শিরোনাম
সোমবার, ৪ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিএনপি তাকিয়ে বিদেশের দিকে

বিএনপি তাকিয়ে বিদেশের দিকে

আপাতত রাজপথের আন্দোলনের দিকে না গিয়ে বিদেশনির্ভরতার দিকেই বেশি আগ্রহী বিএনপি। বিশেষ করে তিন সিটি নির্বাচনকে ঘিরে নতুন করে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছে দলটি। সদ্য সমাপ্ত সিটি নির্বাচনে কারচুপিসহ নানা অনিয়মের চিত্রগুলো আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরা হচ্ছে। উদ্দেশ্য, সরকারকে চাপে রেখে নির্দলীয় ব্যবস্থায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায় করা।  জানা গেছে, টানা তিন মাসের ফলাফলহীন আন্দোলনে সাংগঠনিকভাবেও বেকায়দায় বিএনপি। দল পুনর্গঠনের দাবি উঠেছে তৃণমূল থেকে। তবে কৌশল হিসেবে আপাতত রাজপথমুখী হচ্ছে না দলটি। এ মুহূর্তে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় দৌড়ঝাঁপ বাড়ানোর কৌশল নেওয়া হয়েছে। সিটি নির্বাচনের নানা অনিয়মকে ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করতে চান বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
সূত্রমতে, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক বেশ কিছু দিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। সেখানে তিনি জাতিসংঘসহ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে সিটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতিসহ নানা অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরছেন। এ ছাড়া বিএনপির আরেক নেতা নিউইয়র্কে অবস্থান নিয়ে কূটনৈতিক মহলে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরছেন।
বিএনপির কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন, তিন সিটি নির্বাচন নিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন টেলিফোনসহ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া চাপ প্রয়োগেরই অংশ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাও সাম্প্রতিক সিটি নির্বাচনের ‘অনিয়ম ও ভোট জালিয়াতির’ প্রতিবাদ জানাচ্ছে। একই সঙ্গে তারা স্বচ্ছ তদন্ত করে ভবিষ্যতের নির্বাচন প্রক্রিয়াগুলোতে সঠিক পন্থা গ্রহণেরও আহ্বান জানাচ্ছে। এসবই কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা।  
জানা যায়, গত শুক্রবার গুলশানের বাসায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শারম্যান। এ সময় বিএনপির পক্ষ থেকে তিন সিটি নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতির’ ভিডিও ক্লিপ শারম্যানের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, গত বছর ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের মতোই তিন সিটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়েছে। তাই ক্ষমতাসীনদের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। এ জন্য সরকারকে চাপ দিতে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। বৈঠকে শারম্যানের সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট উপস্থিত ছিলেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের পারস্পরিক সম্পর্কের চুক্তি অনুযায়ী প্রতি ছয় মাস পর সরকারের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা ঢাকায় আসেন। তারই অংশ হিসেবে ঢাকায় এসে ওয়েন্ডি শারম্যান খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে রাজনীতি, অর্থনীতিসহ দেশের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিন সিটি নির্বাচন নিয়ে বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে মঈন খান বলেন, ‘ইতিমধ্যে সিটি নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রেস রিলিজের মাধ্যমে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এ বিষয়ে আমার কোনো কিছু বলা নীতিগতভাবে ঠিক হবে না।’ জানা যায়, ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ আনার এক সপ্তাহ পার হলেও এর প্রতিবাদে দলীয়ভাবে কোনো আন্দোলন কর্মসূচি দেয়নি বিএনপি। এটাও কূটনৈতিক তৎপরতার একটি অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে যে কোনো কর্মসূচি ভেস্তে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ বলেন, এটা রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিবাচক কৌশল। সিটি নির্বাচনের প্রতিবাদে রাজপথের কর্মসূচির জন্য ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে উসকানি প্রদানের অভিযোগ করেন তিনি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য জানান, আপাতত কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ডাকার মাধ্যমে রাজপথে ক্ষমতাসীনদের নাশকতার কোনো সুযোগ দিতে চায় না বিএনপি। এ বিষয়ে শিগগিরই একটি সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে রাজপথের আন্দোলন কর্মসূচিতে যেতে আরও সময় নেওয়া হবে। তাই এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে দেশে একটি নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে দ্রুত অর্থবহ সংলাপের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে চায় দলটি।
জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শারম্যানের ঢাকা সফরকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে বিএনপি। এর সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সংসদের নিুকক্ষ হাউস অব কমন্সের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক উপ-কমিটিতে অনুষ্ঠিত শুনানি। গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত এ শুনানির বিষয় ছিল- ‘বাংলাদেশ ফ্র্যাকচার : পলিটিক্যাল অ্যান্ড রিলিজিয়াস অ্যাক্সট্রিমিজম’। এতেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট ও তা নিরসনের পথই বাতলানো হয়েছে। বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশ একটি বিশৃঙ্খল রাষ্ট্র। এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার পররাষ্ট্রবিষয়ক একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা বলেন, তারা শুধু ইউরোপ-আমেরিকাই নয়, বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে এবার বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতসহ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতা লাভের ওপরও গুরুত্বারোপ করছেন। তাছাড়া খুব শিগগিরই ১৭টি দেশের কূটনীতিকদের চলমান প্রক্রিয়ায়ও একটি ফল পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত বছর ৫ জানুয়ারির জাতীয় এবং সদ্য সমাপ্ত তিন সিটি নির্বাচনের পর ইউরোপ-আমেরিকা ও জাতিসংঘসহ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশ ও সংস্থাগুলো তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা সিটি নির্বাচনের জন্য স্বচ্ছ তদন্তসহ নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের জন্য দ্রুত কার্যকরী সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। যা দেশের ১৬ কোটি মানুষেরই দাবি। আর কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ সদ্য অনুষ্ঠিত এ ধরনের নির্বাচনকে কখনো সমর্থন করবে না বলেও আমরা মনে করি।

সর্বশেষ খবর