অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, যে কোনো মূল্যে অর্থের অপচয় বন্ধ করতে হবে, সেই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে অর্থের যথাযথ ব্যবহার। সেই অর্থ যেখান থেকেই আসুক না কেন। বাইরের টাকা ইচ্ছেমতো খরচ নয়। গতকাল পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সময়মতো প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা হবে। জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশের ওপরে উঠে গেছে, এটা অস্বীকার করে লাভ নেই। তিনি মনে করেন, যথাযথ নীতি প্রণয়নের জন্য প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত দরকার। তিনি বলেন, দেশের সবার মতো বর্তমান সরকারও মূল্যস্ফীতি নিয়ে চিন্তিত। গ্রামে ৬ টাকার বেগুন ঢাকায় ৮০ টাকায় বিক্রি হয়। কৃষক ১০ কিলোমিটার দূর থেকে ফসল নিয়ে বাজারে এলেও দাম পান না। শেষমেশ অল্প দামে ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করে দেন। অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, সরকারের লক্ষ্য হলো এটা নিশ্চিত করা যে কৃষককে ডিসট্রেস সেল (কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হওয়া) করতে না হয়। ফড়িয়ারা যেন ৫০ গুণ মুনাফা করতে না পারেন।
বাজারব্যবস্থার কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায় বলে মন্তব্য করেন অর্থ উপদেষ্টা। তবে এসব বিষয় অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের নয়। এসব ঠিক করতে হলে বাজার মনিটরিং করতে হবে। তবে এ বিষয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া জুলাইয়ের আন্দোলনে সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। যে ব্যবস্থা ছিল তা-ও ছিল বিকৃত। কেনাকাটার বিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আগের কর্মকর্তা করে গেছেন, আমি জানি না; এসব বলা যাবে না। যিনি এখন দায়িত্বে আসবেন, তাকেই দায়িত্ব নিতে হবে। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় নেই। বরং বলা যায় অর্থনীতির গতি কমে গেছে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ অনেক কারণেই তা হতে পারে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতিতে গতি আনার চেষ্টা করছে। শিগগিরই এ বিষয়ে অগ্রগতি হবে। সংস্কারের বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা কী- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংস্কার করা হবে। ব্যাংকিং খাত সংস্কারের বিষয়ে কিছু পরিকল্পনা তাঁর মাথায় আছে; এখনই এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে চান না। তিনি বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা বা এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুর্বলতা আছে। এ ক্ষেত্রে ধীরগতি থাকা চলবে না। গত অর্থবছরে বাস্তবায়নের হার ছিল খুবই কম। তবে তিনি বলেন, সেটা ছিল বিশেষ সময়, এ নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে তিনি বাস্তবায়নের গতি বৃদ্ধির পক্ষে মত দেন। অনেক প্রকল্প নেওয়া হবে, এরপর প্রকল্প পরিচালক পাওয়া যাবে না, এসব হবে না। এ ছাড়া একজন কর্মকর্তা চারটি প্রকল্পের পরিচালক হবেন, তা হবে না বলে নির্দেশনা দেন তিনি। তিনি বলেন, ব্যবসাবাণিজ্য ও জীবনজীবিকার প্রকল্প চালু রাখা হবে। বড় বা মেগা প্রকল্পের অর্থ ছাড় বড় হয় তাই এ বিষয়ে পরে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ শেষ হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার যে খসড়া প্রণয়ন করেছে, সে বিষয়ে উপদেষ্টা পর্ষদে আলোচনা করা হবে বলে জানান সালেহউদ্দিন আহমেদ। এডিপির বরাদ্দ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তা অপ্রতুল। আবার কোনো কোনো খাতে যত বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেটা তারা ব্যয়ও করতে পারে না। এ ছাড়া সামাজিক ও শিক্ষা খাতের কথাও বলেন তিনি। এসব খাতে কম বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মনোভাব পরিবর্তনের কথা বলেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বা সবুজায়নে অনেক প্রকল্প এসেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দেশে সবুজ না বাড়লেও বড় বড় ভবন হয়েছে। এসব বাস্তবভিত্তিক করতে হবে বলে নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা।
প্রকল্প বাস্তবায়নে সমন্বয়হীনতার কথা উল্লেখ করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এক রাস্তা একবার সিটি করপোরেশন খোঁড়ে, আবার ওয়াসা ও বিদ্যুৎ বিভাগ খোঁড়ে। এতে অর্থের অপচয় হয়; দুর্ভোগ বাড়ে মানুষের। দেখা যায়, একই বিষয়ে চারটি বিভাগ অর্থ ব্যয় করে; একই কাজ একাধিকবার করতে হয়। এসব বন্ধ করে কাজের মানোন্নয়ন করার পরামর্শ দেন তিনি।