গত ১৫ সেপ্টেম্বর ডিম, মুরগির দাম নির্ধারণ করেছিল সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। সেখানে উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিম ১০ দশমিক ৫৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা ভোক্তা পর্যায়ে ১১ দশমিক ৮৭ টাকায় বিক্রয় হওয়ার কথা। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি হয়নি। বরং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান উৎপাদক পর্যায়ে ১১ দশমিক ০১ বিক্রয়ের কথা স্বীকার করলেও তারা প্রতারণার মাধ্যমে প্রতিটি ডিম বিক্রয় করেছেন ১১ দশমিক ৮০ থেকে সাড়ে ১২ টাকা পর্যন্ত, যা খুচরা বাজারে বিক্রয় হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ টাকায়। এতে প্রতিটি ডিমে ২ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। এভাবে গত ২০ দিনে ১৬০ কোটি টাকা ভোক্তাদের পকেট থেকে হাতিয়ে নিয়েছে সিন্ডিকেট।
এ ছাড়া প্রতি মুরগির বাচ্চা গত ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে একই বাচ্চা (ব্রয়লার) বিক্রয় হচ্ছে ৪০ থেকে ৫৬ টাকায় এবং মুরগির বাচ্চা (লেয়ার) বিক্রয় হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। প্রতিদিন সব ধরনের মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয় ৩০ লাখ। প্রতিটি বাচ্চায় যদি ২০ টাকা অতিরিক্ত ধরা হয় তাহলে প্রতিদিন ৬ কোটি টাকা হয়। গত ২০ দিনে প্রান্তিক খামারিদের সঙ্গে প্রতারণা করে ১২০ কোটি টাকা কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত মুনাফা করছে। গতকাল বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। বিপিএ বলছে, যাদেরকে সঙ্গে নিয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, তারা কেউ সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করেনি। শুধু করপোরেট গ্রুপদের পরামর্শে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও কৃষি বিপণন থেকে ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণ করার কারণে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। ডিম ও মুরগির বাজারে চলমান অস্থিরতার পেছনে ফিড মুরগির বাচ্চার কোম্পানি ও তাদের অ্যাসোসিয়েশনগুলোর এবং তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতিরসহ আরও অনেকের শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে বলে জানায় বিপিএ।
বিপিএ সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার জানান, খামার থেকে ডিম সংগ্রহ করে সিন্ডিকেট করে মূল্য নির্ধারণ করে সব জায়গায় মোবাইল এস এম এস ও ফেসবুকের মাধ্যমে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়। এতে দেখা যায় সারা দেশের ডিম ব্যবসায়ীরা লাভবান হন। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন উৎপাদক ও ভোক্তা। বিপিএ জানায়, প্রান্তিক খামারি ডিম এবং মুরগি উৎপাদন করে কিন্তু দাম নির্ধারণ করতে পারে না। দাম নির্ধারণ করে করপোরেট গ্রুপ ও তেজগাঁও ডিম বাবসায়ী সমিতি। তারা তাদের সুবিধা মতন যে দাম নির্ধারণ করে সেই দামে প্রান্তিক খামারিদের ডিম মুরগি বিক্রয় করতে হয়। যখন দাম বাড়িয়ে দেয় তখন খামারি ন্যায্যমূল্য পায়। যখন দাম কমে যায় তখন লস হওয়ার কারণে উৎপাদন থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। ডিম ও মুরগির বাজারে অস্থিরতার কারণ করপোরেট গ্রুপ ও তেজগাঁও ডিম বাবসায়ীদের আধিপত্য। এই সিন্ডিকেট বারবার বাজারে সিন্ডিকেট করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিলেও তাদের শাস্তি না হওয়ার কারণে বাজারে অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। এর আগেও ২০২২-২৩ সালে সিন্ডিকেটের প্রমাণ পাওয়া যায় তখন বাজারে স্বস্তি রাখতে তৎকালীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামানের হস্তক্ষেপে সিন্ডিকেটকে দমন করা হয়। যার ফলে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগিতে প্রায় ১০০ টাকা কমে। এ ছাড়া প্রতি ডিমে ৩ টাকা কমেছিল।
তারা জানান, সারা দেশের খামারি, পাইকারি, খুচরা পর্যায়ে ডিমের দাম ওঠা তেজগাঁও ডিম সমিতির নির্ধারিত দামের ওপর নির্ভর করে। খামারি থেকে চার দিন পরপর ডিম ক্রয় করা হয়। খামারি চাইলে অন্য কারও কাছে ডিম বিক্রি করতে পারেন না। একই পাইকারের কাছে ডিম বিক্রি করতে হয়। ঢাকার সাধারণ ডিম ব্যবসায়ীদের তেজগাঁও ডিমের বাজার থেকে যে মূল্য নির্ধারণ করে ক্যাশমেমোর মধ্যে লিখে দেওয়া হয় সেই দামে কিনতে হয়। ঢাকার বিভিন্ন বাজারে যারা খুচরা ডিম বিক্রি করে তেজগাঁও ডিমের বাজার থেকে ক্যাশমেমোতে যে মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয় তার সেই দামের ওপর নির্ভর করে তাদের ডিম বিক্রি করতে হয়।