মেহেজেবেন শামসি মিম। বাড়ি জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায়। মোহাম্মদ আলী ও শিউলি বেগমের বড় মেয়ে তিনি। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হয়ে গ্রামের অসহায় দরিদ্র মানুষের সেবা করবেন। স্বপ্ন পূরণে সঠিক পথেই ছিলেন তিনি। কোচিং বা প্রাইভেট ছাড়াই উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরেয়ে ভর্তি হয়েছিলেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে। বর্তমানে সেই কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী অধ্যায়নরত আছেন তিনি।
মেয়ের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে বাবা মোহাম্মদ আলী নিজের সামান্য জমিটুকু বিক্রির পাশাপাশি দিনমজুরিও করেছেন। কিন্তু তিনি নিজেই ছিলেন হৃদরোগী। দরিদ্রতার কারণে ভালোমতো চিকিৎসাও জোটেনি তার ভাগ্যে। গত ১১ জুন মোহাম্মদ আলী দুনিয়া ছেড়ে পরপারে চলে যান। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে মিমের পরিবারে।
মিম আর তৃতীয় শ্রেণিপড়ুয়া ছোট মেয়ে মেহেরুজ্জাহান সিমিকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মা শিউলি বেগম। কিভাবে সংসার চলবে আর কিভাবেই বা মেয়েদের পড়ালেখা হবে এসব চিন্তায় ভেঙে পড়েছেন তিনি।
গত ৩০ আগস্ট একটি দৈনিকে মিমকে নিয়ে ‘মাঝপথেই থেমে যাচ্ছে মেধাবী মিমের পড়ালেখা’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি নজরে আসলে মিমের মা শিউলি বেগমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে মিমের পড়ালেখার খরচ ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন জয়পুরহাটের সন্তান ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাহফুজুর রহমান এহসান।
এছাড়া গত ৩১ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মিমকে নিয়ে একটি পোস্ট দেন ও মিমের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে আহ্বান জানান ছাত্রলীগ নেতা এহসান।
এ ব্যাপারে রাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাহফুজুর রহমান এহসান বলেন, অর্থাভাবে একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর পড়ালেখা বন্ধ হতে বসেছে-বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক মিমের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই। এ বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর জয়পুরহাটের অনেক রাজনৈতিক নেতা ও গণ্যমান্য ব্যক্তি মিমের পাশে দাঁড়াতে সহযোগিতার হাত বাড়াতে চাচ্ছেন, পড়ালেখার খরচ চালানোর আশ্বাস দিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, মিম অত্যন্ত মেধাবী একজন ছাত্রী। আমরা সামান্য সহযোগিতার হাত বাড়ালে তার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে। মেধাবী মিম জয়পুরহাট তথা দেশের একজন সম্পদে পরিণত হবে।
এ ব্যাপারে মিমের মা শিউলি বেগম বলেন, মিমের বাবার মৃত্যুর পর থেকে অনেক অর্থকষ্টে দিন পার করছি। দুই মেয়ের পড়ালেখা করানো নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা এহসান আমাদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন, মিমের পড়ালেখার খরচের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলেছেন। আশ্বাস পেয়ে স্বস্তিতে কিছুটা নিঃশ্বাস ফেলতে পারছি।
প্রসঙ্গত, এর আগে সুযোগ পেয়েও অর্থের অভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারা মেধাবী শিক্ষার্থী ফরিদুল ইসলামের পাশে দাঁড়িয়ে তার ভর্তির ব্যবস্থা করে দেওয়া, স্কুলের বারান্দায় রাত কাটানো শিক্ষক মাজাহার হোসেনকে তার সন্তানদের কাছে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা, ছিন্নমূল-পথশিশুদের নিয়ে জন্মদিন পালন করা, বিপদে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকাসহ বিভিন্ন ভালো কাজ করে বিভিন্ন সময় আলোচিত হয়েছেন রাবি ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজুর রহমান এহসান।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম