দেশের ছাত্ররাজনীতির আঁতুড়ঘর খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বুধবার বসেছিল ছাত্রনেতাদের মিলনমেলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পাশাপাশি টেবিলে বসেছিলেন ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও বামধারার ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃবৃন্দ।
পরে দুপুরে সেখানে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগ ও প্রায় ৯ বছর পর মধুতে বসা ছাত্রদল। এতে ছাত্রদল মধুর ক্যান্টিনে আসার মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে ইতিবাচক রাজনীতির নতুন যাত্রা শুরু হলো বলে দাবি করে সংগঠনটি। অন্যদিকে ইতিবাচক রাজনীতি করলে ছাত্রদলকে সহযোগিতার আশ্বাস দেয় ছাত্রলীগ।
এর আগে প্রায় ৯ বছর পর ক্যাম্পাসে আসে ছাত্রদল। সকাল ১১টার দিকে সংগঠনটির ঢাবি শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকী ৮-১০ জন নেতা-কর্মীসহ মধুর ক্যান্টিনে আসেন। সেখানে আগে থেকেই বসে ছিলেন ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। তার সাথে কুশল বিনিময়ের পর ছাত্রদল নেতারা পাশের একটি টেবিলে একত্রে বসেন।
একই সময় পাশের টেবিলে বসেছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, ঢাবি শাখার সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব দাস।
এরপরই একে একে মধুর ক্যান্টিনে আসতে থাকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হোসেনসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাবির বিভিন্ন হল শাখার অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। ঢাবি ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল শাখার নেতা-কর্মীরাও মিছিল নিয়ে আসতে থাকেন মধুর ক্যান্টিনে।
এসময় স্লোগানে স্লোগানে মূখরিত হয় চারদিক। এসময় ছাত্রদল নেতাদেরও বেশ উৎফুল্ল মেজাজে দেখা যায়। তবে স্লোগান দেওয়া নিয়ে সামান্য উত্তেজনার সৃষ্টি হলে সাদ্দাম হোসেনের হস্তক্ষেপে তা স্বাভাবিক হয়।
পরে, দুপুর ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রদল। এতে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের আসার বিষয়ে সহযোগিতার জন্য প্রশাসন ও ছাত্রসংগঠনগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান বলেন, ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে যে ইতিবাচক রাজনীতির সূচনা হয়েছে, আমি মনে করি আজ তার নতুন যাত্রা শুরু হলো। এখন থেকে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে নিয়মিত রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ৭ দফা দাবি দিয়েছিলাম। প্রথম দাবিটি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হলে ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত করা। এছাড়াও ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে যে সব অগণতান্ত্রিক ও সংবিধানবিরোধী ধারা যুক্ত আছে তা বিলুপ্ত করতে হবে। তার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমরা ৯ বছর পর ক্যাম্পাসে এসেছি। আমরা আমাদের অধিকার ফেরত চাই। আমরা দাবি জানিয়েছি ন্যূনতম তিন মাস সহাবস্থান নিশ্চিত করতে। এর পরই ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত হবে। সহাবস্থানের বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ক্যাম্পাসে নির্বাচনের পরিবেশ সন্তোষজনক কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিন মাস সহাবস্থান নিশ্চিতের পরই বোঝা যাবে পরিবেশ নিশ্চিত হয়েছে।
দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপশি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হোসেন বলেন, আমরা বিষয়টি ইতিবাচকভাবে ভাবতে চাই। ভোটার তালিকায় থাকা নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল দেওয়া হবে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। সম্মেলন শেষে সাড়ে ১২টার দিকে মধুর ক্যান্টিন ত্যাগ করেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
অন্যদিকে, ছাত্রদল যাওয়ার পর সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগ। এতে বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। তিনি বলেন, ছাত্রদল মধুর ক্যান্টিনে এসেছে, আমি তাদের স্বাগত জানাই। আমরা আসলে কাউকে কোনো দিন বাধা দিইনি এই তার প্রমাণ। ছাত্রদল এতদিন মধুতে আসেনি কিন্তু তারা আমাদের দোষারোপ করছিল। আজ তারা বুঝতে পেরেছে, ছাত্রলীগ কারো প্রতিবন্ধকতা নয়। সাধারণ ছাত্রদের শিক্ষার পরিবেশ স্থিতিশীল রেখে রাজনীতি করলে ছাত্রলীগ তাদের সহযোগিতা করবে বলে জানান তিনি।
ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে দাবি করে শোভন বলেন, এখন আমাদের সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে এবং আগামীর বাংলাদেশে নেতৃত্ব দিতে হবে। ছাত্রলীগের প্যানেল গঠনের ব্যাপারে তিনি বলেন, আগামী ২৫/২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমরা আমাদের প্যানেল ঠিক করবো।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম