৮ মে, ২০২০ ২০:৩৭

রাবিতে বিভাগের সভাপতি নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

রাবি প্রতিনিধি:

রাবিতে বিভাগের সভাপতি নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্রপ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিস বিভাগের সভাপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতার নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম অনুযায়ী সভাপতি হওয়ার কথা ছিল অধ্যাপক ড. মু আলী আসগরের। কিন্তু অপেক্ষাকৃত জুনিয়র অধ্যাপক মো. আবুল কালাম আজাদকে বিভাগের সভাপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী অধ্যাপক অধ্যাপক ড. মু আলী আসগর দাবি করেন, গত বছর বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির ইস্যুতে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছিলাম। এরই প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ওই শিক্ষক নিয়োগ বাতিল করেন। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমার প্রতি ক্ষিপ্ত। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে বিভাগের সভাপতি নিয়োগ এরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই বিভাগের একটি অনিয়মের ঘটনায় অধ্যাপক ড. মু আলী আসগরের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এ কারণে বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রমের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় তাকে সভাপতি পদে নিয়োগ দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তিনি নিয়োগ পাবেন।

জানা গেছে, বিভাগটির বর্তমান সভাপতির মেয়াদ আজ শুক্রবার (৮ মে) শেষ হওয়ার কথা। তবে অধ্যাপক আজগরের অভিযোগ, গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ মে) তার চেয়ে জুনিয়র অধ্যাপক মো. আবুল কালাম আজাদকে নতুন সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যা উদ্দেশ্যমূলক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ এর ২৯ ধারার "দ্য ফার্স্ট স্ট্যাটুট অব দ্য ইউনিভার্সিটি" এর ৩ এর ১ ধারা তথা জ্যেষ্ঠতার নিয়ম লঙ্ঘন'' বলে ভুক্তভোগী দাবি করেন।

অধ্যাপক আজগরের দাবি, এর আগে বিভাগটিতে নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করার কারণে তাকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। যদিও ইতোমধ্যে ঐ পদের জন্য আবেদনও করেছেন তিনি।

বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের নভেম্বরে ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের তিনটি শূন্য পদের বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে প্ল্যানিং কমিটি প্রভাষক পদে প্ল্যান্ট প্যাথলজি, জেনেটিক্স অ্যান্ড প্ল্যান্ট ব্রিডিং ও এগ্রোনমি/এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন থেকে পাশকৃতরা আবেদন করতে পারবে বলে উল্লেখ করে। কিন্তু ওই বিজ্ঞপ্তিতে পরে আর শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। গত বছরের ৩০ জুলাই নতুন করে সে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু প্ল্যানিং কমিটিকে না জানিয়েই উল্লিখিত বিভাগগুলোর সঙ্গে 'এগ্রিকালচারাল কেমিস্ট্রি' বিভাগ যুক্ত করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

‘বিশ্ববিদ্যালয় আইন এর ১নং স্টাটিউট এর ৩নং ধারা অনু্যায়ী স্থায়ী পদে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সিন্ডিকেট নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন। কিন্তু প্ল্যানিং কমিটিকে না জানিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন 'এগ্রিকালচারাল কেমিস্ট্রি' বিভাগটি যুক্ত করেছে বলে অভিযোগ অধ্যাপক আজগরের।

সে নিয়োগ নিয়ে গত বছরের ১৮ আগস্ট নতুন নীতিমালায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী আসগরের হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। যার প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত প্রকাশিত নতুন বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নিয়োগের বিরুদ্ধে রুল জারি করেছিলেন। একইসঙ্গে নতুন বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নিয়োগ কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়েছিলেন। সবশেষ চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট ওই শিক্ষক নিয়োগ বাতিল করেন।

বিভাগের সভাপতি নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারী বলেন, অধ্যাপক আসগরসহ বিভাগের আরও দু'জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যেমূলকভাবে অকৃতকার্য করানোর অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগটি এখনো তদন্তাধীন থাকায় বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রমের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় উনাকে সভাপতি পদে নিয়োগ দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তিনি নিয়োগ পাবেন।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মু আলী আসগর বলেন,  গত বছর বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির ইস্যুতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলাম। ওই সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে রিট প্রত্যাহার করতে ফোর্স করা হয়। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড় থাকি এবং চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওই নিয়োগ হাইকোর্ট বাতিল ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, এ ঘটনার জেরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমার প্রতি ক্ষিপ্ত। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে বিভাগের সভাপতি নিয়োগ এরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র।

বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যেমূলকভাবে অকৃতকার্য করানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোন শিক্ষার্থী অভিযোগ না করা সত্ত্বেও আমার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রশাসন। তাছাড়া ওই ঘটনায় আমার কোন শাস্তি হয়নি। তাহলে কেন আমাকে সভাপতি পদে নিয়োগ দেওয়া হবে না? এটা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ এর লঙ্ঘন বলে দাবি অধ্যাপক ড. মু আলী আসগরের। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর