দীর্ঘ প্রায় ২০০ বছর ধরে কড়ই গাছ ও বাঁশঝাড়ে বাসা গড়ছে শত শত বক ও পানকৌড়ি। প্রতিবার মাস চারেকের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে আগত এই পাখিগুলো অবস্থান করে। এ সময় তারা বাচ্চা দেয়। এর পর আবার চলে যায় অন্য ঠিকানায়। আর এমন মনোরম দৃশ্য চোখে পড়ে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নের নিজভোগডাবুড়ি পশ্চিম ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে। পাখির এমন মিলনমেলা দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করেন বিভিন্ন এলাকার পাখিপ্রেমীরা।
পাখিগুলো প্রতিবছর ফাল্গুন মাসে আসে এবং আশ্বিনের শেষের দিকে চলে যায় বলে জানিয়েছেন নিজভোগডাবুরী গ্রামের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম। তিনি জানান, এই গ্রামে একটি কড়ই গাছের পাশাপাশি প্রায় তিন একর জমির ওপর বাঁশঝাড়ে গড়ে উঠেছে পাখির অভয়ারণ্য। বাঁশঝাড়ে নিরাপদ আবাসস্থল মনে করে এরা বসবাস করছে। এ যেন মানুষ ও পাখির সহাবস্থানে তৈরি প্রাকৃতিক পরিবেশের এক বাসভূমি! বাঁশঝাড়ের মালিক পাখিপ্রেমী মজিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন ভোরে পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙে এলাকার মানুষের। তবে বিকালের পরিবেশটা আরও উপভোগ্য হয়ে ওঠে। ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসা পাখির ডাকে মুগ্ধতা ছড়ায় এলাকার মানুষের মাঝে। তার পর সন্ধ্যা নামতেই আশ্রয় নেয় বাঁশঝাড়ে। সাধারণত জুনের শেষের দিকে এই অতিথি পাখিরা আসে। অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত এরা এখানে অবস্থান করে। এ সময় ডিম পেড়ে বাচ্চা ফোটানোর কাজ শেষ হয়। বাচ্চা বড় হলে একসঙ্গে চলে যায় অন্য স্থানে। পরের বছর একই নিয়মে নতুন করে এসে বাসা বাঁধে। ওই বাড়িতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাঁশঝাড়ের সবুজ পাতার ফাঁকে বক ও পানকৌড়ি এক সঙ্গে বসবাস করছে। ধবধবে সাদা বকগুলো কাশফুলের মতো পেখম মেলে শূন্যে ডানা মেলে ভাসছে। বাঁশঝাড় এবং এর তলায় তাদের বিষ্টা ও খসে পড়া পালকে সয়লাব। এলাকার লোকজন জানান, প্রতিদিন ভোরবেলায় পাখিগুলো দল বেঁধে ছোটমাছ, ব্যাঙ ইত্যাদি খাবারের উদ্দেশ্যে দূর-দূরান্তের বিলে চলে যায়। কখনো খাবারের জন্য আশপাশের পুকুর বা মৎস্যখামারে ঢুঁ মারে পাখিগুলো। ডোমার বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো রুহুল আমিন বলেন, পাখিগুলো দীর্ঘদিন অবস্থান করলেও কারোর কোনো ক্ষতি করে না। বরং জমির পোকামাকড় ও ছোট ছোট সাপ খেয়ে উপকারই করছে। মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম বলেন, বর্ষাকাল এসব পাখির প্রজননকাল। ডিম পেড়ে বাচ্চা ফুটে ওড়া শেখা পর্যন্ত প্রায় তিন মাস সময় লাগে। পাখিগুলো যে এলাকাকে নিরাপদ মনে করে সেখানেই গাছে বসবাস করে।