'মানুষের কথা তো সবাই ভাবে, কিন্তু পশু-পাখির কথা কয়জন ভাবে। বাড়িতে এসে আমার গরুর বিনা মূল্যে চিকিৎসা ও অপারেশন করা হবে তা কল্পনা করিনি। আমার গরুর ঝংকা (আপওয়ার্ড প্যাটেলার ফিক্সেশন) রোগ হয়েছিল। এ ধরনের রোগের কারণে সাধারনত আমরা রোগাক্রান্ত গরুকে কম মূল্যে কসাইদের কাছে বিক্রি করে দেই। কিন্তু হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ‘ভ্রাম্যমাণ ভেটেরিনারি ক্লিনিক’ এর সাথে যোগাযোগ করি। বুধবার দুপুরে হাবিপ্রবি’র ‘ভ্রাম্যমাণ ভেটেরিনারি ক্লিনিক’ আমার বাড়ির সামনে যায়। গরুটির অপারেশন করে। এখন গরুটি সুস্থ রয়েছে। এ ধরণের সেবা সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া উচিৎ।'
কথাগুলো বলছিলেন আক্রান্ত গরুর মালিক দিনাজপুর সদরের রামডুবি ইউপির বীরগাঁও গ্রামের কৃষক আনিছুর রহমান।
হাবিপ্রবি’র ‘ভ্রাম্যমাণ ভেটেরিনারি ক্লিনিক’ ওই আক্রান্ত গরুর ঝংকা (আপওয়ার্ড প্যাটেলার ফিক্সেশন) রোগের অপারেশন করাসহ ৩টি গুরুর বিভিন্ন রোগের অপারেশন করে। কৃষক ও খামারিরা হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয় ও উপাচার্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ওই এলাকার কৃষকরা।
বীরগাঁও গ্রামের ফুলবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আক্রান্ত গরুর অপারেশন করেন হাবিপ্রবি”র রেজিস্ট্রার প্রফেসর ডা. মো. ফজলুল হকের নেতৃত্বে ভেটেরিনারি সার্জনদের একটি দক্ষ দল।
এদিকে, বাংলাদেশে প্রথমবারের মত দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) বুধবার সকাল ১১টায় ভ্রাম্যমাণ ভেটেরিনারি ক্লিনিক উদ্বোধন করেন ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি হাসপাতালের সামনে এই ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকের উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. বিধান চন্দ্র হালদার, রেজিস্ট্রার প্রফেসর ডা. মো. ফজলুল হক (বীর মুক্তিযোদ্ধা), এগ্রিকালচার অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. ভবেন্দ্র কুমার বিশ্বাস, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার পরিচালক প্রফেসর ড. মো. মোস্তাফিজার রহমান, জনসংযোগ ও প্রকাশনা শাখার পরিচালক প্রফেসর ড. শ্রীপতি সিকদার, ভেটেরিনারি অনুষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডীন প্রফেসর ড. তাহেরা ইয়াসমিন, হিসাব শাখার পরিচালক প্রফেসর ড. মো. শাহাদাৎ হোসেন খান, প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. খালেদ হোসেন, দিনাজপুর জেলার প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শাহিনুর আলমসহ অন্যরা।
বীরগাঁও গ্রামের ফুলবন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ভ্রাম্যমাণ ভেটেরিনারি ক্লিনিক আক্রান্ত গরুর অপারেশন কার্যক্রম করা হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম, রেজিস্ট্রার প্রফেসর ডা. মো. ফজলুল হক, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অশোক কুমার রায়, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকবৃন্দসহ স্থানীয় কৃষকসমাজ উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে এটি অন্যতম সেরা অবদান। ভ্রাম্যমাণ ভেটেরিনারি ক্লিনিক (বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্স) একটি নতুন ধারণা, মানুষ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা আছে, কিন্তু পশু পাখির জন্য এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই। সেই চিন্তা থেকেই এই ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখানে সার্জারির ব্যবস্থাসহ উন্নত সেবা প্রদানের সকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে। এটি কৃষকদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে অসুস্থ পশু পাখির চিকিৎসা সেবা প্রদান করবে।
তিনি আরও বলেন, ভ্রাম্যমাণ ভেটেরিনারি ক্লিনিকের দ্বারা এই অঞ্চলের কৃষক ও খারারিরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন বলে আশা করছি। এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃষিবান্ধব সরকারের উন্নয়ন ও ধারাবাহিক সহযোগিতার কারণে।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম