বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে। কিন্তু জনগণের সরকার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ফেরাতে তাদের কতদিন লাগবে তার সময়সীমা ঘোষণা করা উচিত। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি।
আজিজুর বারী হেলাল বলেন, আওয়ামী ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একটা বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে। এরপর ২০২৪ সাল পর্যন্ত যত নির্বাচন হয়েছে সবই ছিল আধুনিক ডিজিটাল চুরির মাধ্যমে। কখনো ব্যালট বাক্সে আগে ভোট, কখনো দিনের ভোট রাতে আবার কখনো ডিজিটাল মেশিনের মাধ্যমে। অবৈধভাবে ক্ষমতায় থেকে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা তুলে দেয় তারা। অথচ আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য রাজপথে একসময় আন্দোলন করে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের অবৈধ শাসনামলে যত রকমের ভোট হয়েছে সবই ছিল কারচুপির। ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ একদলীয় ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে বাকশাল কায়েমের সর্বশেষ প্রচেষ্টা চালায়। তারা ১৫ বছরে জনগণের ভোটাধিকার ধ্বংস করে দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের শাসনামল প্রসঙ্গে আজিজুল বারী হেলাল বলেন, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবকিছু দলীয়করণের মাধ্যমে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে। দলীয় লোক বসিয়ে অনেক ব্যাংক দেউলিয়া করে ফেলেছে। টাকা ডলার বানিয়ে দেশের বাইরে পাচার করেছে। শিক্ষার অতীত ঐতিহ্য ধ্বংস করে দিয়েছে। শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার হার বাড়ানোর জন্য ঢালাওভাবে গণপাস করানো হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি সব দলীয়করণ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধ্বংস করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
সংকট উত্তরণের উপায় প্রসঙ্গে আজিজুল বারী হেলাল বলেন, আমরা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ সরাতে সক্ষম হয়েছি। এখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কাজ বিপ্লবের পরের বিশৃঙ্খলা শান্ত করা। দ্রুত প্রাথমিক কাজগুলো শেষ করে জনগণের ক্ষমতা জননির্বাচিতদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা। জনগণের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের কত সময় লাগবে তা জানানো উচিত। এ সরকারের প্রতি আমাদের দলের শতভাগ সমর্থন রয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে হটানো ছাত্রদের এক মাসের আন্দোলনের ফল বললে ভুল হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসার পর থেকে তাদের অন্যায়-অবিচার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দেশবাসী আন্দোলন করে আসছে। ২০০৮ সাল থেকে আন্দোলনের ভিত শুরু হয়। সবশেষে ছাত্র-জনতার চূড়ান্ত আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দেশ নিয়ে একটি রূপরেখা দিতে পারে। এজন্য কমিটি ঘোষণাও করতে পারে। কিন্তু তার বাস্তবায়ন করতে হবে নির্বাচিত সরকারকেই। এ সরকারের এমন কোনো কর্মকাণ্ডে জড়ানো উচিত হবে না যাতে তাদের প্রতি দেশবাসীর বর্তমান সমর্থন কমে যায়।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে দেশে ফিরছেন-জানতে চাইলে আজিজুল বারী হেলাল বলেন, দেশনায়ক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গায়েবি, মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক মামলা দেওয়া হয়েছে। তাঁর জনপ্রিয়তাকে ভয় পেয়ে তাঁকে আটকানোর জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা দেওয়া হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে দল এখন সাংগঠনিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী। তারেক রহমান যখন চাইবেন তখনই দেশে ফিরবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে আওয়ামী লীগের অবৈধ সরকার যা করেছে তা অমানবিক। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা একসময় বিএনপির কাছ থেকে উদারতা পেয়েছেন। তৎকালীন সময়ে জিয়াউর রহমান না চাইলে শেখ হাসিনা দেশে ফিরতে পারতেন না। ওয়ান-ইলেভেন সরকার যখন শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে প্রথম প্রতিবাদ জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। তৎকালীন সরকার যখন শেখ হাসিনাকে বিদেশ পাঠালেন, তিনি দেশে ফিরতে চান তখন দেশে ফিরতে বাধার সৃষ্টি হয়। এ সময়ও প্রথম প্রতিবাদ করেন খালেদা জিয়া। জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার কাছ থেকে এত মহানুভবতা পাওয়ার পর খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা ও নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো এখন অনেক শক্তিশালী। আমাদের জনসমর্থন রয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষা একটি সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের।