বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় হত্যাকান্ডের শিকার দুজনের পরিবার জাতীয় নাগরিক কমিটির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) অভিযোগ দায়ের করেছে। গতকাল আইসিটির প্রসিকিউশন শাখায় এ অভিযোগ দেওয়া হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালে গত ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী কাজলা পেট্রল পাম্পের পাশের পকেটগেটে গুলিতে নিহত হন দনিয়া কলেজের বিএ (পাস) কোর্সের ছাত্র সাকিব হাসান। ওই ঘটনায় সাকিব হাসানের বাবা মর্তুজা আলম পাঁচজনকে আসামি করে অভিযোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া গত ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর তেমুহনি এলাকায় গুলিতে নিহত হন চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র ওসমান পাটওয়ারী ওরফে ওসমান গণি। ওই ঘটনায় তার বাবা আবদুর রহমান ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। দুটি ঘটনায় অভিযোগের বিষয়ে তত্ত্বাবধান করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। অভিযোগ দায়েরের পর জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, যেসব শহীদের পরিবার এখনো আইনি লড়াইয়ে যুক্ত হয়নি কিংবা বিভিন্ন কারণে মামলা দায়ের করতে পারেনি, তাদেরকে ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করতে আহ্বান জানায় জাতীয় নাগরিক কমিটি। আখতার হোসেন বলেন, আমরা মামলার তদন্তের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করব এবং বিচার শুরু হওয়ার পর আইনি কাঠামোর মধ্য থেকে শহীদ পরিবারকে আইনি প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা অব্যাহত রাখব। কেবল জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত শহীদ ও আহত যোদ্ধাদেরই নয়, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ আমলে নানা সময় যারা হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-মাদরাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেসব শিক্ষার্থী অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদেরকে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির লক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটি বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদান করবে। এ সময় শহীদ পরিবারকে আইনি সহায়তা দিতে সাত আইনজীবীকে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যভুক্ত করার কথা জানান আখতার হোসেন। তারা হলেন- মুস্তাফিজুর রহমান মুকুল, জহিরুল ইসলাম মুসা, মনজিলা ঘুমা, হুমায়রা নূর, সাকিল আহমাদ, ফাতিমা আক্তার (তাহসিন) ও প্রিয়াসী চাকমা। এদিকে, আইসিটিতে ছাত্র আন্দোলনকালে হত্যাকান্ডের আরেকটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। গত ৪ আগস্ট রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে বিএএফ শাহীন কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী শাফিক উদ্দিন আহমেদ আহনাফ নিহতের ঘটনায় তার মা অভিযোগটি দায়ের করেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর বরাবর আহনাফের মা পারভীন সাফাক এ অভিযোগ দায়ের করেন। আবেদনে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
অপরদিকে, আইসিটির পুরাতন হাই কোর্ট ভবন (ট্রাইব্যুনালের মূল ভবন) সংস্কার করতে ৩-৪ মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি জানান, ক্ষয়ক্ষতির কারণে এটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। বিষয়টি সরকারকে জানানোর পর পূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান প্রকৌশলীসহ টিমকে ডেকে ভবনটি যত দ্রুত সম্ভব ব্যবহার উপযোগী করতে নির্দেশ দিয়েছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে পুরো টিম আজ (গতকাল) এসেছেন। আপাতত টিনশেড ভবনে কার্যক্রম চলবে।