কোটা সংস্কার আন্দোলনের আড়ালে পুলিশকে দুর্বল করতেই পরিকল্পিতভাবে হামলা-ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)-এর অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত অনেকবার গণতান্ত্রিক সরকারকে অবৈধভাবে ক্ষমতাচ্যুত বা দেশকে অকার্যকর করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পুলিশের কারণে তারা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য তারা এবার পুলিশকেই টার্গেট করেছে। গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। হারুন অর রশীদ বলেন, যাত্রাবাড়ী, রায়েরবাজার, শনিরআখড়া এলাকায় দুই পুলিশ সদস্য হত্যার ঘটনায় মাস্টারমাইন্ড হিসেবে ডেমরা থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদ রানাসহ ছয়জনকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন ইরফান, আবু বক্কর, রবিউল ইসলাম, সৌরভ মিয়া ও তারেক। মাসুদ রানার নেতৃত্বে পুলিশ হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়ন করা হয়। একেকজনের ছিল একেক দায়িত্ব। ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, জামায়াত ও বিএনপির ক্যাডাররা কীভাবে নির্মমভাবে পিটিয়ে আমাদের দুই পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। ২৮ অক্টোবরে আমরা দেখেছি রাষ্ট্রীয় স্থাপনা, বিচারপতির বাসভবনে হামলার চিত্র। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এর আড়ালে আমরা দেখলাম রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ও পুলিশকে টার্গেট করা হয়েছে। যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, রায়েরবাগে গিয়ে তারা পুলিশকে টার্গেট করেছে। পুলিশ মারতে পারলেই ১০ হাজার টাকাও তারা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। তিনি বলেন, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করেছে তারা। উদ্দেশ্য ছিল একটাই-পুলিশকে ডিমরালাইজড (মনোবল ভাঙা) করা। পুলিশকে ডিমরালাইজড করতে পারলে তারা হয়তো মনে করেছিল আন্দোলন সাকসেস (সফল) হবে। পুলিশ দুর্বল হলে পিছিয়ে যাবে। তখন তারা এ রাষ্ট্রকে অকার্যকর এবং সরকারের পতন ঘটাতে পারবে মনে করেছিল। দেশ ও মানুষের জন্য পুলিশ সদস্যরা নানা সময়ে আত্মাহুতি দিয়েছে। এ কোটা আন্দোলনে তিন পুলিশ সদস্যকে হারিয়েছি। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক। কিন্তু পুলিশের মনোবল মোটেও ভাঙেনি। যারা পুলিশকে হত্যা করেছে, সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, স্বপ্নের মেট্রোরেলসহ সরকারি স্থাপনায় নাশকতা চালিয়েছে, যারা এসবের নেতৃত্ব দিয়েছে, অর্থ আদানপ্রদান করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তারা যেখানেই থাকুক না কেন তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।
ডেমরা থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদ রানাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, মাসুদ রানার নেতৃত্বে ইরফান, আবু বক্কর, রবিউল ইসলাম, সৌরভ মিয়া, তারেকসহ ২৫-৩০ জনের একটি দল ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জন্য যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে অবস্থান করে। এ ছাড়া মাসুদ রানার উপস্থিতি এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় ইরফান ও বক্কর আরও কয়েকটি দল নিয়ে এসে তার সঙ্গে যোগ দেয়। মাসুদ রানার নেতৃত্বে তারা রায়েরবাগ-শনিরআখড়ায় অগ্নিসংযোগ এবং মসজিদের মাইকে গুজব ছড়ানো, থানা আক্রমণ ও পুলিশ হত্যায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করে।