বেতন-বোনাসসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে পোশাক কারখানাগুলোয় অস্থিরতা চলছেই। গতকালও বিভিন্ন স্থানে পোশাকশ্রমিকরা বিক্ষোভ-সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
গাজীপুর : হাজিরা-বোনাস বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকাল দুপুরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের জিরানী এলাকায় রেডিয়াল ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় তারা চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর যান চলাচল শুরু হয়। শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের জিরানী এলাকার রেডিয়াল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামের একটি পোশাক তৈরি কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এসব দাবি নিয়েই গতকাল দুপুরে টিফিনের সময় শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকরা কারখানার সামনে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। এতে দুপুর ১টা থেকে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় জিরানী বাজার এলাকা থেকে উভয় দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। সড়ক অবরোধ থাকায় বিপাকে পড়েন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা। পরে পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিলে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর যান চলাচল শুরু হয়। নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জে বকেয়া বেতন পরিশোধসহ ত্রিপক্ষীয় ১৮ দফা চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শহরের চাষাঢ়া এলাকার বিকেএমইএ কার্যালয়ের সামনে তারা এই অনশন কর্মসূচি পালন করেন। এর আগে চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে একটি মিছিল বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিকেএমইএ এসে শেষ হয়। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার পতনের আন্দোলনের সময় থেকে এখন পর্যন্ত ফতুল্লার বিসিক শিল্পাঞ্চল ও আশপাশে অবস্থিত নেমকন ডিজাইন ও ক্রোনি গ্রুপের অবন্তি কালারসহ চার থেকে পাঁচটি পোশাক কারখানায় তিন মাস ধরে শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না। শ্রমিকদের বেতন বকেয়ার পাশাপাশি নিটিং-ডাইং বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছয় মাসের বেতনও বকেয়া রয়েছে। এ ব্যাপারে শ্রমিকরা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও মালিকপক্ষের টনক নড়েছে না। বারবার আশ্বাস দিয়েও বেতন পরিশোধ না করে মালিকপক্ষ প্রতারণা করছেন এবং নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন কারখানাগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীরা। এদিকে অবিলম্বে সব বকেয়া বেতন পরিশোধ না করলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাওসহ আরও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শ্রমিকরা। আর এই পরিস্থিতির জন্য শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বিকেএমইএ কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন।
অনশন কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, শ্রমিক জাগরণ মঞ্চের জাহাঙ্গীর আলম গোলক প্রমুখ।
সাভার (ঢাকা) : গতকাল সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ধামরাই উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বারবাড়িয়া এলাকায় কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। শ্রমিকরা জানান, তাদের মৌখিকভাবে আশ্বস্ত করলেও দাবি মেনে নেয়নি কর্তৃপক্ষ। তিন মাস আগে বেতন বৃদ্ধির কথা বলা হলেও এখনো শ্রমিকরা বর্ধিত বেতন পাননি। এর আগে কয়েক দফায় মাসিক বেতন ১৫ হাজার টাকা করা, বেতনের অর্ধেক ঈদ বোনাস দেওয়া, প্রতিদিন সবাইকে ডিউটি দেওয়া, কর্মদক্ষতার ওপর ভিত্তি করে চাকরি স্থায়ীকরণ, কোম্পানির লভ্যাংশ দেওয়া, নাইট বিল দেওয়া, কোম্পানির ভিতরে কোনো শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার দায়ভার কোম্পানিকে নেওয়া, কোম্পানির প্রতিটি বিভাগে নিরাপত্তাব্যবস্থা করা ও সাপ্তাহিক ছুটি দেওয়ার দাবি জানানো হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নেয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শ্রমিকরা। এদিকে বেআইনিভাবে কর্মবিরতি, কারখানায় ভাঙচুর, স্টাফদের মারধর ও অরাজকতা সৃষ্টি করায় আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় অবস্থিত আল-মুসলিম অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার ১৭৯ শ্রমিককে ছাঁটাই করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় সকালে কারখানায় প্রবেশের পর ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছে কারখানার অন্যান্য শ্রমিকরা। পরবর্তীতে সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে কারখানাটি ছুটি ঘোষণা করা হলে সেনা ও শিল্প পুলিশের উপস্থিতিতে শ্রমিকরা ওই এলাকা ত্যাগ করেন। এ ছাড়া আশুলিয়ার অন্যান্য তৈরি পোশাক কারখানাগুলো স্বাভাবিক উৎপাদনে ফিরেছে। সকাল থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগ দেন শ্রমিকরা। আশুলিয়া শিল্প পুলিশ ১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়োর আলম বলেন, শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় প্রায় শতভাগ উৎপাদনে ফিরেছে কারখানাগুলো। সারাদিনে কোথাও কোনো শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেনি। তবে গতকাল শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩(১) ধারায় ৪টি কারখানা বন্ধ ছিল এবং ৩টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।