সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ছে। চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রার্থীর সর্বোচ্চ বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে সুপারিশ করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এ বিষয়ে গঠিত পর্যালোচনা কমিটি। বয়সসীমা পুরুষ প্রার্থীর ক্ষেত্রে ৩৫ ও নারী প্রার্থীর ক্ষেত্রে ৩৭ বছর করার সুপারিশ করেছে কমিটি। তবে সরকারি চাকরিজীবীদের অবসরের ক্ষেত্রে কমিটি কোনো সুপারিশ করেনি। গতকাল সচিবালয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রথম বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে চাকরির বয়স পর্যালোচনা কমিটির প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এ তথ্য জানান। আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনেরও প্রধান। জানা গেছে, সরকারের করে দেওয়া পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে চাকরিতে প্রবেশের বয়স কত বাড়বে সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সাধারণ বয়স ৩০ বছর। তবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় আবেদনের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়স ৫৯ বছর। তবে অবসরের বয়স ৬৫ বছর চান প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
পর্যালোচনা কমিটির প্রধান বলেন, বয়সসীমা কোনো গ্রেডের জন্য আলাদাভাবে বলা হয়নি, সার্বিকভাবে সব সরকারি চাকরির বিষয়ে বলা হয়েছে। পুরুষদের ক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর প্রযোজ্য হবে। আর নারীদের জন্য আমরা দুই বছর বাড়িয়ে ৩৭ বছর সুপারিশ করেছি। এটা করেছি কারণ আরও বেশি সংখ্যক নারী যেন অংশগ্রহণ করতে পারে। অধিকসংখ্যক নারী যেন চাকরিতে আসতে পারে।
আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, আমরা ছাত্রদের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমরা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোও দেখেছি। বিভিন্ন দেশে যে বয়সসীমা আছে সেটার সঙ্গে আমাদের সুপারিশ সংগতিপূর্ণ হয়েছে। কাজেই বাংলাদেশ পৃথিবী থেকে আলাদা কিছু নয়। নারীদের প্রবেশে বয়স বেশি বাড়ানোর পেছনে যুক্তি হিসেবে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, মেয়েদের আমরা এ কারণে দিয়েছি যে মেয়েদের ছেলেদের মতো ওই বয়সে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয় না। ফ্যামিলি অব্লিগেশন্স থাকে, বিয়ে হয়ে যায়, বাচ্চা-কাচ্চা হয়। তাই তারা যেন আসতে পারে। এ ছাড়া আমাদের নারী কর্মকর্তার সংখ্যা তুলনামূলক কম। কোটা আছে, কিন্তু অতটা ফুলফিল হয় না এখনো। সেজন্য আমরা এ সুপারিশ দিয়েছি, যেন নারীরা এ সুবিধাটা পায়, তারা আসতে পারে।
অবসরের বিষয়ে সুপারিশ নেই : সরকারি চাকরিজীবীদের অবসরের বিষয়ে কমিটি কোনো সুপারিশ করেনি বলেও জানান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। তিনি বলেন, এখন যাদের বিষয়ে সুপারিশ করলাম, তারা চাকরি করে অবসরে আসতে অনেক সময়। এর মধ্যে অনেক কিছু চিন্তা করে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। কমিটি প্রধান বলেন, এখন যারা অবসরে যাবেন, তারা আগের বয়স অনুসারে চাকরিতে ঢুকেছেন, তাদের অবসরের ক্ষেত্রে তো কোনো অসুবিধা নেই। আগামী ৮-১০ বছর পর্যন্ত তো তারাই অবসরে যাবেন। এটা নিয়ে এখনই চিন্তার কোনো কারণ নেই। এখন চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর কারণে তাদের ওপর কোনো প্রভাব পড়ছে না। যাদের বয়সের সুপারিশ আমরা করেছি তারা এখনো চাকরিতে ঢোকেইনি, জন্মই গ্রহণ করেনি। তারা চাকরিতে ঢোকার পর চাকরি করলে তখন কী করতে হবে, সেটা নিয়ে সরকার সেই সময় সিদ্ধান্ত নেবে।
অবসরের বয়স ৬৫ বছর চান প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা : সরকারি চাকরি থেকে অবসরের বয়স ৬৫ বছর চায় প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ)। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বয়সসীমা পুরুষের ৩৫ এবং নারীদের ৩৭ বছর করার সুপারিশ করা হয়েছে। অবসরের বয়স বাড়ানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, যিনি ৩৫ বছর বয়সে চাকরিতে প্রবেশ করবেন, তাকে অবসর সুবিধা নিতে হলে কমপক্ষে ২৫ বছর চাকরি করতে হবে। না হলে তো সে পূর্ণ পেনশন পাবে না। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়স ৫৯ বছর। বিদ্যমান চাকরি আইনের মাধ্যমে অবসরের বয়স বাড়ানো সম্ভব, সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আমরা অবসরের বয়স ৬৫ বছর করার দাবি করছি। আশা করছি সরকার অবসরের বয়সও নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাড়াবে।
তিন কর্মদিবসে প্রজ্ঞাপন চান ৩৫ প্রত্যাশীরা : তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রজ্ঞাপনের দাবি করেছেন ৩৫ প্রত্যাশীরা। গতকাল বিকাল ৪টায় রাজধানীর শাহবাগে জাদুঘরের সামনে এ অবস্থান কর্মসূচি শেষ করার আগে গণমাধ্যমকে এ দাবির কথা বলেন ৩৫ প্রত্যাশীদের ঢাকা মহানগর সমন্বয়ক আহমেদ তানজিদ।
আহমেদ তানজিদ বলেন, আমাদের এ দাবি দীর্ঘ ১২ বছরের। আমরা আর ধৈর্য ধারণ করতে পারছি না। প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আমরা তিন কার্যদিবসের মধ্যে চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা প্রজ্ঞাপন আকারে দেখতে চাই। অন্যথায় আমরা ছাত্ররা পুনরায় আন্দোলনে নামব, রাজপথে নেমে আসব।