দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জামিনকে ‘সত্যের বিজয়’ হিসেবে অভিহিত করেছে আম আদমি পার্টি (আপ)। একইসঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের অন্যান্য শরিকরা বলেছে, সুপ্রিম কোর্টের রায় শুধু ইডি, সিবিআই ও আয়কর বিভাগের নয়, যারা তাদের দিয়ে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করছে, তাদের জন্যও একটি বড় ধাক্কা।
আবগারি নীতি মামলায় ঘুষ নেওয়া ও টাকা পাচারের অভিযোগে কেজরিওয়ালকে প্রথমে গ্রেফতার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি), পরে একই মামলায় তাকে গ্রেফতার করে সিবিআই। ছয় মাস কারাগারে থাকার পর শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট তাকে জামিন দেন। আদালতের রায়ে ইডি ও সিবিআইয়ের তদন্ত পদ্ধতির কড়া সমালোচনা করা হয়।
জামিনের রায় ঘোষণা হওয়া মাত্র কেজরিওয়ালের স্ত্রী সুনীতা দলের সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘আম আদমি পার্টির সকল নেতা-কর্মীকে অভিনন্দন। কঠিন সময়ে শক্ত অবস্থান রাখার জন্য। আশা করি, আমাদের সকল নেতাও মুক্তি পাবেন।’
এই জামিনের পর আপ নেতাদের প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। কেজরিওয়ালের মতো জামিন পাওয়া দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া লিখেছেন, ‘আজ সত্যের জয় হলো। মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রের পরাজয় ঘটেছে। সত্যের শক্তি স্বৈরতান্ত্রিক শাসকের জেলখানার তালা ভেঙে দিয়েছে।’
জামিন পাওয়া আপের রাজ্যসভার নেতা সঞ্জয় সিংও মন্তব্য করেছেন, ‘গণতান্ত্রিক দেশে স্বৈরতন্ত্রের স্থান নেই। মোদির শাসন কেজরিওয়ালের মনোবল ভাঙতে পারেনি। ইডি, সিবিআই ও আয়কর বিভাগের মিথ্যার কুচক্রের পর্দা উঠে গেছে। সত্যই জয়ী হয়েছে।’ দিল্লির মন্ত্রী আতিশি লিখেছেন, ‘সত্যকে চাপা দেওয়া যায়, তবে পরাজিত করা সম্ভব নয়। সত্য ঠিকই প্রকাশিত হবে।’
কেজরিওয়ালের মুক্তিতে আম আদমি পার্টির মধ্যে খুশির জোয়ার বইছে। মে মাসে লোকসভা ভোটের প্রচার চলাকালে সুপ্রিম কোর্ট কেজরিওয়ালকে সাময়িক জামিন দিয়েছিলেন, ভোট শেষে তাকে ফের কারাগারে যেতে হয়েছিল। এবার জামিন পেলেন হরিয়ানা বিধানসভা ভোটের আগে, যেখানে কংগ্রেসের সঙ্গে আপের আসন সমঝোতা হয়নি। আপের রাজ্যসভা সদস্য হরভজন সিং বলেন, ‘এই জামিন আমাদের উজ্জীবিত করবে এবং হরিয়ানার ভোটের প্রস্তুতি আরও শক্তিশালী করবে।’
‘ইন্ডিয়া’ জোটের অন্যান্য দলও সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে এবং বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র সমালোচনা করেছে। এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার মন্তব্য করেন, ‘গণতান্ত্রিক দেশে ষড়যন্ত্রের সরকার পতন কখনো সফল হয় না। কেজরিওয়ালের জামিন সেই প্রমাণ।’ আরজেডির মনোজ ঝা বলেন, ‘এটি প্রত্যাশিত ছিল। প্রতিটি মামলার ক্ষেত্রেও একই হবে। কারণ, এসব ষড়যন্ত্র বিজেপির।’ কংগ্রেসের প্রমোদ তিওয়ারি বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধীদের বিরুদ্ধে তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করছে। দেশের বর্তমান অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
সিপিএমের হান্নান মোল্লা ও সিপিআইয়ের ডি রাজাও রায়ের প্রশংসা করেছেন। মোল্লা বলেন, কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে কিছু নেই, অথচ তাকে আটক রাখা হয়েছিল। রাজা মন্তব্য করেন, কেজরিওয়াল নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী। এখন বিচার কেমন চলবে তা দেখতে হবে, কারণ কেজরিওয়ালের ওপর কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কেজরিওয়ালের সম্পর্ক চমৎকার। জামিনের খবর পেয়ে মমতা এক্স মারফত লেখেন, ‘কেজরিওয়াল জামিন পেয়েছেন। খুব খুশি হয়েছি। নির্বাচনী আবহে তার মুক্তি সহায়ক হবে।’
বিজেপি এখনো আক্রমণাত্মক। দলের মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া মন্তব্য করেন, ‘তিনি শর্তসাপেক্ষে জামিন পেয়েছেন। এতদিন তিনি জেলওয়ালা মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, এখন জামিনওয়ালা মুখ্যমন্ত্রী। কেজরিওয়ালের উচিত অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়া।’ বিজেপির দিল্লি প্রদেশের সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেব মন্তব্য করেন, ‘আম আদমি পার্টির জামিনাতি ক্লাবের সদস্যসংখ্যা বেড়েছে।’
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল