চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, মাদক কারবার এবং অপরাধ আখড়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলছে টার্গেট কিলিং। গত ১৪ মাসে চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ১০০ জন। যদিও চট্টগ্রামের প্রশাসনের দাবি টার্গেট কিলিং রোধে নেওয়া হয়েছে নানান পদক্ষেপ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিগত সময় খুনের সঙ্গে সম্পৃক্তদের।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার আমিনুর রশিদ বলেন, গত কয়েক মাসে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদ্ঘাটন করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে খুনের সঙ্গে সম্পৃক্তদের। উদ্ধার করা হয়েছে খুনে ব্যবহার করা অস্ত্র। চট্টগ্রাম নগরীর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সিএমপির সব ইউনিট।
চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল বলেন, জেলায় যতগুলো খুন হয়েছে প্রায় সব ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হোতাদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতার পট-পরিবর্তনের পর চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে নতুন-পুরোনো অপরাধী চক্রগুলো। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে প্রতিদিনই ঘটছে হামলা ও পাল্টা হামলার মতো ঘটনা। চলছে টার্গেট কিলিং বা ‘গ্যাং ওয়ার’। সর্বশেষ বুধবার বিকালে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হন দুর্ষর্ধ শিবির ক্যাডার সরোয়ার হোসেন বাবলা। এ খুনের জন্য আরেক শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদ এবং সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের নাম উঠে এসেছে। বাবলা খুনের ঘটনাকে টাগের্ট কিলিং হিসেবে আখ্যা দিয়েছে সিএমপি। গত ১৪ মাসে চট্টগ্রাম নগরী এবং জেলায় দেড় শতাধিক খুনের ঘটনা ঘটে। যার মধ্যে প্রায় ১০০টি খুন হয়েছে গ্যাং ওয়ারের জেরে। গত ১৪ মাসে রাউজান উপজেলায় ১৭টি খুনের ঘটনা ঘটে। এ খুনের বেশির ভাগই ছিল অর্থনৈতিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট। এ খুনের ঘটনার নেপথ্যে ছিল চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ, বালুমহালের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা, ইট-বালু-সিমেন্ট সরবারহ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, ভূমি দখল-বেদখল ও মাদকব্যবসার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
একই সময়ে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ এবং বাকলিয়া থানা এলাকায় ২০টির মতো খুনের ঘটনা ঘটে। এ খুনের বেশির ভাগেরই নেপথ্যে ছিল বড় সাজ্জাদ-ছোট সাজ্জাদ জুটি। এ খুনের নেপথ্যে ছিল ঝুটব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি, ডিস-ইন্টারনেট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, ইট-বালু-সিমেন্ট সরবারহ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, বালুমহাল দখল, ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি, মাদকব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, ফুটপাতের চাঁদাবাজি, গাড়ি স্টেশনে চাঁদাবাজি, জায়গা দখল-বেদখলকেন্দ্রিক।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান মৌমিতা পাল বলেন, বর্তমানে সামাজিক অস্থিরতা চলছে। এ অস্থিরতার সুযোগে অপরাধী চক্রগুলো এলাকায় এলাকায় নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের নানান চেষ্টা করছে। এ প্রচেষ্টার অংশই হচ্ছে টার্গেট কিলিং।