অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও মতবিরোধসহ নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষকরা। শিক্ষকদের মাঝে এসব দ্বন্দ্ব নিয়ে হুমকি, পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন, হাতাহাতি, সাধারণ ডায়েরি এমনকি মামলা পর্যন্তও হয়েছে। শিক্ষকদের এমন অন্তর্দ্বন্দ্বে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত কয়েক মাসের ঘটনা পর্যালোচনা বলছে, হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে একটি, সহকর্মীকে অভিযুক্ত করে সাধারণ ডায়েরি হয়েছে তিনটি, হুমকি দেয়ার ঘটনা ঘটেছে তিনটি এবং হাতাহাতি হয়েছে একবার।
যার সূচনা হয় গত ২৭ই ফেব্রুয়ারি বিভাগের নাম পরিবর্তনের দাবিতে অনশনরত পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করায় অর্থনীতির বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ খানকে সহকারী প্রক্টর হুমায়ুন কবীরের উপস্থিতিতে হুমকি দেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তারেক নূর। এসময় তিনি পা ভেঙে দেয়ার হুমকি দেন এবং অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন।
এর আগে, গত ২৬ জানুয়ারি রবিবার ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোলাইমান চৌধুরী অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে। ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে দায়ের করা মামলার সিদ্ধান্তের আগেই শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ আখ্যা দিয়ে উপাচার্যের বাস ভাবনের সামনে প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থানের সময় হুমায়ুন কবীর তাকে দেখে নেবেন বলে হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
গত ২৩ জানুয়ারি উর্দু বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নাসিরুদ্দিনের বিরুদ্ধে একাডেমিক জালিয়াতি এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. রশিদুল আলম। এ ঘটনায় বিভাগেরই আরেক শিক্ষক ড. মুহাম্মাদ শহীদুল ইসলাম তাকে হুমকি দেন বলে অভিযোগ তুলে মতিহার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন ভুক্তভোগী শিক্ষক (জিডি নং ৯১১)।
অন্যদিকে, শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের মাঝে অর্ন্তকোন্দল লেগেই আছে ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগে। বিভাগের এক শিক্ষক তার অপর এক সহকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা এবং হুমকি দেয়ার অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এর মাঝে শিক্ষকদের মাঝে একবার হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে।
গত বছরের আগস্টে অধ্যাপক মু. আলী আসগর ২০১৯ মাসে ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। একই বছরের ৯ই নভেম্বর রিট আবেদন প্রত্যাহার না করলে অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম তার ক্ষতি করবেন বলে হুমকি দেন বলে অভিযোগে করেন অধ্যাপক ড. মু. আলী আসগর। এ প্রসঙ্গে মতিহার থানায় তিনি একটি সাধারণ ডায়েরি করেন (জিডি নং৩৮৮)।
গত ৩১শে ডিসেম্বর শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন বিভাগের শিক্ষকদের বিবাদমান দু’টি পক্ষ। দু’টি পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন। প্ল্যানিং কমিটির তিন সদস্য অধ্যাপক মু. আলী আসগর, নুরুল আলম এবং কাওছার আলী অভিযোগ করেন, প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের না জানিয়ে গোপনে দু’টি সভা ডাকেন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। সেখানে উপস্থিত না থাকলেও দুই সদস্যকে উপস্থিত দেখানো হয়। অপরদিকে অভিযোগের বিষয়ে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি সঠিক সময় চিঠি ইস্যু করেছি। তারা হয়তো বক্স খুলে দেখেননি, তাই চিঠি পাননি।
এরপর গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করার অভিযোগে অধ্যাপক খাইরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মতিহার থানায় মামলা করেন অধ্যাপক মু. আলী আসগর (মামলা নং ১৯/৬৮)।
একে অপরের প্রতি শিক্ষকদের এই মারমুখী অবস্থান নিয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, শিক্ষকদের মাঝে মতবিরোধ থাকাটা খারাপ কিছু নয় বরং মতামতের ভিন্নতা অনেক সময় উন্নত সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে সাম্প্রতিক এরকম ঘটনাগুলো একই সাথে দুঃখজনক এবং লজ্জাজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে আবশ্যিকভাবে কিছু উন্নত গুণাবলী বিশেষ করে সুবিবেচনাবোধ ও চিন্তাশীলতা উপস্থিতি থাকা উচিত। শিক্ষকদের পরমত সহিষ্ণুতার গুণটি লালন করা উচিত এবং আচার-আচরণে আরো সংযত হওয়া উচিত। শিক্ষকদের মাঝে হুমকি-ধামকি, আক্রমণাত্মক এসব আচরণের সংবাদ আমাদের পীড়া দেয়। এসব আচরণের মাধ্যমে তারা শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক