রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা ওই বিভাগের অধ্যাপক মু. আলী আসগর লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ডিন অফিসে একই বিভাগের অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে অধ্যাপক আসগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
এর আগে, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর বিভাগটিতে তিনজন প্রভাষক নিয়োগের জন্য বিভিন্ন যোগ্যতা নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তবে ওই বিজ্ঞপ্তিতে আর নিয়োগ হয়নি। পরবর্তীতে গত বছরের ৩০ জুলাই নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের প্রশাসন। বিভাগটির প্ল্যানিং কমিটিকে না জানিয়েই প্রভাষক পদে আবেদনের জন্য এগ্রিকালচারাল ক্যামেস্ট্রি নামে একটি বিষয় নতুন বিজ্ঞপ্তিতে যুক্ত করা হয়।
এ নিয়ে অধ্যাপক আলী আসগর রিট করলে গত বছরের ২১ আগস্ট নতুন বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নিয়োগ কেন অবৈধ হবে না তা জানতে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রিটের পর থেকেই অধ্যাপক আলী আসগরের সঙ্গে বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এরপর তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলতে শুরু করেন।
ভুক্তভোগী অধ্যাপক আলী আসগর অভিযোগ করে বলেন, দুপুরে প্রয়োজনীয় কিছু কাগজ ফটোকপি করার জন্য অনুষদের ডিন অফিসে যাই। অনুষদের কর্মচারী জয় কুমার আমার কাগজপত্রগুলো ফটোকপি করে দিচ্ছিলেন। এ সময় অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম সেখানে এসেই আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এতে আমি মেঝেতে পড়ে জ্ঞান হারাই।
তিনি আরও বলেন, অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম এর আগেও আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। তখন আমি থানায় নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেছিলাম।
কৃষি অনুষদের কর্মচারী জয় কুমার বলেন, আমি ফটোকপি করছিলাম। স্যার (অধ্যাপক আলী আসগর) তখন আমার পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ শব্দ পেয়ে পেছনে ফিরে দেখি স্যার মেঝেতে পড়ে আছেন। পাশে তখন খাইরুল ইসলাম স্যার দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু তিনি ধাক্কা দিয়েছেন কিনা তা দেখিনি।
ঘটনার সময় ওই কক্ষে উপস্থিত থাকা অনুষদের কম্পিউটার অপারেশন সুপারভাইজার সর্দার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, আমি কাজে ব্যস্ত ছিলাম। আমাদের প্রত্যেকের ডেস্কের চারপাশ বোর্ড দিয়ে ঘেরা। তাই কীভাবে আলী আসগর স্যার পড়ে গেলেন সেটা দেখতে পাইনি।
বিভাগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিষয়টি শুনেই আমি অ্যাম্বুলেন্সকে খবর দেই। ঘটনার প্রায় মিনিট পনেরো-বিশেক পরে অধ্যাপক আলী আসগরের জ্ঞান ফেরে। পরে তাকে চিকিৎসা কেন্দ্রে নেওয়া হয়।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের গোপনীয় কাগজপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব দপ্তরে পাঠানোর জন্য কর্মচারী মোতালেবকে দেওয়া হয়। অধ্যাপক আলী আসগর জোরপূর্বক মোতালেবের কাছ থেকে সেসব কাগজপত্র ফটোকপি করিয়ে নিচ্ছিলেন। তাই আমি সেখানে গিয়েছিলাম। আমাকে দেখে তিনি নিজে থেকেই পড়ে যান। মিডিয়া কাভারেজের জন্য তিনি অভিনয় করছেন। তবে পিয়ন মোতালেব জানায় তিনি তখন ঘটনাস্থলে ছিল না।
জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম জানিয়েছেন তিনি কিছু করেননি। এখন অধ্যাপক আলী আসগরের সঙ্গে কথা বলে এবং সরেজমিনে অনুষদে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন