কঠোর পরিশ্রমের জন্য জাপানিরা বিশ্বে পরিণত হয়েছে মডেল হিসেবে। সেই জাপানে পড়তে গিয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা একেকজন হয়ে উঠেছেন কাজের রোবট। দৈনিক গড়ে ১৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করেই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা জোগান দেন বিশাল অঙ্কের টিউশন ফিসহ অন্যান্য খাতের বার্ষিক খরচের ৪০ লাখ ইয়েন। শুধু তাই নয়, নিজের খরচ মেটানোর পাশাপাশি তারা দেশে পরিবার-পরিজনের জন্যও পাঠান মোটা অঙ্কের অর্থ।
জাপানের রাজধানী টোকিওর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আরিফ হোসেন। পাশাপাশি একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘নিজের খরচের পাশাপাশি দেশেও পরিবারের জন্য টাকা পাঠাতে হয়। তাই ছাত্রদের জন্য সরকার নির্ধারিত কর্মঘণ্টার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি কাজ করতে হয় আমাকে। অতিরিক্ত আয় করতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত টানা কাজ করি। টানা কাজ করার পর না ঘুমিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে হয়। শুরুতে আমার কষ্ট হলেও এখন তা জীবনের অংশই হয়ে গেছে।’ জাপানে বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছেন ৩০ হাজারের মতো; যার মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ৮ হাজার। বেশির ভাগই পড়াশোনা করেন টোকিও এবং ওসাকায়। জাপান ব্যয়বহুল দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, খাবার, যাতায়াত ও অন্যান্য খাতে বছরে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ ইয়েন ব্যয় করতে হয়। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি বাবদ বছরে দিতে হয় ৮ থেকে ১০ লাখ ইয়েন।
এ ছাড়া খাবার ও থাকা বাবদ মাসে খরচ হয় ৫০ হাজার ইয়েন, যাতায়াত ও অন্যান্য খাতে মাসিক খরচ ৭০ থেকে ৮০ হাজার ইয়েন। এর পুরোটাই শিক্ষার্থীরা আয় করেন। ব্যয় নির্বাহের জন্য শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার পাশাপাশি পার্টটাইম জব করেন। তারা সপ্তাহে চার দিন দৈনিক ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও সুপার শপে কাজ করেন। বৃহস্পতি থেকে শনিবার পর্যন্ত তিন দিন দৈনিক কাজ করেন ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা। জাপানে সাধারণ শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বাংলাদেশ-জাইকার ‘ওডিএ’র আওতায় প্রতি বছর ৩৩ জন শিক্ষার্থী জাপানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষার জন্য আসেন।
এ চুক্তির আওতায় আসা শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করে জাইকা। এ খাতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি বছর ৪৯৫ মিলিয়ন ইয়েন ব্যয় করে জাইকা। ইয়ামাগুচি প্রিফেকচারের ইয়ামাগুচি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর ডিগ্রির জন্য আসা বাংলাদেশি রায়হান উদ্দিন বলেন, ‘জাপানের অর্থনীতিটা সাজানো হয়েছে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে। ফলে শিক্ষার্থীরা চাইলেই রেস্টুরেন্ট ও সুপার শপগুলোয় পার্টটাইম কাজ করতে পারেন। এখানে ১৮ বছরের বেশি বয়সি শিক্ষার্থীরা নিজের ব্যয় নির্বাহ করার জন্য আয় করেন। জাপানি শিক্ষার্থীরা আত্মনির্ভরশীল। তাই ১৮ বছরের বেশি হলে তারা মা-বাবার কাছ থেকে খরচের টাকা নেন না।’ তিনি বলেন, ‘জাপানে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে দারুণ সব সুযোগসুবিধা। অন্যান্য দেশের চাইতে জাপানে ভিসা প্রসেসিং সহজ। তাই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য জাপানকে বেছে নেওয়া উচিত।’