দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে অঢেল সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও ঢাকা-২ আসনের এমপি কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ ছাড়া লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার মেয়র মেজবাহ উদ্দিন মেজু ও নেত্রকোনার মদনপুর পৌরসভার মেয়র মো. আবদুল হান্নান তালুকদারের বিরুদ্ধেও পৃথক অনুসন্ধান শুরু করেছে সংস্থাটি। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, কামরুল ইসলাম নিজ নামে ও সন্তানদের নামে দেশে-বিদেশে অঢেল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। তিনি আইন প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে নিম্ন আদালতে অধিকাংশ কর্মচারীর নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন। তিনি দুর্নীতির মাধমে ব্রাজিল থেকে নিম্নমানের গম ক্রয় করে সরকারি কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। পুরান ঢাকার লালবাগে আজগর লেনে নিজ নামে ৪৮/১ নম্বর চারতলা বাড়ি, মিরপুর আবাসিক এলাকায় দুটি ফ্ল্যাট, মিরপুর হাউজিং এস্টেটে চার কাঠা জমি, নিউ টাউনে ১০ কাঠা জমি রয়েছে তার। তিনি দুটি টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি (ঢাকা-মেট্রো-ঘ-১৫-৭৭০৭ এবং ঢাকা-মেট্রো-ঘ-১২-১৪৩৫) ব্যবহার করেন। তিনি নিজ নামে ও আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রচুর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মালিক হয়েছেন।
সূত্র জানায়, ব্রাজিল থেকে খাওয়ার অনুপযোগী পচা গম আমদানি ও তার দুর্নীতির বিষয়ে ২০১৫ সালের আগস্টে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এ কে লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ পায় সংস্থাটি। এসব তথ্য থেকে দুদক জানতে পারে, সরকার অনেকদিন ধরে ইউক্রেন থেকে গম আমদানি করছিল। এ ধারাবাহিকতায় সরকার টু সরকার (জিটুজি) চুক্তির ভিত্তিতে ইউক্রেন থেকে আড়াই লাখ টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পরে কামরুলের অবৈধ সিদ্ধান্তে ইউক্রেনের পরিবর্তে ব্রাজিল থেকে খাবার অনুপযোগী গম আমদানি করা হয়। এর ফলে সরকারের ৪০০ কোটি টাকা অপচয় হয়। ওই সময় ইউক্রেনের সঙ্গে জিটুজি পদ্ধতিতে আড়াই লাখ টন গম আমদানির চুক্তি করেও আমদানি করেনি বাংলাদেশ। ইউক্রেন সরকার বাংলাদেশকে বারবার তাগিদ দিলেও কাজ হয়নি। পরে একটি জাল চিঠি নিয়ে ইউক্রেনের পার্লামেন্টে আলোচনা হয়। জাল-জালিয়াতির চিঠির বিষয়টি ইউক্রেন সরকারের নজরে আসে ২০১৫ সালের ৬ মার্চ। এর পর স্টেট ফুড গ্রেইন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ভ্যালরি টেমিলেনকো খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়ে জানান। এ ছাড়া এ বিষয়ে গত ১০ মার্চ বাংলাদেশের খাদ্য সচিব, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠান ইউক্রেনের কৃষিনীতি ও খাদ্যমন্ত্রী ও এম পাভলেনকো। চিঠি দুটি পাওয়ার পরও ওই বছরের ১১ মার্চ সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটি ওই ভুয়া কাগজ জানা সত্ত্বেও গ্রানুম ইনভেস্টমেন্টের স্থানীয় প্রতিনিধি রামিন এন্টারপ্রাইজকে দেড় লাখ টন গম আমদানির অনুমোদন দেয়। এর পরই ব্রাজিল থেকে আনা গম নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালত ওই গম কাউকে গ্রহণে বাধ্য করা যাবে না মর্মে নির্দেশনা দেন। এ বিষয়ে সরকার একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করে। এদিকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার মেয়র মেজবাহ উদ্দিন মেজু নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অনিয়ম ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রভাব খাটিয়ে স্বনামে ও তার পক্ষে অন্য ব্যক্তিদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার নগদ টাকা, অকৃষি জমি এবং স্ত্রীর নামে জমি, রামগতি পৌরসভার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে কাজ না করে ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে বিল উত্তোলন ও বিভিন্ন বাজারঘাট নিজস্ব লোকের কাছে ইজারা দিয়ে অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করেন। তার নিজ নামে, স্ত্রী ও অন্য আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদক বলছে, নেত্রকোনার মদনপুর পৌরসভার মেয়র মো. আবদুল হান্নান তালুকদার বিভিন্নভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে দলীয় কিংবা বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে অনিয়ম করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। পৌরসভার হাটবাজার ও স্ট্যান্ডগুলো যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করে ঘনিষ্ঠজনদের নামে ইজারা দিয়েছেন। তিনি ও তার ভাই হাটবাজার ও স্ট্যান্ডগুলোর ইজারার অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন।