শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটে আবারও নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে আসছেন সাবেক কিংবদন্তি সনাৎ জয়াসুরিয়া। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট আসার আগেই তার মতো ব্যাটসম্যানদের শৈলী ক্রিকেটপ্রেমীদের নজর কাড়ে। মাতারা থেকে উঠে আসা এই ব্যাটসম্যান পরিচিত ছিলেন তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্য, যা তাকে ‘মাতারা হারিকেন’ নামে খ্যাতি দেয়।
তবে ক্রিকেটার হিসেবে জয়াসুরিয়ার পরবর্তী কর্মকাণ্ড কিছুটা বিতর্কিত ছিল। নির্বাচক থাকাকালীন বিভিন্ন পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এবং দুর্নীতি তদন্তে সহযোগিতা না করায় নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার সেই জয়াসুরিয়াই শ্রীলঙ্কার কোচ হিসেবে ফিরে এসে নতুন আশার সঞ্চার করেছেন।
গত জুলাই থেকে জয়াসুরিয়া অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে শ্রীলঙ্কা দলের দায়িত্ব পালন করছেন। তার অধীনে শ্রীলঙ্কা দলের পারফরম্যান্সের অভাবনীয় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। প্রথমে ভারতের বিপক্ষে সিরিজে অংশ নেয় শ্রীলঙ্কা, যেখানে টি-টোয়েন্টিতে হেরে গেলেও, ওয়ানডে সিরিজে তারা ২-০ ব্যবধানে জয় লাভ করে। এই জয়টি ছিল ভারতের বিপক্ষে ২৭ বছর পর শ্রীলঙ্কার প্রথম সিরিজ জয়।
শ্রীলঙ্কার সফল অলরাউন্ডার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস জয়াসুরিয়ার এই কোচিং সাফল্যকে শ্রীলঙ্কা দলের জন্য ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, জয়াসুরিয়া শুধুমাত্র কোচ নন, তিনি ক্রিকেটারদের স্বাধীনভাবে খেলার সুযোগ দেন এবং তাদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।
ভারতের বিপক্ষে সিরিজের পর জয়াসুরিয়ার দল ইংল্যান্ডে তিন টেস্টের সিরিজ খেলতে যায়। প্রথম দুই ম্যাচে পরাজিত হলেও, শেষ টেস্টে ওভালে ৮ উইকেটে জয় তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা। এটি ছিল ইংল্যান্ডের মাটিতে ১০ বছর পর শ্রীলঙ্কার প্রথম টেস্ট জয়। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে শ্রীলঙ্কা ১৫ বছর পর টেস্ট সিরিজ জিতে নেয়। প্রথম টেস্টে ৬৩ রানের জয় এবং দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস ও ১৫৪ রানের বিশাল জয় দলকে আত্মবিশ্বাসের নতুন দিগন্তে পৌঁছে দিয়েছে।
অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার ম্যাথুস আরও বলেন, জয়াসুরিয়া ক্রিকেট ডিরেক্টর হিসেবে যেমন সফল ছিলেন, তেমনি কোচ হিসেবেও দারুণ কাজ করছেন। তার অধীনে খেলোয়াড়রা ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন এবং তাদের পারফরম্যান্স ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি) ইতিমধ্যেই জয়াসুরিয়ার ওপর সন্তুষ্ট এবং তাকে স্থায়ী কোচ হিসেবে নিয়োগের জন্য আলোচনা চলছে। এসএলসির প্রধান নির্বাহী অ্যাশলি ডি সিলভা সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, দুই-তিন দিনের মধ্যে জয়াসুরিয়ার স্থায়ী নিয়োগ চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
২০১৩ সালে মন্ত্রীর ছেলেকে দলে নেওয়া এবং ২০১৯ সালে দুর্নীতি তদন্তে অসহযোগিতার জন্য নিষিদ্ধ হওয়া জয়াসুরিয়া এখন কোচ হিসেবে তার গায়ে লেগে থাকা দাগ মুছে ফেলতে প্রস্তুত। ক্রিকেট ইতিহাসের এই ‘মাতারা হারিকেন’ আরও একবার শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটে ইতিবাচক পরিবর্তন আনছেন, যা দ্বীপ দেশটির ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নতুন দিগন্তে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল