প্রেমের টানে বাংলাদেশে গিয়ে দুই বছর কারাগারের মেয়াদ শেষে ভারতে ফিরে গেছে কলকাতার তরুণী প্রিয়াংকা নস্কর।
বছর কয়েক আগে বাংলাদেশের এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয় পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার বাসিন্দা ১৮ বছর বয়সী প্রিয়াঙ্কার। সেখান থেকে প্রেম। পরে সেই প্রেমের টানেই অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের পরই তাকে গ্রেফতার করে বিজিবি। পরে আদালতের নির্দেশে ঠাঁই হয় বাংলাদেশের কারাগারে। প্রায় দুই বছর কারাগারের মেয়াদ শেষে অবশেষে মঙ্গলবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক স্থল বন্দর সীমান্ত দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতে ফিরে ওই তরুণী।
এদিন দুপুর ১টায় চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্ট সীমান্তে উপস্থিত ছিলেন বিজিবির আইসিপি কমান্ডার নায়েব সুবেদার মোস্তফা মিয়া, ইমিগ্রেশন ইনচার্জ আতিকুর রহমান, ঝিনাইদহ কারাগারের ডেপুটি জেলর তানিয়া, কাস্টমস কর্মকর্তা কাবিল হোসেন, দর্শনা থানার এসআই ফাহিম।
ভারতের পক্ষে ছিলেন বিএসএফ গেদে ক্যাম্পের অ্যাসিস্টেন্ট কমিশনার, ইমিগ্রেশন ইনচার্জ সঞ্জিব কুমার বোস, কাস্টমস কর্মকর্তা আরপি যাদব, কৃষ্ণগঞ্জ থানার সাব ইন্সপেক্টর তন্ময় দাস প্রমুখ।
জানা গেছে, বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা এক যুবকের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে প্রিয়াঙ্কার। ওই যুবকের বুয়ার বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের হাওড়াতে। তারই পাশে অবস্থিত প্রিয়াঙ্কাদের নিজের বাড়ি। বুয়ার বাড়িতে যাতায়াতের সময় থেকেই প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠে ওই যুবকের। প্রিয়াঙ্কাকে বিয়ের পর তাকে নারায়ণগঞ্জে গামের্ন্টেসে চাকরি দেবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর ওই যুবকের সঙ্গে বিয়ে করার জন্য ২০২২ সালের ৩ অক্টোবর বাংলাদেশে আসে প্রিয়াঙ্কা।
জানা গেছে, বাংলাদেশের ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে প্রিয়াঙ্কা দালালের মাধ্যমে সীমান্ত পার হতে যায়। এসময় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবির হাতে ধরা পড়ে। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের অভিযোগে প্রায় দুই বছরের জেল হয় প্রিয়াঙ্কার। অবশেষে ২৩ মাস ঝিনাইদহ কারাগারে থাকার পর মঙ্গলবার প্রিয়াঙ্কাকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। এসময় দর্শনা সীমান্তে উপস্থিত ছিলেন প্রিয়াঙ্কার বাবা প্রতাপ নস্কর ও মা তনুশ্রী নস্কর।
কিন্তু বাংলাদেশের প্রেমিককে ভালোবেসে যে এভাবে তাকে প্রেমের খেসারত দিতে হবে, তা বোধহয় কল্পনাতেও ভাবতে পারে নি প্রিয়াঙ্কা। স্বাভাবিক ভাবেই প্রিয়াঙ্কার অকপট স্বীকারোক্তি, সে ভুল করেছে। প্রেম করে বাংলাদেশে যে যুবকের কাছে আসতে গিয়ে সে ধরা পড়ে, কারাবাস হওয়ার পর সে কোনদিন একটি বারের জন্যও খোঁজ নেয়নি। তাকে ভুলে গেছে। ওই যুবককে ভালবেসে তার নিজের জীবন থেকে দুটি বছর ঝরে গেছে। ফলে তার মতো বিশ্বাস করে এই ভুল যেন কোনও মেয়ে না করে- সেই পরামর্শও দিয়েছে প্রিয়াঙ্কা।
দর্শনা সীমান্ত দিয়ে প্রিয়াঙ্কা যখন শেষে ফিরে আসে, তখন মেয়েকে ফিরে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরেন তার বাবা-মা। মা তনুশ্রী জানান 'দুই বছর মেয়েকে হারিয়ে অনেক কষ্টে ছিলাম। রাতে মেয়ের জন্য ঘুম হতো না।'
প্রিয়াংকার বাবা প্রতাপ নস্কর বলেন, মেয়ে হারিয়ে যাওয়ার কোন খোঁজ পায়নি। ৮ মাস আগে বাংলাদেশ থেকে একজন মোবাইলে ফোন করে জানায় তাদের মেয়ে ঝিনাইদহ কারাগারে আছে। দুইটি বছর বাংলাদেশের কারাগারে আমার মেয়ে ভালো ছিল।
ঝিনাইদহ কারাগারের ডেপুটি জেলর তানিয়া বলেন, প্রিয়াংকা প্রায় দুই বছর আমাদের কারাগারে ছিল। সে খুবই ভদ্র মেয়ে। আমরা তাকে যতদূর পেরেছি কারাগারে ভালো রেখেছিলাম। আজ তার বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিতে পেরে আমরাও খুশি।
পশ্চিমবঙ্গের এনজিও কর্মী চিত্তরঞ্জন বলেন, মেয়েটির বয়স খুবই কম। সে একটা ভুল করেছে। এ রকম ভুল যেন কেউ না করে। এজন্য অভিভাবকদের সচেতন হওয়াটা খুব জরুরি।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত