অনেকেরই তাৎক্ষণিক মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে। তবে যারা বেঁচে যান তাদের অনেকেই প্যারালাইসিসে ভুগতে থাকেন। স্ট্রোকের মাত্রা কম হলে তাদের ধীরে ধীরে প্যারালাইসিস কমতে থাকে
স্ট্রোক একটি ইংরেজি শব্দ, যার মানে- আঘাত। হঠাৎ আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া বা আক্রান্ত হওয়াকে স্ট্রোক বলা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় হঠাৎ মস্তিষ্কে সমস্যার সৃষ্টি হওয়াকে স্ট্রোক বলা হয়। কেউ কেউ হার্ট অ্যাটাককে স্ট্রোক বলে থাকেন, যাকে হার্ট স্ট্রোকও বলা যেতে পারে। তবে সাধারণভাবে স্ট্রোক বলতে মস্তিষ্কের অসুস্থতাকেই বোঝানো হয়। মস্তিষ্কে কোনো কারণে রক্ত সরবরাহের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হলে স্ট্রোক হয়ে থাকে। যদি কোনো কারণে মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্তপ্রবাহের ব্যাঘাত ঘটে তবেই মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। আমাদের দেশে যত রোগী স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, তার শতকরা ষাট ভাগ রোগী উচ্চমাত্রায় রক্তচাপ বা হাইপ্রেশারে ভুগছিলেন। তাই স্ট্রোকের প্রধান কারণ হিসেবে হাইপ্রেশারকে দায়ী করা হয়। তা ছাড়াও মস্তিষ্কের রক্তনালিতে ব্লক সৃষ্টি হওয়ার আরও একটি প্রধান কারণ, মস্তিষ্কের রক্তনালির জন্মগত ত্রুটি, মস্তিষ্কের টিউমার ইত্যাদি আরও অনেক কারণে স্ট্রোক হতে পারে। হাইপ্রেসারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যদি কখনো ভারী কাজ করতে থাকেন, তখনো স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। স্ট্রোক আবার নানা ধরনের হতে পারে। যেমন-টিআইএ যা খুবই অল্প সময় স্থায়ী হয় এবং অতি তাড়াতাড়ি রোগী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। যেমন চোখ ঝাপসা হওয়া, শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে দাঁড়ানো থেকে পড়ে যাওয়া, কথা জড়িয়ে আসা বা কথা বন্ধ হয়ে যাওয়া, হঠাৎ শরীরের কোনো অঙ্গ যেমন হাত-পা-মুখ বোধ না পাওয়া ইত্যাদি। যদিও টিআইএ এটি বড় স্ট্রোকের একটি সতর্ক বার্তা হিসেবে বিবেচিত। দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রোককে অর্ধাঙ্গ বা প্যারালাইসিস বলা হয়ে থাকে।
বেশ কিছু উপসর্গকে নিশ্চিতভাবে স্ট্রোকের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় যেমন- শরীরের কোনো এক পাশ মানে ডানপাশ অথবা বামপাশ অবস হয়ে যাওয়া, রোগী হাঁটতে, চলতে বা দাঁড়াতে না পারা, কথা বলায়, কানে শোনায় বা চোখে দেখায় অসুবিধার সৃষ্টি হওয়া, কারও কারও চোখ বন্ধ করা বা মুখমন্ডল এক দিকে বেঁকে যাওয়া, খাদ্যবস্তু গিলতে না পারা ইত্যাদি। সাধারণভাবে যাদের ডান হাত বা শরীরের ডান পাশ আক্রান্ত হয়, তারা কথা বলতে গেলে কথা জড়িয়ে যায় বা কোনো কথা বলতে পারে না। স্ট্রোকে আক্রান্তদের অনেকেরই তাৎক্ষণিক মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে। তবে যারা বেঁচে যান তাদের অনেকেই প্যারালাইসিসে ভুগতে থাকেন। তবে ব্যক্তির স্ট্রোকের মাত্রা কম হলে তাদের ধীরে ধীরে প্যারালাইসিস কমতে থাকে। এ প্রক্রিয়া এতই ধীর গতিতে হয় যে, ব্যক্তি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে বছরকে বছর সময় লেগে যায়। কেউ স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে অতি দ্রুত কোনো হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানোই উচিত। তাতে স্ট্রোকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশেই কমানো সম্ভব। বাড়িতে প্রাথমিক অবস্থায় রোগীকে বিশ্রাম নিতে দেওয়া ও তখন হাইপ্রেশার থাকলে অতি দ্রুত প্রেশার নিয়ন্ত্রণের ওষুধ সেবন করানো এবং খবুই যত্ন সহকারে রোগীকে হাসপাতালে প্রেরণ করতে হবে। স্ট্রোকের হাত থেকে রেহাই পেতে বা স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপ্রেশার অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং রক্তের কোস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে হবে। যদি কেউ টিআইএতে আক্রান্ত হন তবে তার স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি অত্যধিক বেশি থাকে। এ ধরনের রোগীর অবশ্যই কোনো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। তাই এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। কথায় আছে, প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম। অবহেলা না করে এসব বিষয়ে আরও যত্নবান হতে হবে। চিকিৎসা নিতে হবে প্রাথমিক অবস্থা থেকে। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা নিয়ে জটিলতা এড়ানো যায়।
লেখক : চিফ কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট
কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।