যারা তাদের অবসর পরিকল্পনায় ১০০তম জন্মদিন উদযাপনের আশা করছেন, তাদের জন্য নতুন গবেষণায় উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বব্যাপী দীর্ঘায়ু জনসংখ্যার মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিংশ শতাব্দীর দ্রুত জীবন প্রত্যাশার উন্নতি সাম্প্রতিক তিন দশকে নাটকীয়ভাবে কমে গেছে।
গবেষণার ফলাফল ইঙ্গিত দিচ্ছে, ১০০ বছর বয়সকে ৮০ এর মতো সাধারণ করতে হলে বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়া ধীর করার জন্য নতুন ধরনের ঔষধ প্রয়োজন, যা সাধারণ রোগ যেমন ক্যান্সার, ডিমেনশিয়া, বা হৃদরোগের চিকিৎসার চেয়ে বেশি কার্যকর হবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সম্প্রতি জন্ম নেওয়া শিশুদের মধ্যে যারা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী অঞ্চলে বসবাস করছে, তাদের মধ্যে শতবর্ষী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। গবেষকরা ভবিষ্যদ্বাণী করছেন যে, এই শতাব্দীতে সেইসব অঞ্চলে জন্ম নেওয়া মেয়েদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৫% এবং ছেলেদের মধ্যে ৫% ১০০ বছর বয়সে পৌঁছাবে।
ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি বিজ্ঞান ও বায়োস্ট্যাটিস্টিক্সের অধ্যাপক জে ওলশানস্কি বলেছেন, আপনার অবসর পরিকল্পনায় যদি ১০০ বছর বাঁচার পরিকল্পনা থাকে, তাহলে এটা ঠিক চিন্তা না হতে পারে। হয়তো আপনাকে অন্তত ১০ বছর বেশি কাজ করতে হতে পারে, কিন্তু জীবনের শেষ পর্যায়টুকু উপভোগ করতে হবে, শুধু ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে গিয়ে সেই সময় নষ্ট করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
বিংশ শতাব্দীতে জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি জীবন প্রত্যাশায় বিপ্লব এনেছিল। আগের দুই হাজার বছরে প্রতি শতাব্দীতে গড়ে মানুষের আয়ু এক বছর করে বেড়েছে, অথচ বিংশ শতাব্দীতে প্রতি দশকে তিন বছর করে আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছিল।
এই দ্রুত জীবন প্রত্যাশার প্রবণতা দেখে অনেক গবেষক ধারণা করেছিলেন, ২০০০ সালের পর জন্ম নেওয়া বেশিরভাগ মানুষই ১০০ বছর বাঁচতে পারবে। তবে ১৯৯০ সালে ওলশানস্কি ও তার সহকর্মীরা এ বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং দাবি করেন, মানুষের বায়োলজিক্যাল সীমা প্রায় ৮৫ বছর।
সর্বশেষ গবেষণায় ওলশানস্কি ১৯৯০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের নয়টি দীর্ঘজীবী অঞ্চলের জাতীয় পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করেন। হংকং, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, এবং স্পেনের তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, ওই সময়ে জীবন প্রত্যাশার উন্নতি নাটকীয়ভাবে ধীর হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে জীবন প্রত্যাশা আরও কমেছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, দীর্ঘজীবী এলাকাগুলোর মধ্যে ১৯৯০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত গড়ে জীবন প্রত্যাশা মাত্র ৬.৫ বছর বেড়েছে। তাদের মতে, এসব অঞ্চলে সম্প্রতি জন্ম নেওয়া মেয়েদের মাত্র ৫.৩% এবং ছেলেদের মাত্র ১.৮% ১০০ বছর বয়সে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল