স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সারা দেশের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের জন্য উন্মুক্ত ফরমের ঘোষণা দিয়েছে জুলাই বিপ্লবীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতারা এ ঘোষণা দেন।
তারা জানান, অনলাইন ও অফলাইন উভয় মাধ্যমে এনসিপির মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা যাবে। মনোনয়ন জমা দেওয়া যাবে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এরপর প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৫ নভেম্বর। ফরমের মূল্য রাখা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। তবে জুলাই আহত ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার টাকা। আগামী এক সপ্তাহ মনোনয়ন আহ্বান করে দেশব্যাপী বড় ধরনের ক্যাম্পেইন চালানোর ঘোষণা দিয়েছে এনসিপি।
এ ছাড়া এনসিপি ৩০০ আসনে এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রাথমিক ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তবে বিচার ও রাজনৈতিক সংস্কারের শর্তে বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠনের সম্ভাবনাও রেখেছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে রাস্তার সংঘাত বন্ধ করে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ও দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সেক্রেটারি ও দলের সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারাসহ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যান্য নেতারা। তাসনিম জারা বলেন, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি যারা রাজনীতিকে জনগণের সেবা হিসেবে দেখেন, তারা এনসিপির প্রার্থী হতে পারেন। বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি, যেখানে দুর্নীতিবাজ এবং গডফাদারদের প্রাধান্য থাকে, তা ভেঙে দিয়ে জনগণের সত্যিকারের প্রতিনিধি সংসদে পাঠানোর জন্য আমরা দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করছি। তিনি বলেন, আমরা চাই আমাদের সংসদে এমন মানুষ যাবে যারা সত্যিকারের জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে। যারা রাজনীতিকে জনগণের সেবা হিসেবে দেখবে। রাজনীতি কোনো আয় রোজগারের পথ হিসেবে না, কোনো ব্যবসা হিসেবে না বরং জনগণের সেবা করতেই যারা রাজনীতি করতে চায়, তাদের জন্য রাজনীতির পথটা উন্মুক্ত হবে।
তাসনিম জারা বলেন, সাধারণত মনোনয়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর বিদ্যমান যে প্রক্রিয়া সেটি অস্বচ্ছ থাকে। অনেক ধরনের বাণিজ্য চলে। সেই সংস্কৃতি আমরা ভাঙব। একদম স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে যোগ্য মানুষটাকে আমরা মনোনয়ন দেব। তিনভাবে এনসিপির মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা যাবে। প্রথমটা হচ্ছে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এসে সরাসরি ফরম সংগ্রহ ও পূরণ করা যাবে। দ্বিতীয়টা হলো, অনলাইনের মাধ্যমে আমাদের ওয়েবসাইটে গেলে যে কেউ এই ফরমটা পূরণ করতে পারবেন এবং তৃতীয়ত, আমাদের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের দুই মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ এবং আমাদের ১০ জন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আছেন তাদের মাধ্যমে মনোনয়ন জমা দেওয়া যাবে।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি একটি সুন্দর পার্লামেন্ট উপহার দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করছি। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজস্ব কিছু ব্যক্তিকে মানুষের ওপরে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। আমরা এই দুর্বৃত্তায়ন ভাঙতে চাই। আমরা এই টপডাউন সিস্টেম থেকে ডাউন টু টপ সিস্টেমে যেতে চাই। অর্থাৎ সরকার এবং জনগণের মধ্যে যে পার্লামেন্ট রয়েছে, এই পার্লামেন্টে আমরা জনগণের প্রতিনিধি পাঠাতে চাই কোনো দলীয় প্রতিনিধি পাঠাতে চাই না। তিনি বলেন, আমাদের দল থেকে যারা মনোনয়নপত্র তুলবেন এবং ভবিষ্যতে পার্লামেন্টে যাবেন তারা জনগণের প্রতিনিধি হবেন। আমাদের দলের প্রতিনিধি হবেন না।
তিনি আরও বলেন, আপাতত আমাদের সিদ্ধান্ত যে, আমরা ৩০০ আসনে এককভাবে নির্বাচন করব। তবে বর্তমান সংকটকালীন মুহূর্তে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী যদি সংস্কার প্রক্রিয়ায় ঐকমত্যে আসে এবং ভবিষ্যতে বাস্তবায়ন করবে এ মর্মে প্রতিশ্রুতি দেয় তাহলে বিএনপি অথবা জামায়াত যে কারও সঙ্গে আমাদের জোট হতে পারে। কিন্তু বিচার ও সংস্কারের এই প্রাথমিক শর্তের সমাধান না হলে আমরা কারও সঙ্গেই জোটে যাব না।
পাটওয়ারী বলেন, আমরা বলেছি যে, ৩০০ আসনেই দলীয় প্রার্থী দেব। তবে গণ অভ্যুত্থানের নেতাদের সম্মানে কয়েকটি আসন ছেড়ে দেব।