শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

মোহনীয় মনিরুল

শিল্পী মনিরুল ইসলাম। তিনি বিশেষ খ্যাতিমান ছাপচিত্রের জন্য। এচিংয়ে তিনি এমন একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছেন, যা স্পেনে \'স্কুল অব মনির\' খ্যাতি পেয়েছে। ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তার শিল্পকর্মের একক ও যৌথ প্রদর্শনী হয়েছে। বিশ্বব্যাপী তিনি পরিচালনা করেন চিত্রকর্মশালা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত এই শিল্পী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চিত্র প্রতিযোগিতার জুরি বোর্ডের সদস্য। সত্তর বছর বয়সী চিরসবুজ এই মোহনীয় চিত্রের কারিগর চার দশকের অধিককাল ধরে স্পেনে বাস করছেন। এই গুণী শিল্পীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- শেখ মেহেদী হাসান

মোহনীয় মনিরুল

আপনার ছেলেবেলার কথা জানতে চাই।

আমার জন্ম জামালপুরের ইসলামপুরে। আমাদের পৈতৃকভিটা চাঁদপুর হলেও আমার জন্মের সময় আব্বা জামালপুরের পাবলিক হেলথের পরিদর্শক ছিলেন। তিনি কিশোরগঞ্জে বদলি হলে আমরা সেখানে চলে যাই। কিশোরগঞ্জে কাটিয়েছি আমার শৈশবের দিনগুলো। শৈশবে আমার শিল্পচর্চার সূচনা। না বুঝে ছবি আঁকতাম। আঁকতে ভালো লাগত। ছবি দেখে কপি করতাম। আমি জানতাম না একজন শিল্পীর কাজ কি! আমাদের মধ্যবিত্ত রক্ষণশীল পরিবারে ছবি আঁকা পছন্দ করতেন না। তখন একজন শিল্পী বড়জোড় সিনেমার ব্যানার, সাইনবোর্ড কিংবা রিকশা পেইন্টিং করত। আমি পড়েছি কিশোরগঞ্জ রামানন্দ হাইস্কুলে। ওই স্কুলের হেডমাস্টার জগদীশ চন্দ্র রায়কে সবাই রায় সাহেব বলতেন। চমৎকার রুচিশীল মানুষ। স্যার স্কুলের মাসিক দেয়ালিকার জন্য আমাকে অঙ্গসজ্জা করতে বলেন। আমি দেয়ালিকার অঙ্গসজ্জার বাইরে একটি কার্টুন আঁকি। যা দেখে সবাই ভীষণ খুশি হয়েছিল। হেড স্যার আমাকে বললেন, তুমি ভবিষ্যতে চিত্রশিল্পী হবে। ওই প্রথম শুনলাম শিল্পী হওয়ার কথা। তারপর নিজের উদ্যমে আঁকতে থাকি।

আপনি কি ভেবেছিলেন ভবিষ্যতে চিত্রশিল্পী হবেন?

আমি যে চিত্রশিল্পী হব তার কোনো ধারণা ছিল না। ছবি আঁকতে ভালো লাগত। কিন্তু কোনো ফর্মুলা জানতাম না। কোন ম্যাথডে আঁকলে পরে একটা ছবি শিল্পকর্ম হয় তাও জানতাম না। এসব জেনেছি আর্ট কলেজে এসে, সেখানে প্রথম জানতে পারি ব্রিটিশ ম্যাথডে ছবি আঁকা হয়। অনেক বাধা অতিক্রম করেছি। অনেকেই বলত, শিল্পীরা বহিমিয়ান, ইনডিসিপ্লিন, তারা অর্থকষ্টে থাকে। আমি কোনো কিছু না ভেবে কেবল ছবি আঁকতাম, পড়তাম না। এমনও হয়েছে যে, পরীক্ষার আগের রাতে থিয়েটার দলের উয়িংস করেছি। কিশোরগঞ্জে আমাদের বাসার সঙ্গে রিকশা গ্যারেজ ছিল। ওই গ্যারেজ মালিক আমাকে বললেন, রিকশার বডির পেছনে ছবি আঁকতে হবে। আমি আঁকলাম। তখনো আমি ওয়েল টিউব, ওয়াটার কালারের টিউব দেখিনি।

তখন কি রিকশাচিত্র ছিল?

না। রিকশার পেছনে বডিতে ছবি এঁকে আমি উৎসাহিত হয়েছিলাম। পরে আমি স্পেনে গিয়ে দেখলাম পৃথিবীর শখের বসে ছবি আঁকতে আঁকতে অনেকেই বড় শিল্পী হয়েছেন। স্পেনিশ চিত্রকর এন্টিও তাপিস পেশায় উকিল ছিলেন। ৪২ বছর বয়সে তিনি ছবি অাঁকা শুরু করে বিখ্যাত হয়েছিলেন। এডওয়ার্ড দ্য চিলিদা ছিলেন ফুটবল দলের গোলরক্ষক। একবার খেলতে গিয়ে পা ভাঙার পর তিনি শুরু করেন ভাস্কর্য নির্মাণ। পরে তিনি পৃথিবীর অন্যতম সেরা ভাস্কর হয়েছিলেন। আমারও শৈশবে কোনো শিক্ষক, প্রশিক্ষণ কিছুই ছিল না। ড্রয়িং, প্রপশন কিছুই জানতাম না, কেবল সততা, শ্রম ও নিষ্ঠার জন্য আমি শিল্পী হয়েছি।

আর্ট কলেজে [ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদ] ভর্তি হয়েছিলেন কীভাবে?

আমি তিনবার ম্যাট্রিক ফেল করে চতুর্থবারে পাস করি। সুতরাং এতবার ফেল করা পুত্রের প্রতি পরিবার আস্থা হারিয়ে ফেলে। আব্বা ভেবেছিলেন আমার দ্বারা কিছু হবে না। কিন্তু কি আর করা! অবশেষে আর্ট কলেজে ভর্তির ব্যাপারে তারা রাজি হয়ে আমাকে ঢাকায় পাঠালেন। ১৯৬১-তে আর্ট কলেজে ভর্তি হলাম। মনে পড়ে, আর্ট কলেজের প্রথম দিন আমাকে একটি বাটি ড্রয়িং করতে দেওয়া হয়। এসব ড্রয়িং আমি আগেই পারতাম। আমার ধারণা ছিল, আমি তো শিল্পী হয়েই আর্ট কলেজে ঢুকেছি। তারপর পেন্সিলের কাজ, নেচার স্টাডি, আউটডোর স্টাডির জন্য কঠোর পরিশ্রম করে ছবি আঁকার বিভিন্ন কৌশল আয়ত্ত করি। রায়েরবাজার, কারওয়ান বাজার, সোয়ারিঘাট, বুড়িগঙ্গা, সদরঘাট, পুরান ঢাকা, রমনা পার্কে প্রচুর ছবি আঁকতে হয়েছে। তখন ঢাকা ছিল গ্রাম। কারওয়ান বাজারে ছিল কুমারবাড়ি, জঙ্গল আর বিল। এখন এসবের কিছুই চেনা যায় না।

ওই সময় কোন কোন শিক্ষক দ্বারা আপনি প্রভাবিত হয়েছিলেন।

পৃথিবীর বহু আর্ট কলেজে আমি গিয়েছি কিন্তু আমাদের চারুকলার মতো এত সুন্দর ডিজাইনের বিল্ডিং, প্রাকৃতিক পরিবেশ কোথাও দেখিনি। এর চেয়ে বড় বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা দেখে আমার মনে হয়েছে হাসপাতাল। জয়নুল আবেদিনকে আমরা তেমন পাইনি। তিনি আর্ট কলেজের প্রাতিষ্ঠানিক কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। স্যারের জীবনে অনেক ত্যাগ করে এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন। আমি তখন ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র, তিনি একদিন তার বাসায় ডেকে পাঠালেন। আমি শান্তিনগরে তার বাসায় গেলে তিনি বললেন, 'আমার সঙ্গে ছবি আঁকতে হবে। গাজী স্টিমার কোম্পানি ক্যালেন্ডার করবে।' তার কথা শুনে আমি ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। পরে আমরা ছবি আঁকতে চাঁদপুর যাই। থাকার ব্যবস্থা হয় আইডব্লিউটিএর বাংলোয় আর খাওয়া-দাওয়া আমাদের গ্রামের বাড়ি। প্রথম দিন তিনি আঁকেননি দ্বিতীয় দিন আঁকলেন; কি অসাধারণ তার হাতের পাওয়ার! তিন দিন একসঙ্গে আঁকলাম। ছবিগুলো আমাদের উঠোনের বেড়ায় হেলানো হলো। তিনি ছবি দেখে ঠাট্টা করে বললেন, 'মিয়া কোন ছবি কার!' চমৎকার শিক্ষক ছিলেন কাজী আবদুল বাসেত। তিনি আমাদের আউটডোরে ছবি আঁকতে উৎসাহিত করতেন। মোস্তাফা মনোয়ার স্যারকে পেয়েছি সেকেন্ড ইয়ারে। তিনি খুবই ইন্টারেস্টিং মানুষ। ছাত্রদের সঙ্গে শ্রদ্ধা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরিতে তিনি ছিলেন অনন্য। তিনি জলরঙকে বলতেন কবিতা, অল্পতেই অনেক প্রকাশ, স্বচ্ছতা দরকার ইত্যাদি। তার কাছে সাহস পেয়েছি।

আমরা তো প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নেই।

নেচার থেকে আমাদের রঙ নিতে হবে। নদীর পাশে দাঁড়ালে সারা দিনে বিভিন্ন রূপ দেখা যায়। পৃথিবীর কত রঙ, কত বৈচিত্র্য। বৈচিত্র্যময় আমাদের ষড়ঋতু। এসব থেকে আমরা প্রতিনিয়ত শিখি। প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাডেমিক্যালি প্রশিক্ষণ পাওয়া যায় কিংবা কিছু ব্যাকরণ শেখা যায়। সবচেয়ে বড় শিল্পী হলো শিশুরা। পিকাসোও একই কথা বলেছেন। শিশুদের উৎসাহী অনুসন্ধানী মন, সাহস এবং ব্যাকরণ ছাড়াই সরাসরি ছবি আঁকার প্রবণতা থাকে। বাচ্চারা আবার ভালো বিচারকও বটে। কিন্তু এক পর্যায়ে এসে তাদের দেখার ভঙ্গি নষ্ট হয়ে যায়, সে পারফেকশনে মন দেয়। আট-দশ বছর বয়সের পর তারা সাফার করে। তারা ছবি আঁকে না।

শিক্ষকতা শুরু করেন কবে?

১৯৬৬ সালে। আমাদের ফাইনাল পরীক্ষার পর বন্ধুদের অনেকেই পাকিস্তান টেলিভিশনে তিন থেকে চারশ টাকা বেতনে চাকরিতে যোগদান করে। তখনো আমার রেজাল্ট বের হয়নি। একদিন আবেদিন স্যারের বাসায় গেছি, স্যার বললেন, 'কি করবা মিয়া।' আমি তখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি কি করব। স্যার বললেন, 'আর্ট কলেজেই থাক। যদি চাকরি পাও। যদিও পয়সা কম কিন্তু স্বাধীনভাবে ছবি আঁকতে পারবা।' এর কয়েক দিন পর, উনি আমাকে সঙ্গে নিয়ে আর্ট কলেজে গেলেন। ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসে ঢুকে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন, 'আজ থেইকা উনি আপনাদের নতুন শিক্ষক। আপনি ওদের আন্তরিকভাবে শেখাবেন।' স্যার আমাকে তুমি বলতেন হঠাৎ আপনি করে বলাতে আমি বেশ লজ্জা পেলাম। আমার প্রথম ব্যাচের স্টুডেন্ট ছিলেন শিল্পী চন্দ্রশেখর দে, হাসি চক্রবর্তী, আবুল মনসুর, নাজলী প্রমুখ।

আপনি স্পেনে গিয়েছিলেন কোন বছর, কীভাবে?

১৯৬৯ সালে স্পেন সরকার স্কলারশিপ ঘোষণা করে। দেশে যুদ্ধের ঘনঘটা। পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে স্পেনের কোনো সম্পর্কই ছিল না। শিল্পী রফিকুন নবী একদিন আমাকে বললেন, তুমি যাবা নাকি স্পেনে? আমি বললাম আপনি যান না কেন? উনি বললেন, দেখ না লোকে দুই-তিন বছর ধরে কেবল ফরমই লিখতেছে। ফরম পূরণে দক্ষ খাজা সাহেবের মাধ্যমে আমি অ্যাপ্লিকেশন করলাম। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে কেউ অ্যাপ্লিকেশন করল না। তিন মাস পরে দেখি আমার নমিনেশন লেটার এসে গেছে। সাত দিনের মধ্যে স্পেন যেতে হবে। আমার স্কলারশিপটা ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে স্পেন সরকারের সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচির আওতায় ৯ মাসের। ওই সময় স্পেন যাওয়া-আসা টিকিটের দাম ছিল চার হাজার টাকা। এত টাকা আমার ছিল না। মোনায়েম খান তখন গভর্নর। ওই সময় নুরুল ইসলাম অনু ভাইয়ের যোগাযোগের ফলে টিকিটের ব্যবস্থা হয়। তখন স্পেন আমাদের মতো দরিদ্র দেশ। ফ্রাঙ্কোর স্বৈরশাসন। মানুষ ভাবত আমি যাচ্ছি সাইবেরিয়াতে, অনেক দূরে। আমাদের দেশ থেকে একমাত্র শিল্পী রশিদ চৌধুরী স্পেনে পড়তেন, পরে তিনি প্যারিস চলে যান। আমি স্পেন গেলাম। আমি গিয়েছিলাম মিরর পেইন্টিং করতে। যেটাকে ফ্রেসকো বলে। জানি যে এক বছর পর চলে যাব এ জন্য নতুন কিছু শিখে যাই। ফ্রেসকো খুব প্রিমিটিভ একটা মাধ্যম। এর জন্য মরা চুন, বালু ইত্যাদি দরকার। এখন কেউ ফ্রেসকো করে না। এর পর শুরু করি এচিং। এক পর্যায়ে আমার স্কলারশিপ শেষ হয়ে গেল। দেশে যুদ্ধ চলছে। বিবিসিতে দেশের খবর শুনি। উৎকণ্ঠায় দিন কাটে। দেশে আসার ভাড়া নেই। তারপর তো আমি স্পেনেই থেকে গেলাম। আমার শিল্পকর্ম বিক্রি শুরু হয়েছে। এক সময় আমি স্পেনের বিখ্যাত শিল্পী লরেন্সো ও মানরোর সঙ্গে কাজ করি। স্পেনে যাওয়ার আগে আবেদিন স্যার বলেছিলেন, 'মনির যদি দৌড়াতে হয় তাহলে চ্যাম্পিয়নের পিছে দৌড় দিও, ল্যাংড়ার পেছনের দৌড়াইও না।' তার কথাটি বার বার মনে পড়ত।

স্বাধীনতার সময় আপনি তো বাংলাদেশের জন্য একটি প্রদর্শনী করেছিলেন।

আমার স্কলারশিপ এঙ্টেনশন হয়েছিল কিন্তু ১৯৭১ এর পর পাকিস্তান দূতাবাস স্পেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে আমার স্কলারশিপ বন্ধ করে দেয়। আর তখনই সিদ্ধান্ত নিই, নিজস্ব চিত্রভাষা তৈরি করব। ওই সময় স্পেনে বাঙালি বলতে আমি একা। স্পেন তখনো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। যুদ্ধের পরপরই দেশে একটি ঘূর্ণিঝড় হয়। দুর্গতদের সাহায্যার্থে 'বাংলাদেশ সময়' নামে একটি প্রদর্শনী করি।

শিল্পকলা একাডেমীতে এচিংয়ের ওপর ওয়ার্কশপ করিয়েছিলেন কখন?

ওই সময় সংস্কৃতি মন্ত্রী ছিলেন শামসুল হুদা চৌধুরী। এক সরকারি সফরে তিনি স্পেন গেলে তার সঙ্গে আমার দেখা হয়। আমাকে দেশে ফিরে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। আমি ১০ বছর পর ১৯৭৬ সালে দেশে ফিরি। হুদা সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মাধ্যমে আমার একক প্রদর্শনী ও এচিং নিয়ে কর্মশালার ব্যবস্থা করেন। ওই কর্মশালায় ৪০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ নিয়েছিল। এমনকি শিল্পী কামরুল হাসান, আমিনুল ইসলাম, মোহাম্মদ কিবরিয়াসহ কয়েকজন শিক্ষকও ওই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। এর পর আবারও ওয়ার্কশপ করায়। এখন তো দেশে বেঙ্গল, কসমস ওয়ার্কশপসহ বেশ কিছু স্টুডিও তৈরি হয়েছে। বৈচিত্র্যময় কাজ হচ্ছে।

আপনার নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত 'মনির স্কুল' সম্পর্কে বলুন।

প্রত্যেক শিল্পীর নিজস্ব চিত্রভাষা তৈরি করতে হয়। আমি চেষ্টা করেছি নতুন কিছু করতে। জানি না, চিত্রকলার ক্ষেত্রে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পেরেছি। তবে আমার স্টাইলটা ইউরোপে 'স্কুল অব মনির' নামে পরিচিত।

আপনার ছবিতে প্রচুর জ্যামিতিক বিন্যাস দেখা যায়, কেন।

ছবি তো কোনো লিটারেরি ল্যাঙ্গুয়েজ না যে শব্দ ব্যবহার করে গল্প বলছি। লেখকদের মধ্যেও ভালো-মন্দ আছে। এত খারাপ লেখকও আছে যে, মনে হয় তাকে বলি এত কালি আর কাগজ নষ্ট কর না। আমি, ইনভিজিবল মানে আমার কাজ পুরোপুরি বিমূর্তও না আবার ফিগারিজমও না। আমি কোনো ইজমে যেতে চাই না সেজন্য আমার ছবি কোনো বিশেষ নিয়মে বাঁধা নেই।

আপনার চিত্রকর্মের দর্শন কী।

আমি একই ট্রপিকের ওপর যদি আমার সব ছবি আঁকতাম, একটা নির্দিষ্ট সাবজেক্টের ওপর তখন আমি বলতে পারতাম আমার দর্শন। এখন আমার সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয় নেই যে একটা বিষয় বা চিন্তার ওপর ছবি আঁকছি। সেটা হতে পারে একটা পোর্টফোলিও করলে একটা বিষয় বেছে নিতে পারব। ধর এচিংয়ের ওপর একটা পোর্টফোলিও করলাম, একটা থটের ওপর ছবি আঁকলাম। এখন ছবির দর্শন কি? আমার রিডিং হচ্ছে, একটা ইমেজ হতে পারে বা আমার ইন্টেরিয়র যে থট সেটা যেভাবে আমার থটটাকে এঙ্প্রেস করতে পারি; উইথ লাইন, ড্রইং, পর্ম অথবা যেটা কিন্তু নট ইলাস্ট্রেটেট ওয়ে; আমি ছবিটা কার জন্য আঁকি। ছবি বেশির ভাগ আমার নিজের জন্য অাঁকি। অন্য কারও চাহিদার জন্য নয়।

আমাদের দেশে চিত্রকলা চর্চার গুণগত মান কতখানি বেড়েছে।

আমাদের দেশের তরুণরা অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। তারা চমৎকার কাজ করছে। এশিয়া বিয়েনালসহ বিশ্বের নানা প্রদর্শনীতে তারা যখন পুরস্কার পায় তখন বোঝা যায় আমাদের চিত্রচর্চার গুণগত মান বেড়েছে।

আপনি তো চমৎকার রান্না করেন, এটা আয়ত্ত করলেন কীভাবে?

ছবি আঁকা আমার কাছে যেমন নানা নিরীক্ষার ব্যাপার, রান্নাটাও তা-ই। আমার কাছে রান্না অনেক বড় শিল্প, ছবি আঁকার মতোই সৃজনশীল একটা বিষয়। আমি মনের আনন্দে ছবি আঁকি আবার রান্নাও করি। কাজটা অনেকটা ছবি আঁকার মতো।

 

 

সর্বশেষ খবর