২৩ জুন, ২০১৯ ২১:২৪

'আমার জীবন ও জীবিকার মধ্যে কোন ফারাক দেখতে পাইনি'

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

'আমার জীবন ও জীবিকার মধ্যে কোন ফারাক দেখতে পাইনি'

‘আমার জীবন ও জীবিকার মধ্যে কোন ফারাক দেখতে পাইনি। কারণ, আমার শিক্ষকতা সেটাও সাহিত্যের, আর আমার লেখা তাও সাহিত্য। এই দু’য়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। লেখাই আমার কাজ। আমার জীবন এবং জীবিকা এক জায়গায় মেলাতে পেরেছি।’

কথাগুলো বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। রবিবার ছিল দেশের খ্যাতনামা এই লেখক, প্রাবন্ধিক এবং শিক্ষকের ৮৪তম জন্মদিন। এই উপলক্ষে রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নিজের জীবন নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। 

যৌবন ছাড়িয়ে বার্ধক্যে পা দেওয়া এই মানুষটিকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টি, জাতীয় গণফ্রন্ট, সমাজতান্ত্রিক বুদ্ধিজীবী সংঘ, সাওল হার্ট ভৌত, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ইউনিয়ন প্রভৃতির নেতৃবৃন্দসহ তার অসংখ্য গুণগ্রাহী।   

শুভেচ্ছার জবাবে নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, জীবন ও জীবিকা আলাদা করা যায় এবং আলাদা করা হয়েছেও। আমি ছোট বয়সে কোলরিজের একটি উক্তি পড়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘মানুষের মধ্যে ট্যালেন্ট এবং জিনিয়াস দুটোই থাকে। একই মানুষের মধ্যে দুটোই থাকে। জিনিয়াস হলো বড় আর ট্যালেন্ট হলো ছোট। আমি আমার জিনিয়াসকে দিয়েছি আমার জীবনকে আর ট্যালেন্টকে দিয়েছি আমার জীবিকাকে।’ আমার জিনিয়াস থাকার প্রশ্নই নাই, কিন্তু ট্যালেন্ট যদি থেকে থাকে তা আমার জীবন ও জীবিকা দুটোকে দিয়েছি। সাহিত্য আমার শিক্ষকতা এবং লেখার বিষয়। জীবন ও জীবিকার উৎস।

এই লেখার শক্তির উৎস সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের সমাজ খুবই অন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত।ছোটবেলা থেকে আমি দরিদ্র দেখেছি। দরিদ্রের কারণে আত্মহত্যা করতে দেখেছি। সেটা স্বাধীনতাপূর্বের সময়কার কথা। কিন্ত স্বাধীনতার পর এই দেশে আত্মহত্যার ঘটনা দেখেছি। ছোট বেলায় আত্মহত্যাকারীর ঝুলন্ত লাশ দেখে তার মৃত্যুর কারণ বুঝতে পারিনি। কিন্তু জীবনের একটা সময় এসে সেই মৃত্যুর কারণ আমি বুঝতে পারি। 

মার্কসবাদী এই লেখক মনে করেন, সম্পদের ব্যক্তি মালিকানাই সমাজের দুরবস্থার জন্য দায়ী। তাই সমাজে সম্পদের ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মার্কসবাদী সমাজতন্ত্রের ভবিষ্যত নিয়ে তিনি বলেন, সমাজতন্ত্র তো বর্তমানের জন্য নয়, সমাজতন্ত্র ভবিষ্যতের জন্য। বর্তমানে পুঁজিবাদের ক্রান্তিকাল যাচ্ছে। কারণ বিশ্বজুড়ে মানুষ নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। তাই পুঁজিবাদের ধ্বংস থেকেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে সম্পত্তির ব্যক্তি মালিকানা। তবে এজন্য বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তাকে তিনি অস্বীকার করেননি। 

বর্তমান সমাজে অন্যান্য সমাজব্যবস্থা ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব কমিয়ে আনার উপায় সম্পর্কে অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের আলোচনা হবে দ্বন্দ্বমূলক। আমরা ভাববো না, আমরা যা ভাবি তাই শতভাগ সঠিক। বরং যা ভাবি তার ৬০ ভাগ সত্য এবং ৪০ ভাগ সত্য নয়। এটার মধ্যে যা ভালো তা গ্রহণ করতে হবে। সমালোচনা থাকবেই। কিন্তু সমালোচনা হবে সৃষ্টিশীল। তবে সময়ের ব্যবধানে সমাজের অনেক ধারণাই পরিবর্তিত হয়েছে। তাই সময়কে নিজের জীবনে বেঁধে রাখতে জীবনী লেখার তাড়নাও বোধ করেন এই বুদ্ধিজীবী। 

অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুল, নটরডেম কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইংরেজি সাহিত্যে উচ্চতর গবেষণা করেছেন যুক্তরাজ্যের লিডস্ এবং লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে। তিনি ‘নতুন দিগন্ত’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।

বিডি-প্রতিদিন/২৩ জুন, ২০১৯/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর