হাসি-কান্না আর আনন্দ-বেদনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকরো টুকরো অজস্র মুহূর্তের সম্মিলিত স্মৃতিচারণ। স্বয়ং রাষ্ট্রপতির হাত থেকে অর্জিত বিদ্যার স্বীকৃতি। কালো গাউন। চারকোণা কালো টুপিটিকে আকাশপাণে ছুঁড়ে দিয়ে আকাশ ছোঁয়ার প্রত্যাশা। এ সব কিছুই যেন ভেসে উঠে সমাবর্তনের দিনটিকে ঘিরে। যে দিনটিকে মনের গভীরে ধারণ করেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও মাত্র পাঁচবার সমাবর্তন হয়েছে দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি)। হতাশাব্যাঞ্জক হলেও এটিই বিশ্ববিদ্যালয়টির বাস্তব অবস্থা।
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মানকে নির্দেশ করে সমাবর্তন অনুষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা জীবন শেষ করে প্রতিটি শিক্ষার্থী অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে সমাবর্তনের দিনটির জন্য। এদিন স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল বা পিএইচডি সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীরা সনদ গ্রহণ করেন স্বয়ং রাষ্ট্রপতির হাত থেকে। যা তাদের পরবর্তী জীবনের জন্য একটি মাইলফলক ও প্রেরণাময় দিন হিসেবে কাজ করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৭ সালে। প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ২৬ বছর পর। এরপর ২০০১ সালে দ্বিতীয়, ২০০৬ সালে তৃতীয়, ২০১০ সালে চতুর্থ এবং ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত হয় সর্বশেষ সমাবর্তন। ২০১৫ সালের সমাবর্তনে সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম আবর্তনের কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পেরেছিল। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৪০ থেকে ৪৩তম আবর্তনের ৪টি ব্যাচের প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী তাদের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শেষ করে ৬ষ্ঠ সমাবর্তনের অপেক্ষায় আছেন।
অথচ রাজধানীতেই জাবির প্রতিবেশী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৫০টি সমাবর্তন। আগামী ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে তাদের ৫১তম সমাবর্তন। ৪৮ বছরে মাত্র ৫টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে হতাশা এবং দুঃখ প্রকাশ করেন জাবির অনেক শিক্ষার্থী। এ সময় তারা নির্দিষ্ট একটি সময় পর পর নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজনেরও দাবি জানান।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো জুয়েল রানা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্যই এটি একটি স্বপ্নের দিন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি অনিয়মত হওয়ার কারণে অনেক শিক্ষার্থী সমাবর্তন ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে বাধ্য হয়। যার জন্য প্রতিটি শিক্ষার্থীর মনের মধ্যেই শিক্ষাজীবনের একটা অপূর্ণতা কাজ করে। নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজনের জন্য শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আরো আন্তরিক হবার আহ্বান জানাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৩তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সফিউল আলম প্রধান বলেন, নিয়মিত সমাবর্তন হলে একাডেমিক ক্যালেন্ডারের প্রতি ছাত্র-শিক্ষকরা সচেতন থাকে। সেশনজট কমে আসে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গতিশীলতা বাড়ে। তাছাড়া সদ্য স্নাতক শেষ করা শিক্ষার্থীর মানসিক প্রশান্তি এবং কর্মস্পৃহাও বৃদ্ধি পায়।
৪৩তম আবর্তনের আরেক শিক্ষার্থী আইন ও বিচার বিভাগের ছাত্র খান মুনতাসির আরমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রশাসনের সদিচ্ছা আর রাজনেতিক সীমাবদ্ধতাই নিয়মিত সমাবর্তন না হওয়ার কারণ। তবে নির্দিষ্ট একটা সময় পর পর এটি আয়োজন করার পরিকল্পনা প্রশাসনের থাকা উচিত। একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর এটি অনুষ্ঠিত হলে তখন এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতিতে পরিণত হবে।ৎৎ
সমাবর্তনের বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তবে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
পরে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলমকে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, সমাবর্তন নিয়ে এখনো আমাদের কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। তবে শীঘ্রই যাতে এটি আয়োজন করা যায় সে জন্য আমরা চেষ্টা করবো।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা