২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১২:৫৬

ভারতে তৈরি কোভিশিল্ড দিয়ে বিপদ সামলেছিল যুক্তরাজ্য, এখন কেন স্বীকৃতি নেই?

অনলাইন ডেস্ক

ভারতে তৈরি কোভিশিল্ড দিয়ে বিপদ সামলেছিল যুক্তরাজ্য, এখন কেন স্বীকৃতি নেই?

সিরামের কর্ণধার আদর পুনাওয়ালা

অক্সফোর্ড ও পুনের সিরাম ইন্সটিটিউটের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধী টিকা কোভিশিল্ডকে প্রতিষেধকের স্বীকৃতি দিতে নারাজ বরিস জনসনের সরকার। নতুন নিয়মে শর্ত রাখা হয়েছে— ভারতে যারা কোভিশিল্ড পেয়েছেন, তাদের যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর পর দশ দিন বাধ্যতামূলক ভাবে বিচ্ছিন্নবাসে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিদের টিকাকরণ হয়নি বলেই ধরে নেবে যুক্তরাজ্য। এ নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে ক্ষোভ জানিয়েছে ভারত সরকার। যুক্তরাজ্য বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে।

বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের যুক্তরাজ্য প্রবেশের প্রশ্নে সম্প্রতি নিয়মে পরিবর্তন করা হয়েছে। ৪ অক্টোবর থেকে চালু হবে ওই নিয়ম। যে বিদেশি নাগরিকেরা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার-বায়োনটেক, মডার্নার দুটি ডোজ বা জনসনের একটি টিকা নিয়েছেন, তাদের ব্রিটেনে প্রবেশের ক্ষেত্রে সমস্যা নেই। কিন্তু কোভিশিল্ড, ৮০ কোটির ভারতবাসীর মধ্যে অন্তত ৭৫ শতাংশকে যে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে, সেই প্রতিষেধককে স্বীকৃতি দিতে নারাজ যুক্তরাজ্য।

যুক্তরাজ্যে ছাড়পত্র পাওয়া অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা সংস্থার তৈরি প্রতিষেধকের শুধু উৎপাদনের দায়িত্বে রয়েছে পুনের সিরাম ইন্সটিটিউট। ফলে যে প্রতিষেধক একবার যুক্তরাজ্যে ছাড়পত্র পেয়েছে অন্য দেশে সেই প্রতিষেধক সম্পর্কে যুক্তরাজ্যেরই ভিন্ন অবস্থান ভারতের বিভিন্ন স্তরে ক্ষোভ বাড়িয়েছে। কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ মনে করছেন, এ সব বর্ণবৈষম্যমূলক মনোভাবের পরিচয়।

ক্ষুব্ধ সিরামের কর্ণধার আদর পুনাওয়ালা। তার কথায়, ‘‘সকলেই জানে দুই প্রতিষেধক অভিন্ন (অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও কোভিশিল্ড)। যা প্রমাণিতও। কোভিশিল্ডকে জরুরি ভিত্তিতে ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য গবেষণা সংক্রান্ত সব তথ্য যুক্তরাজ্যের মেডিসিন অ্যান্ড হেলথ কেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি অথরিটির কাছে জমা দেওয়া রয়েছে। সংস্থা তা খতিয়ে দেখছে।’’

পুনাওয়ালার মতে, ছাড়পত্রের প্রশ্নে দেশগুলির উচিত একটি রেগুলেটরি অথরিটি, পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ক্ষেত্রে একই নিয়ম ও প্রতিষেধকে ছাড়পত্র দেওয়ার প্রশ্নে একই ধরনের শর্ত রাখা। তাহলে ওই সমস্যা হত না বলেই মত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

গত মার্চ মাসে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে যুক্তরাজ্যে যখন বেসামাল অবস্থায়, তখন ২০ লাখ কোভিশিল্ড দিয়ে তাদের সাহায্য করেছিল সিরাম। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, সে সময়ে যুক্তরাজ্যের যে টিকার প্রয়োজন ছিল, আজ তা ব্রাত্য হয় কীভাবে? প্রশ্নের মুখে পড়েছে নরেন্দ্র মোদি সরকারের টিকা নীতিও। দেশের অধিকাংশ মানুষ যে টিকা নিয়েছেন, তা এখনও বিদেশে ছাড়পত্র পায়নি। সেই দায় কার— তা নিয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেস।

অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনটি ইউরেপীয় ইউনিয়নের মেডিসিন রেগুলেটর সংস্থার স্বীকৃতি পেয়েছে। একই ফর্মুলা হলেও আলাদা দেশে তৈরি বলে অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে স্বীকৃতির জন্য আলাদা নামে আবেদন করতে হবে। যা এখনও পর্যন্ত করা হয়নি। ভারতীয় হাই কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, কীভাবে ছাড়পত্র পাওয়া যায়, তা দেখছে তারা। যুক্তরাজ্য সরকারও বলছে, কোভিশিল্ডকে যুক্তরাজ্যের মেডিসিন অ্যান্ড হেলথ কেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি অথরিটির স্বীকৃতি বা ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সির ছাড়পত্র পেতে হবে। এর কোনওটিই নেই কোভিশিল্ডের। তাই কোভিশিল্ডকে স্বীকৃত প্রতিষেধকের মর্যাদা দেয়নি যুক্তরাজ্য। সূত্রের মতে, যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্ত জানার পরেই জনসন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে তদবির করতে সক্রিয় হয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। 

 

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

 

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর