ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকট আকার ধারণ করা সমস্যাগুলোর মধ্যে আবাসন সংকট অন্যতম। বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও তা শুধু মুখের কথাতেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। এবার এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে আবাসন সংকট ও গণরুম সমস্যা সমাধানে প্রশাসন দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ না নিলে গণরুমের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত একটি ছাত্র সমাবেশে এমন ঘোষণা দেন সৈকত। এ সময় শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত না করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণের নিন্দাও জানান তিনি।
সমাবেশে গণরুম সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সৈকত বলেন, ‘আপনি যদি গণরুম সমস্যা সমাধানের জন্য আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করেন, তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যত গণরুমবাসী শিক্ষার্থী আছে, তারা সবাই গিয়ে আপনার বাসায় উঠবো। এই ঘোষণার কোন হেরফের হবে না।’
গণরুমকে একটি কৃত্রিম সংকট আখ্যা দিয়ে ডাকসুতে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত এই ছাত্রনেতা বলেন, প্রান্তিক অঞ্চল থেকে আসা ছাত্রদের একমাত্র ঠিকানা হিসেবে গণরুমেই উঠতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিশ্চুপ থাকায় যে দলই ক্ষমতায় থাকুক, কিছু অসাধু রাজনীতিবিদ এর ফায়দা লুটে। লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির কারণে গণরুম দাসত্বের কারখানায় পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীই মূল্যবান। কাউকেই দাসে পরিণত করতে পারবেন না।
বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান এক হাজারের নিচে হওয়ার পিছনে গণরুম সমস্যাকে দায়ী করেন ডাকসুর এই সদস্য। সমস্যা সমাধানে ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সৈকত। তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনের সময় শিক্ষার্থীরা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা আস্তে আস্তে নিভে যাচ্ছে। কারণ, কেউই ছাত্রদের কথা বলছে না। সবাই ব্যক্তি রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। এটা আমাদের সবার দাবি, সবাই একজোট হয়েই মাঠে নামতে হবে।
সমাবেশে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদপ্রার্থী কানেতা ইয়ালামলামসহ বিভিন্ন হলের গণরুমে থাকা অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষার্থীরা গণরুম সমস্যার সমাধান করে নবীন শিক্ষার্থীদের ভর্তি করার আহ্বান জানান। এ সময় তারা ‘আমরা এখন চুপষে গেছি, জ্ঞানশূন্য কালো মাছি’, ‘গণরুমের বঞ্চনা, মানি না মানবো না’, ‘প্রথম বর্ষ থেকে বৈধ সিটের অধিকার চাই’ ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
প্রসঙ্গত, গত ৩ সেপ্টেম্বর সাময়িকভাবে গণরুম সমস্যা সমাধানে উপাচার্যের কাছে কয়েকটি প্রস্তাব সংবলিত একটি স্মারকলিপি উপাচার্যের কাছে দিয়েছিলেন সৈকত। কিন্তু এরপরও সমস্যা সমাধানে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এর প্রতিবাদে নিজের সিট ছেড়ে দিয়ে গণরুমে থাকছেন এই ছাত্রনেতা।
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব