কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে চলছে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি। বিভিন্ন গ্রুপ এবং উপ-গ্রুপগুলো নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে ক্যাম্প ও তার আশপাশের এলাকায় মাঝেমধ্যেই ঘটাচ্ছে খুনের ঘটনা। এরই মধ্যে ৪ অক্টোবর দুজন, ৫ অক্টোবর একজন ও ৬ অক্টোবর দুই স্থানীয়সহ চারজন খুন হয়েছেন। এর বাইরে ক্যাম্পগুলোতে প্রায় প্রতিনিয়তই গ্রুপগুলোর সদস্যরা অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে। সদস্যদের সক্ষমতা বাড়াতে গ্রুপগুলোর পক্ষ থেকে গোপনে দেওয়া বিশেষ প্রশিক্ষণের বিষয়টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ একাধিক সংস্থার নজরে এসেছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে ত্রিশের অধিক গ্রুপ ও উপ-গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। ক্যাম্পগুলোতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বিশেষ দৃষ্টিকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে গোপনে নিজেদের অপরাধ কর্মকান্ডগুলো অব্যাহত রেখেছে রোহিঙ্গারা। ইয়াবা, মানব পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকায় ক্যাম্পের বাইরে ধরা পড়ছে অনেক রোহিঙ্গা সদস্য। তবে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে প্রায়ই গ্রুপ-উপগ্রুপগুলো সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করেন একজন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কেবল মাদক পাচার নয়, বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা রোহিঙ্গাদের অপরাধের খবর জানার পরও ক্যাম্পে অভিযান চালাতে পারছে না। তখন দেখা যাবে, সরকারকে বিব্রত করতে রোহিঙ্গারা মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে এমন ধুয়া তুলছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। সূত্র বলছে, চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে প্রায় ২০০টি। যাতে আসামির সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। ২০১৯ সালে মামলার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৬৩টি আর আসামি হন ৬৪৯ জন। ২০১৮ সালে ২০৮ মামলায় আসামি হয়েছেন ৪১৪ জন। ২০১৭ সালে নানা অপরাধে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ছিল ৭৬টি। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা কারাগারে ৫৫২ পুরুষ ও ৪৮ নারী রোহিঙ্গা বন্দী রয়েছেন। চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের সশস্ত্র গ্রুপগুলোকে দমনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিদর্শন করব। ওখানে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে। শরণার্থী ক্যাম্পের একাধিক সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সন্ত্রাসী গ্রুপ ও উপ-গ্রুপগুলো আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায় সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। চলে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনাও। গ্রুপ ও উপ-গ্রুপগুলো নিজেদের শক্তি বৃদ্ধির জন্য সাধারণ রোহিঙ্গাদের দলে বেড়াচ্ছে। নিজেদের অনুসারীদের সক্ষমতা বাড়াতে দেওয়া হয় সামরিক কায়দায় প্রশিক্ষণ। শেখানো হয় কারাতে কুংফুও। নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে ক্যাম্পে ক্যাম্পে অস্ত্রের মহড়া দেয় সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো। প্রায় রাতে ক্যাম্পে গুলি ছুড়ে নিজেদের সক্ষমতার কথা জানান দেয় গ্রুপ ও উপ-গ্রুপগুলো। কোনো সাধারণ রোহিঙ্গা এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করলেই সন্ত্রাসীরা চালায় হামলা লুটপাট। এমনকি খুনের ঘটনাও ঘটছে অসংখ্যবার। র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস্্) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ কর্মকান্ডের বিষয়ে আমরা বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। এগুলো গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানা যায়, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের ৩৪টি শরণার্থী ক্যাম্পে বসবাস করছে। এসব ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণ করছে সন্ত্রাসী ১২টি গ্রুপ এবং কমপক্ষে ২০টি উপ-গ্রুপ। এ ছাড়া কিছু কিছু ক্যাম্প হেড মাঝির নিয়ন্ত্রণে আবার তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন রয়েছে ছোট ছোট কিছু গ্রুপ। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সক্রিয় সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর মধ্যে রয়েছে- আবদুল হাকিম ওরফে ডাকাত হাকিম বাহিনী, নূর আলম বাহিনী, মাস্টার মুন্না বাহিনী, জাকির বাহিনী, সেলিম বাহিনী, হাফেজ জাবের বাহিনী, মৌলভী আনাস বাহিনী, ইসলাম মাহমুদ বাহিনী, মাস্টার আবুল কালাম অন্যতম। এ ছাড়া ক্যাম্পে সক্রিয় রয়েছে আরও কমপক্ষে ২০টি উপ-গ্রুপ। এরা ক্যাম্পে ইয়াবা ও অস্ত্র ব্যবসা, মানব পাচার নিয়ন্ত্রণ করে। ক্যাম্প এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজি কেন্দ্র করে প্রায়ই সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেওয়া তথ্য মতে, ক্যাম্পের ভিতর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অভিযান চালালে সশস্ত্র সান্ত্রাসী গ্রুপগুলো প্রায়ই হামলা চালায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ওপর। গত এক বছরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে প্রায় অর্ধশত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এ সময় বন্দুকযুদ্ধে ৪৬ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য।
শিরোনাম
- যে কারণে গভীর পর্যবেক্ষণে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান, রয়টার্সের বিশ্লেষণ
- আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ, তৈরি হচ্ছে মঞ্চ
- রাফাল যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলেছে ভারত, প্রমাণ পেয়েছে বিবিসি
- সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা: শত শত মানুষকে সরিয়ে নিলো ভারত
- খায়রুজ্জামান লিটনের সাবেক এপিএস স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা টিটু আটক
- উত্তেজনা চরমে: পাকিস্তানের পক্ষে বার্তা দিলেন এরদোগান
- ‘সিনেমা’ থেকে ‘বাস্তব’ জগতে ফিরে আসুন, ভারতকে পাকিস্তানের আহ্বান
- ইংলিশ দলে ডাক পেলেন রিউ
- ভারত-পাকিস্তান সংঘাত ‘আমাদের কোনও বিষয় নয়’ : যুক্তরাষ্ট্র
- এল-ক্লাসিকোর রেফারি চূড়ান্ত
- পাকিস্তান থেকে সরিয়ে যেখানে হবে পিএসএল
- সেলিনা হায়াৎ আইভী গ্রেফতার
- অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম দায়িত্ব ছিল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা : নাহিদ
- পাকিস্তানি পাইলটকে আটকের দাবি ভারতের, প্রমাণ চাইল ইসলামাবাদ
- আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ জাবি শিক্ষার্থীদের
- আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাবিতে বিক্ষোভ
- প্রথম আমেরিকান পোপ রবার্ট প্রেভোস্ট
- বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি খাত হুমকিতে
- 'পাকিস্তান আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিলে সারা পৃথিবী জানবে'
- ভারতের সেনা-স্থাপনায় হামলা, অস্বীকার পাকিস্তানের
হুমকিতে রোহিঙ্গা শিবির
সাখাওয়াত কাওসার, ঢাকা ও মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর

পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় সম্পূর্ণ ‘ব্ল্যাকআউট’ জম্মুতে পরপর বিস্ফোরণ, দাবি ভারতের
১৩ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

পাকিস্তানের ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় করার দাবি ভারতের
১৯ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম