২০২২ সালে নারী জাতীয় দলের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সুখকর স্মৃতি এখনো চোখে ভাসে। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফেরার পর সাবিনাদের ঘিরে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। দেখতে দেখতে আরেক সাফ এসে গেল। ১৭ অক্টোবর নেপালের কাঠমান্ডুতে পর্দা উঠবে দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের ফুটবলে সর্বোচ্চ এ আসরের। আজই দেশ ছাড়ছে নারী ফুটবলাররা। ২০ অক্টোবর পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে মিশন শুরু করবে বাংলাদেশ। ২৩ অক্টোবর ভারতের বিপক্ষে গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচ। টার্গেট একটাই শিরোপা ধরে রাখা। তবে যে ছন্দপতন ঘটেছে তাতে সংশয় জেগেছে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হবে কি না? গতবার সাফ খেলতে গেলেও সাবিনাদের সাফল্যের ব্যাপারে অনেকেই আশাবাদী ছিলেন না। ধারণা ছিল ট্রফি জিতবে ভারতের মেয়েরা। সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত করে শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়েছে বাংলার মেয়েরা।
গতবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় এবার ভাবনায় শুধুই শিরোপা। সত্যি বলতে কি গেল দুই বছরে মেয়েদের মনোবলে যে চির ধরেছে তাতে শঙ্কা জেগেছে সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার ব্যাপারে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর নারী জাতীয় দলকে যে গুরুত্ব দেওয়া দরকার ছিল বাফুফে তা পারেনি। এরপর আবার মনোবল ভেঙে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। নারী ফুটবল দলের সাফল্যের মূল কারিগর গোলাম রব্বানী ছোটন হঠাৎ কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। অভিযোগ রয়েছে বাফুফে তাকে যেভাবে মানসিক চাপ ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে চলেছিল তাতেই ছোটন পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এর পেছনে তখনকার টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের দায়িত্বে থাকা পল স্মলির নাকি ইন্ধন ছিল। তিনি নিজেই চেয়েছিলেন নারী দলের কোচ হতে। শেষ পর্যন্ত নিজে না পারলেও পিটার জেমস বাটলারকে বসিয়ে গেছেন। বাটলার কোচ হয়ে মেয়েদের প্রশিক্ষণও করাচ্ছেন। তবে মন থেকে তাকে এখনো মেনে নিতে পারেননি অনেকে। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে এমন কোচের অধীনে প্রস্তুতি নিয়ে সাফে মেয়েরা কতটা জ্বলে উঠতে পারবেন? গতবারের বেশ কজন নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়ের দেখা মিলবে না এবার। রক্ষণভাগে মেয়েদের বেকেন বাওয়ার খ্যাত আঁখি খাতুন অবসর নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন চীনে। মধ্য মাঠে স্বপ্নাও নেই। তারপরও দলের শক্তি কমেনি। বরং আগের চেয়ে বেড়েছে। ২৩ সদস্যের স্কোয়াডে নতুন মুখ ৯ জন। এরা হলেন- ইয়ারা জান, কোহাতি কিসকু, মাতাসুশিমা সুমাইয়া, সাগরিকা, মিলি আক্তার, আফিদা খন্দকার, মুনকি আক্তার, আইরিন আক্তার, শাহেদা আক্তার রিপা। আঁখি ও স্বপ্না ছাড়া দলে নেই মার্জিয়া, সোহাগী, সাজেদা খাতুন, আনুচিং মোগনি, ইতি রানী ও সাথী বিশ্বাস।
নতুন যারা এসেছেন তারা বয়সভিত্তিক ফুটবলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেন। বিশেষ করে সাগরিকা, আফিদা খন্দকার ও রিপার কাছে ভালো কিছু আশা করা যায়। অভিজ্ঞ ও নতুনদের মিলিয়ে বাংলাদেশ ব্যালান্সড দল নিয়ে নেপালে উড়বে। এরপরও স্বস্তির খবর হচ্ছে ইনজুরিতে থাকা কৃষ্ণা রানী সরকার দলে ফিরেছেন। একটা আক্ষেপ নিয়েই নারী জাতীয় দল মাঠে নামবে। তা হলো কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ না খেলা। সানজিদা বলেছেন, ‘প্রস্তুতি ম্যাচ খুবই জরুরি ছিল। এখন হয়নি এ নিয়ে কিছু বলার নেই।’