বগুড়া জেলাজুড়ে জলাশয় ও খাল-বিলে চায়না দুয়ারি জাল ব্যবহারে বিপন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ। যত্রতত্র মাছ ধরতে ব্যবহার করা হচ্ছে নিষিদ্ধ এই জাল। মাছের প্রজনন মৌসুমে এই জালে ধরা পড়ছে ডিমওয়ালা মা মাছ। এতে করে বংশ বৃদ্ধিসহ হুমকিতে মিঠা পানির দেশীয় মাছ। এছাড়া জলজ জীবের অস্তিত্ব মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন জলাশয় যেমন-ডোবা, নালা, খাল, বিলে ২৬০ প্রজাতির দেশীয় মাছের মধ্যে ছোট মাছ রয়েছে ১৪৩ প্রজাতির। এসব দেশীয় মাছের মধ্যে ১২ প্রজাতির মাছ চরম বিপন্ন। ২৮টি বিপন্ন এবং ১৪টি সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে।
জানা যায়, বগুড়ার নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়ে একসময় প্রাচুর্য ছিল দেশীয় প্রজাতির মিঠাপানির মাছের। জলবায়ু পরিবর্তন, খাল-বিল ভরাট, অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার, আবাসস্থল ধ্বংসসহ নানা কারণে সেই মাছ বিলুপ্তির পথে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জালের অবাধ ব্যবহার। ফলে দেশি প্রজাতির মাছ এবং জলজ জীবের অস্তিত্ব মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন জলাশয় যেমন-ডোবা, নালা, খাল, বিলে ২৬০ প্রজাতির দেশীয় মাছের মধ্যে ছোট মাছ রয়েছে ১৪৩ প্রজাতির। এসব মাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-মলা, ঢেলা, চেলা, পুঁটি, শিং, মাগুর, পাবদা, গুলশা, কাজলি, বাতাশি, টেংরা, বাচা, টাকি, চেং, কাকিলা, বোটা, ভাংনা, টাটকিনি, বৌ-মাছ, চাপিলা, বাইম, খলিশা, কৈ, বেলে, চান্দা, চিংড়ি। এসব মাছের মধ্যে ১২ প্রজাতির মাছ চরম বিপন্ন। ২৮টি বিপন্ন এবং ১৪টি সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে।
জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট ও শিবগঞ্জ উপজেলার বাঙালি, করতোয়া, গাংনাই, নাগর নদীতে বর্ষার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েই চলেছে চায়না দুয়ারি জালের ব্যবহার। এতে দেশি প্রজাতির মাছ এবং জলজ জীবের অস্তিত্ব মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারির অভাবকেই দুষছেন সাধারণ জনগণ। এদিকে দেশীয় প্রজাতির মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণিকে রক্ষায় এখনই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা এলাকার বাসিন্দা কনক দেব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, লোহার রিংয়ের সঙ্গে মিহি সুতো দিয়ে তৈরি এই জালে আটকা পড়ে শুধু মাছ নয়, শামুক-ঝিনুক, ব্যাঙ, কাঁকড়া, সাপ, কুচিয়াসহ বহু জলজ প্রাণি মারা যাচ্ছে। ফলে মিঠাপানির মাছসহ জীববৈচিত্র্য ভয়াবহ সংকটে পড়েছে।
তিনি আরও জানান, উপজেলার ময়দানহাট্টা ইউনিয়নের বাকসন, পানিতলা, কিচক ইউনিয়নের সিংগারপাড়া, পাতাইর শিবগঞ্জ সদর ইউনিয়নের শ্যামপুর, সাদুল্যাপুর, আলাদীপুর, হুদাবালা, মেদেনিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সচরাচর নদী, খাল-বিলে অন্তত ৩০-৪০টি চায়না দুয়ারি জাল দিনে-রাতে মাছ ধরা হচ্ছে। ৫০-৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই জাল পানির নিচে থাকায় তা সহজে চোখে পড়ে না। তবে অগভীর পানিতে বসানো জাল ও পুঁতে রাখা খুঁটির মাধ্যমে তার উপস্থিতি বোঝা যায়।
শিবগঞ্জের অভিরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (সামাজিক বিজ্ঞান) রবিউল ইসলাম রবি জানান, চায়না দুয়ারি জালের ব্যবহার বন্ধ না করলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। ফলে মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণে মাছের পরিবর্তে বিকল্প খুঁজতে হবে আমাদের।
বিডি প্রতিদিন/এমআই