দুপুর বেলা। কড়া রোদে ঝলসে যাচ্ছে চোখ। পুরাতন কলা ভবনের দেয়ালে নিবিড় মনে রঙ তুলির আঁচড়ে রঙিন সব চিত্র-কর্ম ফুটিয়ে তুলছে ফুরকান আলী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) চারুকলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সে। গরমে এরই মধ্যে ঘেমে উঠেছে তার পুরো শরীর। কিসের ছবি আঁকছে বললো- ‘এটি একটি ফোক আর্ট। সকাল বেলায় পাখির ডাকে ঘুম ভাঙার ছবি।”
গরমে কষ্ট হচ্ছে কিনা জিজ্ঞেস করতেই হেসে উঠলো ফুরকান। বললো, “মোটেই কষ্ট লাগছে না। বরং সবার সাথে কাজ করতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে। প্রতিবারের পহেলা বৈশাখের মত এবারো আমাদের হাতে তৈরি আনন্দ র্যালির সরঞ্জামাদিগুলো উৎসবের কেন্দ্র বিন্দুতে থাকবে ভেবে অনেক ভালো লাগছে।”
শুধু ফুরকান নয়। আসছে পহেলা বৈশাখ কে মহাসমারোহে বরণ করে নিতে চারুকলা বিভাগের প্রায় অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থীকে দেখা গেল ভীষণ ব্যস্ততায়। কেউ ছবি আঁকছে। কেউ বানাচ্ছে বিশালাকৃতির হাতি-ঘোড়া-মুরগী। কেউবা ব্যস্ত নানা ধরণের রঙিন মুখোশ বানানোর কাজে। কেই বানাচ্ছে মাটির টেপা পুতুল। কারো কারো হাতে তৈরি হচ্ছে কুলা, মাছ ধরার চাঁই, নকশীকাঁথা। একেকটা জিনিস বানানো হয়ে গেলে অতি যত্নে রঙ তুলির নিবিড় আঁচড়ে সেগুলোকে রঙিন করে তুলছে কেউ কেউ।
সবাই ব্যস্ত। বসে নেই বিভাগের শিক্ষকরাও। চারুকলা বিভাগের সভাপতি ও সহকারি অধ্যাপক এম এম ময়েজ উদ্দীন সেরে নিচ্ছেন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বললেন, “আসছে শুক্রবার পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ-১৪২৪। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল বাঙালির উৎসবের দিন। এবারে উৎসবের প্রতিপাদ্য হচ্ছে রবী ঠাকুরের গানের কলি- ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর।’ উৎসবে আমাদের সকলের আনন্দমুখর অংশগ্রহণে উঠে আসবে সত্য সুন্দরের বার্তা। সাম্প্রতিক সময়ের জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় আমাদের সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রেরণা যোগাবে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে।”
শুধু চারুকলা নয়। বর্ষবরণ প্রস্তুতিতে উৎসবমুখর পরিবেশ হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস। ব্যস্ত সময় কাটছে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদেরও। বাংলা, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থীদেরও দেখা গেল বর্ষবরণ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় কাটাতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য বিভাগগুলোতেও চলছে পহেলা বৈশাখের পান্তা-ইলিশের প্রস্তুতি। পরিবার-পরিজন ছেড়ে অনেক দূরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে বন্ধু, ছোট-বড় ভাই-আপু আর শিক্ষকদের সান্নিধ্যে প্রতিবারের মত এবারো একসাথে বাঙালির ঐতিহ্য পান্তা-ইলিশের স্বাদ নিতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে বিভিন্ন বিভাগে। শিক্ষার্থীদের নাচ-গানের প্রস্তুতিতে সারাদিনই সরগরম থাকছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)।
পহেলা বৈশাখের আগের দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার হল চৈত্র-সংক্রান্তি। চৈত্র সংক্রান্তি আর পহেলা বৈশাখ উদযাপনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজন করা হবে বাউল সন্ধ্যা, বর্ণাঢ্য র্যালি, বৈশাখী মেলা আর বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার