আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর হামলা-মামলার ভয়ে বিভিন্ন ডিলারশিপ নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনাকারীরা আত্মগোপনে চলে গেছেন। অনেকের নামে মামলাও হয়েছে। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সার বিতরণ, ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) এবং ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই অনেকে রাজনৈতিক বিবেচনায় ডিলারশিপ পেয়েছিলেন। তবে এসব বিষয়ে কাজ করতে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা নিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা। প্রয়োজনে অভিযুক্ত বা রাজনৈতিক বিবেচনায় পাওয়া ডিলারশিপ বাতিল করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, বাণিজ্য, কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, বিভিন্ন জেলা উপজেলায় যারা সার, ওএমএস এবং টিসিবির ডিলারশিপ নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন তাদের অনেকেই সরকার পতনের পর থেকে পলাতক। অনেক জেলা-উপজেলায় মামলা হয়েছে এসব ডিলারদের নামে। ফলে অনেক স্থানে টিসিবির পণ্য বিতরণ, ওএমএস কার্যক্রম এবং সার বিতরণ বন্ধ আছে। কোথাও সীমিত পরিসরে চলছে। কোথাও নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ডিলারশিপ চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন বর্তমান ডিলাররা। ইতোমধ্যেই দলীয় বিবেচনায় পাওয়া এসব ডিলারশিপ বাতিলের দাবি উঠেছে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকেও।
সম্প্রতি সচিবালয়ে বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে এক বৈঠকে দেশের সব বিভাগীয় কমিশনারের টিসিবির ডিলারদের বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। ডিলারদের অনুপস্থিতিতে কোনো কার্যক্রম যেন থেমে না থাকে, প্রয়োজনে ডিলারশিপ বাতিল করে নিয়মমতো ডিলারশিপ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে বিভাগীয় কমিশনারদের নিয়ে চলতি মাসের এক সমন্বয় সভায়ও সারের ডিলার এবং ওএমএস কার্যক্রম নিয়ে সচিবরা নির্দেশনা দিয়েছেন। সচিবদের নির্দেশনা পেয়ে কমিশনাররাও এসব বিষয় নিয়ে কাজ করতে ডিসি-ইউএনওদের তাগিদ দিয়েছেন।
জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ই ডিলারের বিরুদ্ধে চাল মজদু ও কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ সামনে এসেছে। টিসিবির পণ্য বাইরে বিক্রির অভিযোগ আছে অহরহ। এ ছাড়া টিসিবির পণ্য বিতরণে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অনেক সময় কার্ডধারীদের না দিয়ে ডিলার ও সংশ্লিষ্টরা নিজেদের পছন্দের মানুষকে টিসিবির পণ্য দিয়ে থাকেন। সার নিয়েও ডিলারদের বিরুদ্ধে নানা কেলেঙ্কারির খবর রয়েছে। ডিলারদের এসব অনিয়ম, দুর্নীতি বেশি প্রশ্রয় পেয়েছে দলীয় আনুগত্যের কারণে। কোথাও অনিয়মের ঘটনায় নামমাত্র শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হলেও বেশির ভাগ ঘটনায় সত্যতা পেলেও ক্ষমতার দাপটে অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়নি কর্তৃপক্ষ। যারা বেশি অনিয়ম করেছেন তাদের অনেকে এখন গা ঢাকা দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে সরকার বিষয়টি ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়, যাতে ডিলারদের জন্য সাধারণ মানুষের কষ্ট না বাড়ে।
কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনেক জায়গায় ডিলারদের অনুপস্থিতিতে কাজে সমস্যা হচ্ছে। ডিলার না থাকলে যেন বিকল্প চালু করে সেটি বলা হয়েছে। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, অনেক স্থানেই ডিলাররা পলাতক। কোথাও মামলাও হয়েছে। কোথাও কার্যক্রম চলছে না। মানুষের কষ্ট হচ্ছে।