রংপুর নগরীর প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত মর্ডান মোড় এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আশপাশ এলাকা শব্দ দূষণ অসহনীয় হয়ে উঠেছে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মোড়কে নীরব এলাকা ঘোষণা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর কয়েক বছর আগে। কিন্তু হাসপাতালের সামনে অঘোষিত আন্তঃজেলা বাস-মিনিবাসের স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। ফলে নীরব এলাকায় এখন চলছে শব্দের হাট বাজার। প্রতিদিন কয়েকশ' বাসের যাত্রী মেডিকেলের মোড়ে ওঠা নামা করছেন। ফলে হাসপাতালের পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে।
এছাড়া নগরীর মর্ডান মোড় হয়ে প্রতিদিন কয়েকশ' বাস ট্রাক দেশের বিভিন্নস্থানে চলাচল করে। এখানে যানবাহন থামানোর নিয়ম না থাকলেও প্রতিদিন এখানে শত শত যানবাহন থামে। যাত্রী উঠানোর জন্য টানা হর্ণ বাজাতে থাকে এসব যানবাহন। ফলে শব্দ দূষণে অনেকে বধির হওয়ার মত অবস্থা হয়েছে। বিষয়টি বছরের পর বছর ধরে চলে অসলে কার্যকর কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।
সম্প্রতি এক কর্মশালায় বলায় হয়, জরিপে উঠে এসেছে রংপুরে সর্বনিম্ন ৪৬ ডিসিবল ও সর্বোচ্চ ১৩০ ডেসিবল শব্দের মাত্রা পাওয়া গেছে। অথচ ২০ ডিসিবল মাত্রায় মানুষ শুনতে পান। মর্ডান মোড় এবং মেডিকেল মোড়ে প্রতিনিয়তই শব্দ দূষণের মাত্রা বাড়ায় হাসপাতালের রোগী, পথচারিসহ সকালেই বিরক্ত। শব্দ মানব দেহে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করছে। প্রকৃতি ও মানুষকে বাঁচাতে পরিবেশ অধিদপ্তর ও ট্রাফিক বিভাগ কাজ করলেও দূষণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, মানুষ সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ ডেসিবেল শব্দে কথা বলে। ৭০ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ মানুষের কান গ্রহণ করতে পারে। ৮০ ডেসিবেলের বেশি গেলেই ক্ষতি শুরু হয়। বর্তমানে মর্ডান ও মেডিকেল মোড়ে শব্দ ৮০ ডেসিবল ছাড়িয়ে গেছে।
জানাগেছে, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-এর ক্ষমতাবলে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ প্রণয়ন করা হয়। বিধিমালার আওতায় নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু এই আইন বাস্তবায়নের কোন পদক্ষেপ নেই।
নগরীর মর্ডান মোড় হয়ে প্রতিদিন পায়রাবন্দে কর্মস্থলে যাতায়াত করেন বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবিদ করিম মুন্না। তিনি বলেন, মর্ডান মোড়ের শব্দ দূষণের ফলে ইদানিং তার কানে সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই পথে নিয়মিত যাতায়াতকারী অনেকেরই শব্দ দূষণের ফলে কানের সমস্যা দেখা দিয়েছে। তিনি শব্দ দূষণরোধে পরিবেশ অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
রংপুর মেট্রোপলিটন ট্রাফিকের ডিসি আব্দুর রশিদ বলেন, শব্দ দূষণরোধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন