বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঝুঁকিতে রয়েছে ২৯ জেলা। এর মধ্যে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ পাঁচ জেলা। এ ছাড়া মাঝারি ঝুঁকিতে রয়েছে ২৪ জেলা। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘সম্প্রীতি যাত্রা’ আয়োজিত ‘মসজিদ, মন্দির, মাজার, আখড়া ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় সম্প্রীতি যাত্রার ডাক এবং আসন্ন দুর্গাপূজায় ঝুঁকি পর্যালোচনা ও করণীয়’ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ তথ্য জানানো হয়।
বক্তব্যে জানানো হয়, উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, রংপুর ও যশোর। মাঝারি ঝুঁকিতে থাকা ২৪ জেলার তালিকায় রয়েছে গাজীপুর, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, কুষ্টিয়া, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী ও নেত্রকোনা। ২০১৪ থেকে ২০২৫ সালের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও মানবাধিকার প্রতিবেদন, পূজা ও অন্যান্য সময়ে পূজামণ্ডপ, শোভাযাত্রার রুট বা সংখ্যালঘুর বাড়িঘরে হামলার ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে এ ঝুঁকি মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মীর হুজাইফা আল মামদূহ জানান, এ দেশের মাটিতে মসজিদের মিনার যেমন দাঁড়িয়ে আছে, তেমন শত শত বছর ধরে পূজামণ্ডপ, মাজার, আখড়া, বাউল আসর ও অন্যান্য আধ্যাত্মিক-সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মানুষের জীবন ও চেতনা আলোকিত করেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দুই দশকের বেশি সময় ধরে সম্প্রীতি বিনষ্টের অপতৎপরতা চলছে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার পরিসর আরও বিস্তৃত হয়েছে। বৈষম্যহীনতার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ২০২৪ সালের গণ আন্দোলনের পরও এ প্রবণতার কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেনি; বরং গুজব, উসকানি ও সহিংসতার পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে মন্দির-মণ্ডপে ভাঙচুর, মাজার ও দরগাহে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট, আখড়া ও বাউল-কাওয়ালি আসরে হামলা, এমনকি মসজিদে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার জেরে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও গোলযোগ সংঘটিত হয়েছে। এসব কেবল বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; এগুলো হলো একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বহিঃপ্রকাশ, যার লক্ষ্য বাংলাদেশের সম্প্রীতির ঐতিহ্য দুর্বল করা। তা ছাড়া এ হামলাগুলো কোনো একক সম্প্রদায়কে লক্ষ করে হয়নি, বরং এগুলো বাংলাদেশের সামগ্রিক সামাজিক সংহতি ও সাংবিধানিক শৃঙ্খলার ওপর আঘাত আনতে করা হয়েছে। সাম্প্রতিক হামলার পর্যালোচনা করে বলা হয়, সম্প্রতি কুমিল্লায় চারটি মাজারে হামলা ঘটেছে। রাজবাড়ীতে এক ব্যক্তির লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে ফেলার মতো পৈশাচিক ঘটনা ঘটেছে।
আরও বলা হয়, গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসেই ৮০টি মাজার ও দরগাহে হামলা হয়েছে। সংখ্যালঘু, সুফি, বাউল এবং আদিবাসী সব ধরনের প্রান্তিক গোষ্ঠী আজ একযোগে ঝুঁকির মুখে। নির্বাচন কেন্দ্র করে বাড়তি শঙ্কার কথা তুলে ধরেন বক্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন কবি ফেরদৌস আরা রুমী, লেখক-গবেষক মাহা মির্জা, বংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, শিল্পী অরূপ রাহী ও বিথী ঘোষ।