টানা ৮ দিনের ভর্তি পরীক্ষা শেষের রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে কাল থেকে মাঠে নামছে উপাচার্যপন্থী শিক্ষকরা। অন্যদিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে আগামীকাল ও বৃহস্পতিবার দুই দিন সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করবে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’।
আজ মঙ্গলবার টানা ৮ম দিনের কর্মসূচিতে উপাচার্যকে লাল কার্ড প্রদর্শন ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে গড়ে উঠা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত সংগঠন ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’। দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এই কর্মসূচি পালিত হয়। সমাবেশ থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে সর্বাত্মক ধর্মঘট কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। ধর্মঘটের অংশ হিসেবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করা হবে বলে জানান তারা। ফলে সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ এ সময় প্রতিহত করা হবে। তবে ধর্মঘটের দুই দিন যেসব বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষা রয়েছে তা অব্যাহত থাকবে।
এদিকে, আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্যপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন হিসেবে পরিচিত ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’ও দুই দিনের পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বর্তমান উপাচার্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগকারী ও চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের শাস্তির দাবিতে আগামীকাল সকাল ১১টায় শহীদ মিনারের সামনের সড়কে মানববন্ধন এবং বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী জনসংযোগ কর্মসূচি পালন করবে তারা। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষায় শিক্ষার্থীদের একাংশের দুইটি দাবি মেনে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যখন সমাধানের পথে এগোচ্ছিল তখন কিছু শিক্ষক আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা শুরু করেছে। আর সেটি হল- বর্তমান উপাচার্য কে পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে তাদের কাউকে এই পদে বসানো। এক্ষেত্রে, উপাচার্য বিরোধী শিক্ষকদের সংগঠনের নেতা সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরিফ এনামুল কবীর ও বর্তমান উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আমির হোসেনকে ষড়যন্ত্রকারীদের মূল হোতা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
উল্লেখ্য, জাবিতে চলমান সাড়ে ১৪শ কোটি টাকার অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের বাজেট থেকে ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা দেয়ার অভিযোগ উঠে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারাজানা ইসলামের বিরুদ্ধে। গত ৯ আগস্ট ঈদুল আযহার পূর্বে ঈদ সেলামি হিসেবে হিসেবে এই টাকা দেয়া হয় বলে জানা যায়। পরবর্তীতে ২২ আগস্ট বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘উন্নয়ন প্রকল্পের দুই কোটি টাকা ছাত্রলীগের পকেটে’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হলে ঘটনার তদন্তের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ সংগঠনটি। কিন্তু অভিযোগের শুরু থেকেই এই ঘটনাকে মিথ্যা দাবি করে আসছিলেন উপাচার্য। পরে শাখা ছাত্রলীগের তিন শীর্ষ নেতা ঈদ সেলামি হিসেবে উপাচার্যের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা পেয়েছেন গণমাধ্যমের কাছে এমন স্বীকারোক্তি দিলে তদন্তের দাবি বাদ দিয়ে সরাসরি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ সংগঠনের আন্দোলনকারীরা।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার