাবি করেছেন, তাদের একাংশ এখনো আপস করে চলার চেষ্টা করছেন। এ আপসের কারণে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িক শক্তির লড়াইয়ের গতি স্তিমিত হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে প্রকারান্তরে হিন্দুত্ববাদীদের শক্তি জোগানো হচ্ছে। এ ভুল থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে ভারতে হিন্দুত্ববাদের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়বে জাতীয় ঐক্যের চেতনা। মানবিকতার জন্যও যা বিপর্যয়ের ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হবে। ভারতের প্রগতিশীল শক্তিগুলোকে তাই সময় থাকতেই সতর্ক হতে হবে। অস্তিত্বের স্বার্থেই।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক
ইমেইল : [email protected]