গুম করার অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন এ আইনে গুমের ঘটনাগুলো অভিযোগ গঠনের ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের ৪৭তম বৈঠকে অধ্যাদেশটি অনুমোদন করা হয়। বৈঠকের পর ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করে সভার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি জানান, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় লজিস্টিক নীতির খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে। ২০২৬ সালের সরকারি ছুটির তালিকা অনুমোদন হয়েছে। জাতীয় নগরনীতি নিয়ে আলাপ হলেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
প্রেস সচিব বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের সময় বাংলাদেশে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে গুম হয়েছে। গুমবিষয়ক যে কমিশন করা হয়েছে সেখানে অভিযোগের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। গুম কমিশনের সদস্যরা তাদের রিপোর্টে বারবার বলছেন, গুমের সংখ্যা ৪ হাজারের ওপরে হবে। দেশে শত শত আয়নাঘর ছিল। সেখানে তাদের রাখা হতো। গুমের শিকার কেউ কেউ ফিরে এসেছেন, অনেকে ফেরেননি। বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী এখনো ফিরে আসেননি। এই অধ্যাদেশে গুমকে সংজ্ঞায়নের পাশাপাশি চলমান অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। গোপন আটক কেন্দ্র (আয়নাঘর) স্থাপন ও ব্যবহারকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে গুম-সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই অধ্যাদেশে গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষার লক্ষ্যে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন; অভিযোগ গঠনের ১২০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্নের বাধ্যবাধকতা; ভুক্তভোগী, তথ্য প্রচারকারী ও সাক্ষীর অধিকার সুরক্ষা, ক্ষতিপূরণ ও আইনগত সহায়তার নিশ্চয়তা প্রদানসংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উদ্দেশ্যে তহবিল গঠন ও তথ্যভান্ডার প্রতিষ্ঠার বিধান সংযোজিত হয়েছে। মানবতার বিরুদ্ধে এটা বড় অপরাধ। এই অধ্যাদেশের ফলে বাংলাদেশে আর কেউ গুমের মতো অপরাধে জড়াবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, গুম-সংক্রান্ত্র ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অনুসরণ করে এই অধ্যাদেশটি করা হয়েছে। গত বছরের ২৯ আগস্ট বাংলাদেশ এই কনভেনশনের অংশীদার হয়। এটা বাংলাদেশের একটা ঐতিহাসিক আইন। এর পরে বাংলাদেশে আর কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার এসে দেশে গুমের রাজত্ব চালাতে পারবে না। দেশে আর কোনো আয়নাঘর তৈরি হবে না।
লজিস্টিক নীতিমালা অনুমোদন প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, এর ফলে বাংলাদেশে লজিস্টিক ইস্যুগুলো দ্রুত সমাধান করা যাবে। এতে বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়বে। বৈদেশিক বিনিয়োগ আসবে। বাংলাদেশের রপ্তানির সুযোগসুবিধা ভালো হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটা পণ্য রপ্তানি করতে গেলে চট্টগ্রাম বন্দরেই ১১ দিনের মতো পড়ে থাকতে হয়। শিপমেন্টে দেরি হয়। এই লজিস্টিক নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশে পণ্য পরিবহন দ্রুত করতে পারব। দ্রুত রপ্তানি করতে পারব। তখন বিদেশিরাও বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে বেশি আগ্রহী হবে। প্রেস সচিব জানান, নীতিমালায় পণ্য পরিবহনে মূল দৃষ্টি থাকবে রেলওয়ে ও নৌপথের ওপরে। এ ছাড়া লজিস্টিক ইস্যুগুলো একটা ডিজিটাল ইকোসিস্টেমে আসবে। কাস্টমস ফিস, ডকুমেন্টশন সব ডিজিটালে হবে। রপ্তানিকারকের পণ্য কোথায় আছে তার রিয়েল টাইমে বাংলাদেশে বসে ট্রাকিং করা যাবে। পুরো নীতিমালায় ১১টি অধ্যায় আছে।
এ ছাড়া ২০২৬ সালের সরকারি ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়েছে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, আগামী বছর নির্বাহী আদেশে ও সাধারণ ছুটি মোট ২৮ দিন। শুক্র-শনিবার বাদে প্রকৃত ছুটি ১৭ দিন।