ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মাস্টার্স এর ছাত্র নিয়াজ মোস্তাকিম ‘স্মার্ট ইন্টেলিজেন্ট অ্যান্ড ভারসেটাইল হোম সিকিউরিটি সিস্টেম’ উদ্ভাবন করেছেন। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাসা-বাড়ি, ব্যাংক ও অফিসের নিরাপত্তা বজায় রাখতে সক্ষম। এছাড়া বার্তার মাধ্যমে বাসা-বাড়ি ও অফিসের দরজা, লাইট, ফ্যান, এসি, হিটার, কম্পিউটার অন-অফ করতে সক্ষম এই সিন্টেম। এই সিস্টেম অগ্নিসংযোগ, বৃষ্টিপাত, ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় অডিও কল, ক্ষুদে বার্তা, ফেসবুক পোস্ট দিয়ে মালিকের কাছে বার্তা পৌঁছাতেও সক্ষম।
নিয়াজ মোস্তাকিম দীর্ঘ দুই বছর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খালিদ হোসেন জুয়েল ও অধ্যাপক খলিলুর রহমান এর তত্ত্বাবধায়নে গবেষণার পর এই সিস্টেম উদ্ভাবন করেন। রবিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস কর্নারে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই উদ্ভাবনের কার্যকারিতা তুলে ধরেন তারা।
তারা সাংবাদিকদের জানান, আধুনিক সিকিউরিটি ও সব সুযোগ-সুবিধার সমন্বয়ে ‘স্মার্ট ইন্টেলিজেন্ট হোম’ এর বাউন্ডারি লাইনে একটা কী-প্যাড আন লক সিকুউরিটি গেইট সিস্টেম আছে। কী-প্যাড এর মাধ্যমে পাসওয়ার্ড দিয়ে খুলতে হবে। এর সামনে একটা ডিসপ্লে আছে এবং ইনডিকেটর লাইট আছে। যদি গেইটটি আন লকড হয় তবে ডিসপ্লে ও লাইট এ সংকেত দিবে। বাউন্ডারি লাইনে একটি কলিং বেল আছে, যা প্রেস করা মাত্রই ক্যামেরা চালু হবে এবং ভিডিও রেকর্ডিং শুরু হবে, এটি বাড়ির মনিটরে দেখা যাবে। যদি পরিচিত কেউ হয়, তবে বাড়ির মালিক এনড্রয়েট এপ্লিকেশন এর মাধ্যমে ভিতর থেকে বাড়ির দরজা খুলে দিতে পারবে। বাউন্ডারি লাইনের সামনে কেউ ঘুরাফিরা করলেও সেন্সর তা সনাক্ত করে অন্য একটি ক্যামেরা চালু করে দিবে যা অটোমেটিক ভিডিও রেকর্ড করবে।
সন্ধ্যায় বাড়িটির বাউন্ডারি লাইট অটোমেটিক চালু হবে এবং সকালে তা বন্ধ হবে। এটি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে একটা ডিজিটাল ঘড়ির সময় অনুযায়ী। বাড়ির মেইন গেইটে সিকিউরিটি হিসেবে ফিংগার প্রিন্ট সেন্সর লাগানো আছে। এটি বিশটি ফিংগার প্রিন্ট নমুনা মেমোরিতে জমা রাখতে পারে। শুধুমাত্র ফিংগার প্রিন্ট মিললেই গেইট খুলবে এবং কিছু সময় পর তা বন্ধ হয়ে যাবে।
বাড়ির এই গেইটে হিউম্যান কাউন্টার আছে যা ডিসপ্লেতে দেখাবে কতজন ভিতরে আছে। কেউ ভিতরে প্রবেশ করলেই ওই কক্ষের লাইট অটোমেটিক অন হবে এবং ভিতরে কে আছে তা পরিষ্কার দেখা যাবে। এখানে দুইটি পিআইআর মোশন সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ জায়গার মনিটর করবে। এই সেন্সর কিছু সনাক্ত করলে বাড়ির মালিকের স্কাইপি একাউন্ট এ ভিডিও কলিং শুরু হবে। এছাড়া রান্নাঘর এর সিকিউরিটি হিসেবে শিখা সেন্সর, গ্যাস সেন্সর এবং স্মোক সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে। কখনও ফ্লেম সেন্সর বাড়িতে আগুন লাগা সনাক্ত করলে ফায়ার সার্ভিসকে মেসেজ দিয়ে বাড়ির ঠিকানা জানাবে। গ্যাস সেন্সর গ্যাস বিস্ফোরণ সনাক্ত করলে বাড়ির মালিককে অডিও কল এর মাধ্যমে জানাবে, স্মোক সেন্সর স্মোক সনাক্ত করলে বাড়ির মালিককে মেসেজ দিয়ে জানাবে। এখানে তাপমাত্রা মাপার জন্য একটা সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে, যার তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রির উপরে গেলে মালিকের ফেসবুকে অটোমেটিক ডিভাইসটি পোস্ট দিয়ে জানাবে। ভূমিকম্পের সংকেত বোঝার জন্য একটা সেন্সর ব্যবহার করা আছে, যা ভাইব্রেশন হলেই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানাবে।
বাড়ির ছাদে ওয়াটার সেন্সর লাগানো আছে। বৃষ্টির পানি হলে তা বাড়ির জানালাগুলো অটোমেটিক বন্ধ করে দিবে। বাড়ির ভিতর কেউ বিপদে পড়লে ইমারজেন্সি বেল আছে যা দিয়ে প্রতিবেশীকে ডাকা যাবে। এখানে প্রতিবন্ধীদের জন্য একটা সাউন্ড সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে যেখানে যেকোন সাউন্ড এর মাধ্যমে কাউকে ডাকতে পারবে। দূর থেকে বাড়ির মধ্যের কোন ডিভাইস কন্ট্রোল করার জন্য জিএসএম মডিউল ব্যবহার করা হয়েছে, যার মাধ্যমে যেকোন জায়গা থেকে বাড়ির মালিক বাড়ির হিটার, ফ্যান, এয়ার কন্ডিশনার অফ বা অন করতে পারবে। অন বা অফ হওয়ার পর তা মেসেজ দিয়ে মালিককে জানাবে।
বাড়ির স্টোর রুমে একটা মেসেজ কন্ট্রোলড লকার আছে, যা মেসেজ দিয়ে অন অফ করা যাবে। এই স্টোর রুমের সিকিউরিটি হিসেবে এর সামনে আইআর সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে। এর সামনে কেউ আসলে সঙ্গে সঙ্গে তার ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করবে, যা থেকে মালিক তাকে সনাক্ত করতে পারবে। দূরে থেকেও মালিক তার বাড়িটিকে রক্ষা করতে পারবে তার প্রতিবেশীকে জানানোর মাধ্যমে।
ব্লুটুথ ও এন্ড্রোয়েট অ্যাপস এর মাধ্যমে বেডরুম লাইট, বাথরুম লাইট, কম্পিউটার অন অফ করা যাবে। টেম্পারেচার বেড়ে গেলে তা কমানোর জন্য ফ্যান, লাইট অটোমেটিক অন হবে। এছাড়া ব্লুটুথ ও এন্ড্রোয়েট অ্যাপস এর মাধ্যমে বাড়ির ভিতর থেকে বাহিরে কত দূরে কেউ আছে তাও দেখা যাবে এই সিস্টেম ব্যবহার করে।
এবিষয়ে নিয়াজ মোস্তাকিম জানান, ‘আমার দীর্ঘ দুই বছরের গবেষণার ফসল এটি। এটি আরো দ্রুত করা সম্ভব ছিলো। কিন্তু নিজের খরচে তৈরি করতে সময় বেশি লেগেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ যদি আর্থিক বিষয়ে সাপোর্ট দেয় তাহলে আমরা আরো ভালো কিছু করতে পারব বলে আশা করছি।’
নিয়াজ মোস্তাকিমের উদ্ভাবিত স্মার্ট ইন্টেলিজেন্ট হোম সিকিউরিটি সিস্টেমের নমুনা বাড়িটি তৈরিতে ওই শিক্ষার্থীর খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। তবে বাসা বাড়ি কিংবা অফিসের সিকিউরিটি সিস্টেম স্থাপনে খরচ হবে ৫০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে এই সিস্টেমটি ক্যাম্পাসে দারুন আলোড়ন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এই গবেষণাটির তত্তাবধায়ক বিভাগীয় সহযোগী অধ্যাপক খালিদ হোসেন জুয়েল ও অধ্যাপক খলিলুর রহমান আশা প্রকাশ করেছেন যে ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল রুপায়নের জন্য এই সিস্টেমটি একটি মাইলফলক হতে পারে।
বিডি-প্রতিদিন/০২ মে, ২০১৭/মাহবুব