রংপুরে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখছে পার্চিং পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে পাখিরা দোল খেতে খেতে আরামে পোকা ধরে খায়। ফলে ফসলের ক্ষতি কম হয়।
বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে পার্চিং পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ অঞ্চলে। ফলে কৃষকদের আর্থিক ক্ষতি কমার পাশাপাশি দূষণের হাত থেকে পরিবেশও রক্ষা হচ্ছে। সেই সাথে জীব বৈচিত্র পাচ্ছে নির্মল পরিবেশ।
কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, প্রতিবছর ১০ থেকে ৩০ শতাংশ ফসলের ক্ষতি করে পোকামাকড়। এছাড়া পোকামাকড়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় বাড়ে আরো ১০ শতাংশ। পার্চিং পদ্ধতির ফলে কৃষকরা যেমন ফসলের পোকামাকড় দমন করতে পারছেন তেমনি উৎপাদন ব্যয়ও কমে আসছে। বর্তমানে আমন আবাদের ভরা মৌসুম চলছে। কোথাও কোথাও ধানের বয়স ৪০/৬০ দিন হয়ে গেছে। এই অবস্থায় পোকা দমনে কৃষকরা ব্যবহার করছেন পার্চিং পদ্ধতি। বৃহস্পতিবার সকালে কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের রাজিব গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে কৃষক নজির হোসেন, মোহাম্মদ আলী,ফজল হকসহ অনেকেই জমিতে পার্চিং লাগাতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। তাদের সহয়োগিতা করছেন স্থানীয় উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন। এই চিত্র রংপুর অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি আমন ক্ষেতে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেন, জমিতে উঁচু স্থানে পাখি বসার সুযোগ তৈরি করাই পার্চিং। উঁচু স্থান তৈরি করার ক্ষেত্রে বাঁশের কঞ্চি, গাছের ডালপালা, ধৈঞ্চা গাছ এসব ব্যবহার করা যায়। পার্চিং পোকা দমনের একটি পদ্ধতি। খুবই সহজ, কম খরচ ও পরিবেশবান্ধক পোকা মাকড় দমনের এই পদ্ধতি পোকা ধরে খাওয়ার জন্য পাখিকে বসার জন্য জায়গার ব্যবস্থা করাই মূল উদ্দেশ্য। ফলে কীটনাশকের ব্যবহার কমে যায়।
কৃষিবিদ আবিদ করিম মুন্না বলেন, ফসলের উৎপাদন খরচ কমে। বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশকে দূষণ মুক্ত রাখা যায়। তাছাড়া পার্চিংয়ের মাধ্যমে পোকার বংশবিস্তার কমানো যায়। সহজেই পোকার বসতি ধ্বংস করা যায়। এমনকি পোকার বসতি তৈরি করার সুযোগ নষ্ট করা যায়। এছাড়াও পাখির বিষ্টা জমিতে জৈব পদার্থ যোগ করে জমির উর্ববরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। ফিঙ্গে, শালিক, বুলবুলি, শ্যামা, দোয়েল, সাত ভায়লা এসব পাখিরা পার্চিং এ বসে পোকা ধরে খায়। একটি ফিঙে পাখি সারা দিনে কমপক্ষে ৩০টি করে মাজরা পোকার মথ, ডিম, কীড়া ও পুত্তলী খেয়ে থাকে। একটি পাখির দ্বারা প্রতি মাসে কমপক্ষে ২ লাখ ৭০ হাজার পোকা ধ্বংস করা সম্ভব হয়। পাখিরা মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, চুঙ্গি পোকা, ধানের স্কিপার পোকার মথ ধরে ধরে খায়। লার্ভাগুলোর মধ্যে শিষ কাটা লেদা পোকা, সবুজ শুড় লেদা পোকার কীড়া খায়। খাটো শুড় ঘাস ফড়িং, লম্বা শুড় ঘাস ফড়িং, উড়চুঙ্গা এসব ফড়িং গুলোও খায়।
কৃষি অফিসের মতে দুই ধরনের পার্চিং পদ্ধতি রয়েছে। এর একটি হচ্ছে মৃত পার্চিং (ডেড)। ডেড পার্চিং সাধারণত বাঁশের কঞ্চি, গাছের ডালপালা ইত্যাদি তৈরী করা হয়। অপরটি হচ্ছে জীবন্ত পার্চিং (লাইভ)। এটি ধৈঞ্চা গাছের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। জীবন্ত পার্চিংয়ের ক্ষেত্রে আফ্রিকান ধৈঞ্চা খুবই উপকারি। ধান ফসলে প্রতি ৫ শতকে ১টি করে পার্চিং ব্যবহার করতে হয়। একর প্রতি ১৮ টি থেকে ২০ টি পার্চিং ব্যবহার করা হয়। ফসল রোপনের পরপরই পার্চিং স্থাপন করা হচ্ছে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, রংপুরের ৫ জেলায় এবার পার্চিং পদ্ধতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখের মত। কৃষি অফিসের তথ্য মতে পার্চিং পদ্ধতি লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ পূরণ হয়। বর্তমানে ৪০ থেকে ৫০ ভাগ অর্জিত হয়েছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, পার্চিং পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষকরা বিষমুক্ত পসল পাচ্ছেন। ক্ষতিকারক পোকা দমণ হচ্ছে। এই পদ্ধতি কৃকদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল